বদরের যুদ্ধের পূর্ব হতেই ইহুদীরা মুসলিমদের প্রতি সবসময়ই তীব্র হিংসা-বিদ্বেষ পোষন করতো। বদরের প্রান্তরে মুসলিমদের নাটকীয় বিজয়ের পর তাদের বিদ্বেষের মাত্রা চরম আকার ধারণ করলো। মুসলিমদের সাথে কৃত চুক্তির কোন তোয়াক্কা না করেই তারা মুসলিমদের অপদস্ত করার জন্য নিত্যনতুন ষড়যন্ত্র ও হীন পরিকল্পনা করতে থাকলো। মুসলিমরা তাদের বিরুদ্ধে এ সব ষড়যন্ত্রকে দৃঢ়তার সাথে প্ির তহত করেছিলো এবং অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় এর জবাব দিয়েছিলো। বনু কুরাইযার বাজারে সংঘটিত জঘন্য ঘটনাটিই প্রমাণ করে দেয় যে, মদীনার ইহুদীরা মুসলিমদের উক্তত্য করার জন্য কত হীন পন্থা অবলম্বন করতো।
বনু কুরাইযার বাজারে একবার এক মুসলিম নারী সোনার দোকানে তার গয়না নিয়ে বসেছিলো। এ সময় পেছন থেকে এক ইহুদী এসে তার কাপড়ের এক প্রান্ত খুিঁটর সাথে বেঁধে দেয়। মুসলিম নারীটি যখন উঠে দাঁড়ায় তখন তার কাপড় শরীর থেকে খুলে যায়। মুসলিম নারীকে এরকম একটি অপ্রস্তত অবস্থায় ফেলে উক্ত ইহুদী সহ আশেপাশের ইহুদীরা নির্লজ্জের মতো হাসিতে ফেটে পড়ে। এ অবস্থায় অপমানিত নারীটি সাহায্যের আশায় চিৎকার করতে থাকে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে এক মুসলিম সেই বদমাশ ইহুদীকে হত্যা করে ফেলে। এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসাবে ইহুদীরা একত্রিত হয়ে উক্ত মুসলিমকে হত্যা করে। পরবর্তীতে, শহীদ হয়ে যাওয়া সে মুসলিমের পরিবার মদীনার মুসলিমদের ব্যাপারটি অবহিত করে তাদের শাস্তির দাবী করে। পরিণতিতে মুসলিম ও ইহুদীদের মধ্যে যুদ্ধ হয়।
আল্লাহর রাসূল (সা) বহুবার তাদের এ ধরনের জঘণ্য প্ররোচনামূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন। কিন্তু, তারা সে আদেশ- নিষেধের কোন তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যেই আল্লাহর রাসুলের বিরোধিতা ও তাঁর আদেশ অমান্য করতে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে, রাসূল (সা) বনু কুরাইযাকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং চারদিক থেকে তাদের আবাসস্থল ঘিরে ফেলেন। মুসলিমদের সাথে পরামর্শ করে তিনি এ গোত্রের সকলকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। মূলতঃ এটা ছিলো তাদের মুসলিমদের সাথে ক্রমাগত বিশ্বাসঘাতকতা করার উপযুক্ত শাস্তি। এ পর্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবন সলুল, যার ইহুদী ও মুসলিম দু’পক্ষের সাথেই সুসম্পর্ক ছিলো, বারবার ইহুদীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার জন্য রাসূল (সা) অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু, মুহাম্মদ (সা) তার এ কাতর আবেদনে কোন সাড়া না দিয়ে তাকে উপেক্ষা করেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও, ’আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সলুল ইহুদীদের প্রাণরক্ষার জন্য ক্ষমা ভিক্ষার আবেদন করতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত, তার আবেদনে সাড়া দিয়ে রাসূল (সা) বনু কুরাইযাকে মদীনা ত্যাগ করে চলে যাবার নির্দেশ দেন। এরপর, বনু কুরাইযা গোত্র মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে উত্তরে আদরাত আল-শামের দিকে চলে যায়।