ব্যর্থ গণতন্ত্রের সমাধান কি “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” ?

আওয়ামী লীগের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠিয়ে নেয়া পরবর্তী তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হবে কি হবে কিনা? কিংবা বিদ্যমান সংশোধিত সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নাকি নতুন কোন নির্বাচনী রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে তা নিয়ে সকল জল্পনা কল্পনা আবর্তিত হচ্ছে।

এই রূপ একটি রাজনৈতিক সংকট ছিয়ানব্বই সালে জাতি প্রত্যক্ষ করে। মূলত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অবিশ্বাস থেকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বি.এন.পি কে বাধ্য করা হয় “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা” সংবিধানে সংযোজন করতে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে তৎকালীন এই আন্দোলন সংগঠিত হয় বি.এন.পি বিরুদ্ধে, যা এখন বি.এন.পি নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোটের বিরুদ্ধে চলমান।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশ পরবর্তী দ্বিজাতি তত্ত্বের বাতাবরণে উপমহাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত ও পাকিস্তানের উত্থান ঘটে। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্থানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ ও পরবর্তীতে আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জনগণের আকাংক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। বৃটিশ উত্তরাধিকার প্রাপ্ত ঔপনিবেশিক রাজনীতি তৎকালীন পাকিস্তানের ক্ষমতাকেন্দ্রের প্রতিভূ হয়ে উঠে যা কথিত স্বাধীন বাংলাদেশের ও নিয়ন্ত্রক। স্বাধীনতা পরবর্তী চারদশকের ও বেশী সময় ধরে সাম্য, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতার সস্তা শ্লোগানের আড়ালে নয়া ঔপনিবেশিক রাজনীতিকে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। এই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, রাজনীতি ও ভূকৌশলগত সম্পদের উপর সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন, বৃটিশ ও আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মার্কিন ভারত বৃটেন নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক মঞ্চে বহিঃশক্তির স্বার্থ রক্ষক দালাল স্বরুপ আবির্ভাব ঘটে মুজিব -জিয়া-এরশাদ গংদের।

হাসিনা -খালেদা নিয়ন্ত্রিত দ্বি-জোটীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সেই স্বার্থকেই প্রতিনিধিত্ব করে যা আরো বেশি লুন্ঠন, দূর্নীতির বিস্তার ঘটায় এবং দেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। গণতান্ত্রিক দলগুলোর ক্ষমতা দখল ও লুন্ঠনের লড়াইয়ে যে পারস্পরিক অবিশ্বাস সে অবিশ্বাসের গহ্বরে ততত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্ম। কাজেই তথাকথিত তত্তাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কী লুন্ঠন, দূর্নীতি, জ্বালাও পোড়ানোর রাজনীতি থেকে জনগণকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হবে? নাকি মার্কিন -ভারত-বৃটেনের স্বারথে গণবিরোধী, দূর্নীতিগ্রস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে পুনর্বাসিত করবে?

বস্তুতঃ দলীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যর্থ গণতান্ত্রিক শাসনকে টিকিয়ে রাখার ছলনা বৈ আর কিছুই নয় যা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে দ্বীন কে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে। ইসলামি আকীদার সাথে যা সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক। এই দেশের মুসলিমদের অবশ্যই কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুর আড়ালে দূর্নীতিগ্রস্থ ও নিপীড়নমূলক কুফর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র ও তাদের এদেশীয় দালালদের প্রতিহত করতে হবে। সেই সাথে ইসলামি আকীদা ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে জোরালো করতে হবে।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,


“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র অনুগ্রহকে কুফরীতে পরিণত করেছে এবং তাদের জনগণকে তারা ধবংসের আবাসস্থল উপহার দিয়েছে। তারাই জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে, আর তা অতি নিকৃষ্ট আবাসস্থল।” [সূরা ইবরাহিম :২৮-২৯]

আবু হাজিমের বরাত দিয়ে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন,”আমি আবু হুরায়রার সাথে পাঁচ অতিবাহিত করেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি, রাসূল (সা) বলেছেন,


“বনী ইসরাঈলকে শাসন করতেন নবীগণ। যখন এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তার স্থলে অন্য নবী আসতেন, কিন্তু আমার পর আর কোনও নবী নেই। শীঘ্রই খলীফাগণ আসবেন এবং তারা সংখ্যায় অনেক। তাঁরা (রা) জিজ্ঞেস করলেন তখন আপনি আমাদের কী করতে আদেশ করেন? তিনি (সা) বললেন, তোমরা একজনের পর একজনের বাই’আত পূর্ণ করবে, তাদের হক আদায় করবে। অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন।”

মোর্শেদ আলম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আপনার ধান্দা কী?

Leave a Reply