সারা বিশ্বের নজর এখন সিরিয়ার দিকে। দেশি-বিদেশী সমস্ত মিডিয়াতে এই মুহুর্তে আলোচনার বিষয় একটাই আর তা হল কবে আমেরিকা সিরিয়াতে আক্রমন করতে যাচ্ছে। পছন্দের এজেন্টদের ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত করতে লিবিয়াতে যখন ১ মাসের মধ্যেই পশ্চিমারা সামরিক হামলা চালিয়েছে, তখন ২ বছরেরও অধিক সময় ধরে চলা সিরিয় সংঘাতে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু এবং তার চাইতে বহুগুন বেশি সংখ্যকের উদ্ধাস্তু হিসেবে প্রতিবেশি দেশসমূহে আশ্রয়গ্রহণ স্বত্ত্বেও পশ্চিমাদের নীরবতা লক্ষ্যনীয়। তাহলে কেন হঠাৎ আমেরিকা সিরিয়া আক্রমনের তোড়জোড় শুরু করল? কেনই বা এতদিন পশ্চিমারা নীরব ছিল? সম্ভাব্য এই আক্রমনের লক্ষ্য ও পরিনতিই বা কী হতে পারে?
আমেরিকার মদদে ১৯৭০ সালে বাশার আল-আসাদের পিতা হাফিয কর্তৃক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়েই মূলত ২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সিরিয়াতে মার্কিন প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে গত চার দশকেরও অধিক সময় ধরে আসাদ পরিবার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে আসছে। যার মধ্যে ইসরাঈল রাষ্ট্রকে সুরক্ষা প্রদান এবং ইসলামপন্থী দমন প্রধানতম। কিন্তু তিউনিশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়া গণআন্দোলনের ঢেউ সিরিয়াতেও বাশারের ভরকেন্দ্রে ধাক্কা দেয় এবং বাশার তা সামরিক কায়দায় নির্মমভাবে দমনের পথ বেছে নিলে সশস্ত্র সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। সমগ্র আরব জাহান জুড়েই জনগণের আবেগ ইসলামের পক্ষে হলেও, পশ্চিমারা এই প্রথম স্তম্ভিত ও ভীত হয়ে উঠে সিরিয়ান জনগণকে পশ্চিমা সাহায্য ও গণতন্ত্রের ফর্মূলা প্রত্যাখ্যান করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনমনীয় আত্মত্যাগ করতে দেখে ফলে অনেক চেষ্টা করেও আমেরিকা ও তার পশ্চিমা সহযোগীরা বাশারের বিকল্প কোনো গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব সিরিয় জনগণের সামনে উপস্থাপনে বরাবরই ব্যর্থ হয়ে আসছে। ফলে মুখে হাঁকডাক দিলেও তারা বাশারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর অবস্থান নেয়নি, উপরন্তু বিদ্রোহী যোদ্ধারা আদর্শগতভাবে খিলাফতপন্থী হওয়ায় তাদেরকে সাহায্য করা থেকে বিরত থেকেছে, বরং বাশারকে রাসায়নিক অস্ত্রপ্রয়োগসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যা চালিয়ে যেতে দিয়েছে, যাতে সব পক্ষই শেষাবধি পশ্চিমা আপোষ ফর্মূলা মেনে নিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু এদতসত্ত্বেও ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইতিমধ্যেই সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল নিজেদের তত্ত্ববধানে নিয়ে আসতে পেরেছে এবং দামেস্ক বিজয়ের মাধ্যমে বাশারের পতন ও খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা উজ্জলতর হতে শুরু করেছে। একদিকে ইরাক-আফগানিস্তানে শোচনীয় পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা পশ্চিমারা নতুন আরেকটি ফ্রন্টে মুসলিমদের মোকাবেলা করার ব্যপারে দ্বিধাগ্রস্থ যা বৃটেনের পার্লামেন্টে ভোটসংখ্যা থেকে প্রতীয়মান, অন্যদিকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তথা খিলাফতের পুনরুত্থান ঠেকানো ব্যাপারে ঐক্যমত্য আমেরিকা ও ফ্রান্স নিজস্ব দান্দ্বিক কুটনৈতিক স্বার্থসত্ত্বেও মালি ও সিরিয়াতে পরস্পরকে সমর্থন করছে। আর রাশিয়া ও চীন মূলতঃ আসাদ পরবর্তী সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রভাব খর্ব করে নিজেদের অবস্থান জোরালো করতেই আমেরিকার সাথে দরকষাকষি করছে, তাতার্স নৌ-ঘাঁটি থেকে সকল রুশ অফিসারদের সরিয়ে নেয়া এর সুস্পষ্ট দলীল।
তাই আসাদ পরবর্তীতে যাতে ইসলামপন্থীরা এককভাবে ক্ষমতার অংশীদার হতে না পারে, সেজন্য যতটা আগ্রাসী হওয়া প্রয়োজন আমেরিকা প্রয়োজনে একাই তা হবে, যদিও তার ক্ষয়িষ্ণু শক্তি ও বিরোধী ব্যাপক বিশ্বজনমত তাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাচ্ছে, যায়েদ বিন ছাবিত (রা) এর বর্ণনায় ইমাম আহমাদ ও তিরমিযি সূত্রে উল্লেখিত রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমি দেখেছি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-র ফেরেশতারা আল-শাম (বৃহত্তর সিরিয়া)-এর উপর তাদের পাখাসমূহ বিছিয়ে দিয়েছেন”। তাই আজ আমাদের উচিত সিরিয়ার পবিত্র ভূমিতে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান সংগ্রামকে সমর্থন করা এবং এর বিপক্ষে আমেরিকা ও পশ্চিমা কাফেরদের সমস্ত ষড়যন্ত্রকে জনগণের সামনে উন্মোচিত করা, যাতে তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয় এবং জমীনে ইসলাম বাস্তবায়ন শুরু হয়।
আবু আয-যাহরা