ইসলামী রাষ্ট্র – পর্ব ২৬ (মক্কা বিজয়)

কুরাইশদের সাথে আল্লাহর রাসূল (সা)-এর হুদাইবিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পরপরই খুযাআ’হ গোত্র মুহাম্মদ (সা)-এর নিরাপত্তায় চলে আসে এবং বনু বকর কুরাইশদের পক্ষ নেয়। এরপর থেকে আল্লাহর রাসুলের সাথে কুরাইশদের শান্তিপূর্ণ সম্পর্কই বজায় থাকে এবং উভয়পক্ষই আবার ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে। মুসলিমদের সাথে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য কুরাইশরা তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করে। এদিকে, আল্লাহর রাসূল (সা) সমগ্র মানবজাতির কাছে ইসলামের আহবান ছড়িয়ে দেবার পাশাপাশি আরব ভূ-খন্ডে ইসলামী রাষ্ট্রের অবস্থানকে সুসংহত ও শক্তিশালী করেন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দেন।

খায়বারে ইহুদীদের কর্তৃত্ব ধ্বংস করার পর তিনি (সা) বিভিন্ন রাজ্যের অধিপতিদের কাছে তাঁর দূত পাঠিয়ে বর্হিবিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন।  তিনি (সা) ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে বিস্তৃত করে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসেন যে, একপর্যায়ে সমস্ত আরব ভূ-খন্ডে ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে। এরপর, হুদাইবিয়া সন্ধির ঠিক একবছর পূর্ণ হলে তিনি (সা) সাহাবীদের কাযা উমরাহ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন, যে উমরাহ পালন করতে আগের বছর তাদের কুরাইশরা বাঁধা দিয়েছিল। এ উদ্দেশ্যে দুই সহস্র মুসলিম যাত্রা করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এ সময় তাদের সাথে শুধু কোষবদ্ধ তলোয়ার ছাড়া আর কোনকিছুই ছিল না।

কিন্তু, তারপরেও কুরাইশরা যে কোন সময় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে একথা মাথায় রেখে তিনি (সা) মুহাম্মদ ইবন মাসলামাহর নেতৃত্বে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত ১০০ অশ্বারোহীর একটি দলকে উমরাহ যাত্রীদের সামনে রাখেন। মক্কার পবিত্রতা নষ্ট করা কিংবা চুক্তিভঙ্গ করা কোনটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। এরপর, মুসলিমরা কোনরকম সংঘর্ষ বা দূর্ঘটনা ছাড়াই মক্কায় যায়, উমরাহ পালন করে নিরাপদে মদীনায় ফিরে আসে। রাসূল (সা) উমরাহ পালন করে মদীনায় ফিরে আসার পর মক্কার জনগণ ইসলাম গ্রহন করতে আরম্ভ করে। খালিদ ইবন আল-ওয়ালিদ, ’আমর ইবন আল-’আস এবং কাবার রক্ষক ’উসমান ইবন তালহা সহ মক্কার বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে। ফলে, দিনে দিনে মুসলিমরা শক্তিশালী হয়ে উঠে। আর, অন্যদিকে দূর্বলতা আর আতঙ্ক কুরাইশদের গ্রাস করে।

মু’তার যুদ্ধে মুসলিমরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় কুরাইশরা ধরেই নেয় যে, মুসলিমরা নিঃশেষ হয়ে গেছে। এজন্য, তারা তাদের মিত্রপক্ষ বনু বকরকে বনু খুযাআ গোত্রকে আক্রমণের ইন্ধন যোগাতে থাকে। এ লক্ষ্যে, তারা তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়েও সাহায্য করে। কুরাইশদের প্ররোচনায় বনু বকর খুযাআ গোত্রকে আক্রমণ করে তাদের কিছু ব্যক্তিকে হত্যা করে। আর, বাকীরা নিরাপত্তার আশায় পালিয়ে মদীনায় চলে আসে। খুযাআ’ গোত্রের ’আমর ইবন সালিম দ্রুত মুহাম্মদ (সা)-এর কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে এবং সাহায্যের আবেদন করে। মুহাম্মদ (সা) তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “তোমারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, হে ’আমর ইবন সালিম।”

এ পর্যায়ে, আল্লাহর রাসূল (সা) কুরাইশদের এ বিশ্বাসঘাতকতাকে উপেক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি (সা) এটাও ভাবেন যে, মক্কা বিজয় না করা পর্যন্ত এ সমস্যার কোন সমাধান করা সম্ভব না। এদিকে, চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশরা অত্যন্ত ভীত হয়ে যায়। তারা চুক্তিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে  চুক্তির সময় বৃদ্ধি করার জন্য আবু সুফিয়ানকে মদীনায় প্রেরণ করে। আবু সুফিয়ান সরাসরি মুহাম্মদ (সা)-এর কাছে না গিয়ে প্রথমে তার কন্যা ও রাসূল (সা)-এর স্ত্রী উম্ম হাবীবার কাছে যায়। গৃহে প্রবেশ করার পর, সে যখন রাসূল (সা)-এর বিছানায় বসতে যায় উম্ম হাবীবাহ্ দ্রুত বিছানা গুটিয়ে ফেলেন যেন আবু সুফিয়ান সেখানে বসতে না পারে। আবু সুফিয়ান তাকে জিজ্ঞেস করে যে, আমি কি এই বিছানার অযোগ্য, না কি এই বিছানাই আমার অযোগ্য? উত্তরে উম্ম হাবীবাহ্ বলেন, “এটা হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (সা)-এর বিছানা। আর তুমি হচ্ছো একজন ঘৃণিত মুশরিক। সুতরাং, আমি চাই না যে তুমি তাঁর বিছানায় বসো।”এ কথার উত্তরে আবু সুফিয়ান বলে, “আল্লাহর কসম! আমাকে ছেড়ে আসার পর তোমার অনেক অধঃপতন হয়েছে।”তারপর, উত্তেজিত হয়ে উম্ম হাবীবার গৃহ থেকে বেড়িয়ে যায়।

পরবর্তীতে, আবু সুফিয়ান কোনক্রমে রাসূল (সা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাঁকে চুক্তির সময় বৃদ্ধির আকুল আবেদন জানায়। কিন্তু, তার এ আবেদনে রাসূল (সা) কোন সাড়া না দিয়ে তাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন। এরপর, আবু সুফিয়ান আবু বকরের কাছে ছুটে যায় এবং তাঁকে রাসূল (সা)-এর কাছে এ বিষয়ে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করে। আবু বকর (রা) তাকে প্রত্যাখান করেন। এরপর, সে ’ওমর ইবন খাত্তাবের কাছে ছুটে যায়, কিন্তু, ’ওমর (রা) তাকে ধমক দিয়ে বলে, “তুমি কি আশা কর যে, আমি তোমার পক্ষ হয়ে আল্লাহর রাসুলের কাছে আবেদন করবো? আল্লাহর কসম, যদি আমার কাছে একটি মাত্র পিপড়াও থাকত তবে, তা দিয়েই আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করতাম।”শেষ পর্যন্ত, সে ’আলী ইবন আবি তালিবের সাথে সাক্ষাৎ করে। তিনি তখন ফাতিমা (রা)-এর সাথে ছিলেন। আবু সুফিয়ান ’আলী (রা)-কে তার পক্ষ হয়ে আল্লাহর রাসুলের কাছে আবেদন করতে অনুরোধ করলে ’আলী (রা) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) যখন কোন বিষয়ে মনস্থির করেন তখন সে বিষয়ে তাঁকে বিরত রাখার চেষ্টা করা অর্থহীন। এরপর, সে ফাতিমা (রা)-এর দিকে ঘুরে তাঁর সন্তান হাসান (রা)-কে তাদের নিরাপত্তা দেবার আবেদন করে। এর উত্তরে তিনি বলেন, “তোমাকে একমাত্র আল্লাহর রাসূল (সা) ছাড়া কেউ নিরাপত্তা দিতে পারবে না।”

এ পর্যায়ে আবু সুফিয়ান মরিয়া হয়ে দ্রুতগতিতে মক্কায় ফিরে যায় এবং কুরাইশদের অভিজ্ঞতার কথা খুলে বলে। ইতিমধ্যে, আল্লাহর রাসূল (সা) সাহাবীদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং তিনি (সা) তাঁর দলবল সহ মক্কার দিকে যাত্রা করেন। তিনি (সা) তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে আচমকা উপস্থিত হয়ে কুরাইশদের হতবিহবল করে দিতে চেয়েছিলেন, যেন অপ্রস্তুত অবস্থায় তারা বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং বিনা রক্তপাতেই মক্কা বিজয় করা যায়।

মক্কা বিজয় অভিযানে ১০,০০০ মুসলিম সৈন্য মদীনা থেকে যাত্রা করে। কুরাইশদের অজান্তেই তারা মক্কার মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী মার আল-দাহরান এলাকায় পৌঁছে যায়। কুরাইশরা ইতিমধ্যেই আঁচ করতে থাকে যে, মুসলিমরা তাদের যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে এবং তাদের নেতৃস্থানীয়রা এই আক্রমণ প্রতিহত করার ব্যাপারে গবেষনাও করতে থাকে। এ অবস্থায় কুরাইশদের অঘোষিত সর্দার আবু সুফিয়ানের নও মুসলিম আল-’আব্বাসের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। সে তার কাছ থেকে মক্কার উপর ঘনিয়ে আসা সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে অবহিত হয়। এ সময় তিনি রাসূল (সা)-এর সাদা রঙের খচ্চরের উপর আরোহন করছিলেন, যেন কুরাইশরা বুঝতে পারে যে, হয় তাদের রাসূল (সা)-এর কাছে নিরাপত্তা চাইতে হবে অথবা নিশ্চিত ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, মুসলিমদের এই সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীকে মুকাবিলা করার কোন উপায়ই তখন কুরাইশদের ছিল না। আল-’আব্বাস আবু সুফিয়ানকে বলেন, “দেখছো তো আল্লাহর রাসূল (সা) বিশাল বাহিনী নিয়ে উপস্থিত। তাদের যদি জোরপূর্বক মক্কায় প্রবেশ করতে হয়, তাহলে মনে হয় তোমাদের ধুলার সাথে মিশে যেতে হবে।”আবু সুফিয়ান ব্যাকুল হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, “এ অবস্থায় আমাকে কি করতে হবে তাই বল?” তিনি তখন তাকে তার খচ্চরের পিঠে আরোহন করতে বলেন এবং রাসূল (সা) এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর কাছে নিরাপত্তা কামনা করতে বলেন। মুসলিমদের ছাউনী অতিক্রম করার সময় তারা ওমর (রা) এর আগুনের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে। ’ওমর (রা) রাসূল (সা) এর খচ্চর এবং তাদের চিরশত্রু আবু সুফিয়ানকে চিনে ফেলেন।

পরিস্থিতি বুঝতে পেরে, আব্বাস (রা) আবু সুফিয়ানের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে উদ্যাত হলেন। কিন্তু, তার আগেই ক্ষিপ্রগতিতে ওমর (রা) আল্লাহর রাসুলের তাঁবুর দিকে ছুটে গেলেন। উদ্দেশ্য প্রাণের শত্রুর দেহ থেকে গর্দান নামিয়ে ফেলার অনুমতি প্রার্থনা করা। এ অবস্থায় তার খচ্চরকে দ্রুতবেগে চালিয়ে ওমরের আগেই পৌঁছে গেলেন রাসূল (সা)-এর তাঁবুতে। চিৎকার করে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে (আবু সুফিয়ান) আমার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিয়েছি।” এরপর, আব্বাস (রা) এবং ওমর (রা) মধ্যে এ বিষয়কে কেন্দ্র করে তুমুল বির্তক আরম্ভ হয়। আল্লাহর রাসূল (সা) আব্বাস (রা)-কে বলেন, “আপনি একে আপনার গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং আগামীকাল সকালে তাকে নিয়ে আসেন।” পরদিন, তাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে আসা হয় এবং সে ইসলাম গ্রহন করে।

এরপর, আব্বাস (রা) রাসূল (সা)-কে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান এমন একজন মানুষ, যে সবসময়ই মানুষের মাঝে সম্মানিত হতে ভালবাসে। আপনি কি এ ব্যাপারে কিছু করবেন?” একথা শোনার পর রাসূল (সা) ঘোষনা দিলেন, “যে আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। যে নিজ গৃহে দরজা বন্ধ করে অবস্থান করবে সে নিরাপদ। যে কাবাঘরে অবস্থান করবে সেও নিরাপদ।” এরপর, আল্লাহর রাসূল (সা) আবু সুফিয়ানকে চুঁড়ার একটি অংশে দাঁড় করিয়ে দিলেন যেন, মুসলিমদের বিশাল বাহিনী তাকে অতিক্রম করার সময় সে তা দেখতে পায়। এরপর, সে দ্রুতগতিতে মক্কায় ফিরে এসে চিৎকার করে ঘোষনা দেয়, “তোমরা শোন, আল্লাহর রাসূল, মুহাম্মদ তাঁর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, যাদের মুকাবিলা করার কোন সামর্থ্যই তোমাদের নেই। সুতরাং, যে আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। যে নিজগৃহে দরজা বন্ধ করে থাকবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আর, যে কাবাগৃহে অবস্থান করবে সেও নিরাপত্তা লাভ করবে।” এ ঘোষনা শোনার পর কুরাইশরা সমস্ত প্রতিরোধ উঠিয়ে নেয়। এরপর, আল্লাহর রাসূল (সা) সর্তকতার সাথে মক্কায় প্রবেশ করেন। তিনি (সা) তাঁর বিশাল সৈন্যবাহিনীকে চারটি ভাগ করেছিলেন এবং নিতান্ত বাধ্য না হলে কোনপ্রকার রক্তপাত করতে নিষেধ করেছিলেন। মুসলিম বাহিনী বিনা বাঁধায় বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করে। শুধুমাত্র, খালিদ ইবন আল-ওয়ালিদের বাহিনীকে কিছুটা প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, যেটা তিনি দ্রুত নিষ্পত্তি করেছিলেন।

এরপর, আল্লাহর রাসূল (সা) মক্কার উচ্চভূমি থেকে নেমে আসেন। তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে কাবাঘরের দিকে এগিয়ে যাবার আগে তিনি (সা) এ স্থানে কিছুক্ষন থেমেছিলেন। এরপর তিনি (সা) সাতবার কা’বা ঘর প্রদক্ষিন করে উসমান ইবন তালহাকে কা’বা ঘরের দরজা খোলার নির্দেশ দেন। এ সময় সমস্ত জনসাধারণ তাঁর পাশে সমবেত হয়। তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি (সা) পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলওয়াত করেন, যেখানে আল্লাহতায়ালা বলছেন,

হে মানবজাতি! আমরা তোমাদেরকে একজোড়া মানব-মানবী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর, তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পর পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই, আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই সবচাইতে বেশী সম্মানিত যার তাকওয়া সবচাইতে বেশী। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু সম্পর্কে অবহিত।” [সুরা আল-হুজুরাতঃ ১৩]

তারপর, তিনি (সা) কুরাইশদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “হে কুরাইশরা, তোমরা আজ আমার কাছ থেকে কি আচরন আশা করো?” উত্তরে তারা বলে, “ভালো, কারণ তুমি আমাদের মহৎ ভাই, আমাদের মহৎ ভাইয়ের সন্তান।” তিনি (সা) বললেন, “তোমরা এখন মুক্ত, তোমরা যে যেখানে চাও যেতে পার।” কা’বার ভেতরের দেয়ালে যত ফেরেশতা ও নবীদের ছবি অঙ্কিত ছিল, তিনি (সা) সে সবকিছু ছিঁড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তিনি (সা) কাঠের তৈরী একটি ঘুঘু পাখি কা’বার ভেতর আবিষ্কার করেন, যা তিনি (সা) নিজহাতে ভেঙ্গে ছুঁড়ে ফেলে দেন। সবশেষে, কা’বার ভেতরের অসংখ্য মূর্তিগুলোর দিকে তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে নির্দেশ করে তিনি (সা) পবিত্র কোরআনের নীচের আয়াতটি তিলওয়াত করেন, “এবং বলঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। নিশ্চয়ই, মিথ্যাকে তো নিশ্চিহ্ন হতেই হবে।”[সুরা আল-ইসরাঃ ৮১]

এরপর, কা’বা ঘরের অভ্যন্তরের মূর্তিগুলো একে একে মাটিতে পরে গেল, তারপর সেগুলোকে ভেঙ্গে, পুড়িয়ে কা’বার প্রাঙ্গন থেকে সরিয়ে ফেলা হল। আর, এভাবেই শেষপর্যন্ত, পবিত্র কাবাঘর মুশরিকদের অপবিত্রতা থেকে মুক্তি পেল।

এরপর, আল্লাহর রাসূল (সা) পনের দিন মক্কায় অবস্থান করলেন। এর মধ্যে, মক্কার শাসন কার্যাবলী বিন্যস্ত করেন এবং জনসাধারনকে ইসলাম শিক্ষা দেন।

এভাবে, মক্কা পুরোপুরি পৌত্তলিকদের কবল থেকে মুক্ত হয় এবং শেষপর্যন্ত ইসলামী দাওয়াতের পথে অন্যতম বস্তুগত বাঁধা অপসারিত হয়। এরপরেও আরব উপদ্বীপে কিছু কিছু ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ বলয় থেকে যায় যেমনঃ হুনায়ুন, তা’য়িফ ইত্যাদি। এ শহরগুলো জয় করে নেয়ার পরই মূলত সমগ্র আরব ভূ-খন্ডে মুসলিমদের চূড়ান্ত বিজয় অজির্ত হয়। আর, প্রকৃতপক্ষে, মক্কা বিজয়ের পর এ ক্ষুদ্র প্রতিরোধ বলয়গুলোকে ভেঙ্গে দেয়া মুসলিমদের জন্য বিশেষ কঠিন কাজও ছিল না।

Leave a Reply