بسم الله الرحمن الرحيم
দীর্ঘ সময় যাবৎ বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশের অবস্থান। কিছুতেই যেন কাটছে না এই অস্থিতিশীলতা। একের পর এক ট্র্যাজেডি, দুর্ঘটনার নামের আড়ালে হত্যাকান্ড, খুন, গুম, ধর্ষণ ছাপিয়ে আসে নিত্যনতুন ইস্যু। বাংলাদেশ যেন আজ ইস্যুবহুল রাষ্ট্রের আঁধারে ডুবে থাকা একটি ভূমি।
প্রতি নির্বাচনের পূর্বেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যায়, এই বিষয়টি আমাদের কমবেশি জানা। কারণ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেই এই উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদীরা বহু আগে থেকেই তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে আসছে; এ নতুন কিছু নয়।
তবে এইবারে বাংলাদেশের অবস্থা যেন একটু ভিন্ন। প্রতিবার আমরা রাজনৈতিক সংঘাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের কারসাজি দেখতে পাই, যা কিনা এক কথায় নির্বাচন পূর্ববর্তী মঞ্চ নাটক হিসেবেই সংজ্ঞায়িত। কিন্তু, এইবার যেন আগের মত অবস্থা নেই। এটা সত্য সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলে গেছে; মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করে সবকিছুই আজ পূর্বের সাথে তুলনা করে চলেনা।
তবুও, পূর্বের মত যদি নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতির সাথে এবারের তুলনা করি, তবে দেখব ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল তাদের নির্বাচন প্রচারনা বর্তমান সরকারের ৩ বছর পূর্তির পর থেকেই শুরু করেছিল। আমরা জানি এবং এই ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে ধারণা রাখি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে লুটপাটের মূল সময়কাল হল ক্ষমতায় আরোহণের পর প্রথম ৩ বছর; ৪র্থ বছর তথাকথিত সাফল্যসমূহ তুলে ধরার চেষ্টা এবং বিরোধী দলের সাথে খুনসুটির সময়কাল বলা যায়; যদিও এই খুনসুটি প্রথম ৩ বছরে কোন অংশেই কম থাকেনা। আর ৪র্থ বছরের এই প্রচেষ্টায় হল নির্বাচনী প্রচারনার সূত্রপাত।
প্রতি সরকারের আমলেই, এই সময় বিরোধী দল সরকারের দূর্নীতিগুলো তুলে ধরে জনগণের সাথে power achievement-এর খেলা খেলে আর সরকারী দল্কে ফাঁদে ফেলার পাঁয়তারা করতে থাকে। আর একইভাবে সরকারী দল চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে। এগুলো যেন অনেকটা ইঁদুর-বিড়ালের খেলা।
কিন্তু, বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক বা স্বাধীন রাষ্ট্র নয় (যদিও দাবী করা হয়)। একটি পাঁচ মিশালী একটি উজবুকের ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত, যার কিছু পশ্চিমাদের থেকে ধার করে নেওয়া আর কিছু সমাজতন্ত্র থেকে। আবার প্রয়োজনের তাগিদে ইসলাম থেকেও কিছু নেওয়া আছে। আবার, এই রাষ্ট্রটি মূলত পরিচালিত হয় আমেরিকা-বৃটেন সমর্থিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী দ্বারা; যারা বাংলাদেশে আওয়ামী-বি.এন.পি নামেই পরিচিত। এই দুই দল ছাড়াও বাংলাদেশে মার্কিন-ভারতের দালালের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।
আর এই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশে সরকার নির্বাচিত হয় মার্কিন-ভারতের ইশারায়। অর্থ্যাৎ, যে/যারা এই দুই সত্ত্বাকে সন্তুষ্ট করবে, মূলত সে/তারাই নির্বাচনে বিজয়ের সবুজ বাতি দেখতে পায়। আর এই স্তরে মার্কিন-ভারতেরও আভ্যন্তরীন বেশ কিছু বিষয়ে (চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে নিরাপত্তা) চুক্তি রয়েছে বিধায় বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের ঐক্যমতে পৌঁছানো অস্বাভাবিক হবেনা। এবং এই বিষয়টি তাদের বক্তব্যসমূহেও স্পষ্ট ছিল। এবং এই স্বার্থগত চুক্তি বজায় রেখেই বাংলাদেশে তারা তাদের নব নব দালাল নির্বাচন করে থাকে।
আগেরবারের ধারাবাহিকতার দিকে যদি তাকাই, তবে দেখতে পাব, প্রতিবারই হাসিনা/খালেদা যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, আমেরিকর সাথে চুক্তি করেই এসেছে। অর্থ্যাৎ, আমেরিকার স্বার্থ যে যত বেশী পালনে সচেষ্ট থাকবে, তার নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভাবনা অধিক। আর সেই নিয়মানুসারে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে শাসক পরিবর্তনের ধারা বজায় রয়েছে এবং চলে আসছে নির্বিঘ্নে।
শাসক পরিবর্তনের এই নীতিটা জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়েছে বছরের পর বছরের চালু রাখার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে ৫ বছর ধরে দুঃশাসনের প্রেক্ষিতে জনগণের মাঝে সরকার এবং শাসনব্যবস্থার প্রতি যে ক্ষোভ জন্মে, তা দমিয়ে রাখা হয় পুরনো মুখ নতুন আদলে নিয়ে আসার মাধ্যমে। আবার, কিছু সময় প্রয়োজনের তাগিদে নতুন মুখ নিয়ে আসাও তাদের জন্য জরুরী হয়ে যায়, এবং তারা তাই করে।
এই balancing power by changing face নীতির মাধ্যমে তারা বিগত ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে প্রতারণা করে যাচ্ছে। আর জনগণও প্রতারিত হয়ে আসছে লাগাতারভাবে। সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ ছিল এইরকমই সমঝোতামূলক election এর রূপে selection। আর ক্ষমতায় আসীনের পর থেকেই মোটামুটি সে আমেরিকা-ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লাগে, যা শুরু হয় পিলখানা হত্যাকান্ড দ্বারা। ক্ষমতায় আরোহণের মাত্র ১০০ দিনের মধ্যেই সে হত্যা করে নিষ্ঠাবান সেনা অফিসারদের; এক ঘৃণ্য চক্রান্ত রচনা করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ধংসে।
সেনাবাহিনী ধ্বংসের এই চক্রান্ত কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা গোত্রের নয়, বরং এটা আমেরিকা-ভারতের এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে common স্বার্থ। বাংলাদেশে প্রভাব নেওার ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান বাঁধা হল মুসলিম সেনাবাহিনী; যেই কারণে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের হত্যা করে দূর্বল করে এতে আমেরিকান দালাল তৈরির প্রক্রিয়া চালু করেছে আওয়ামী সরকার। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকায়, এই সেনাবাহিনীই বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের ভারতের চক্রান্তসমূহ নস্যাৎ করেছে। সেনাবাহিনীর এই অফিসাররাই বাংলাদেশে আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়নে মূল অন্তরায়।
আর সেই প্রেক্ষিতেই পিলখানা হত্যাকান্ড এবং সূত্রপাত দালাল তৈরির প্রক্রিয়ার। শুরু হয় একের পর এক মহড়া যৌথ মহড়া আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাথে। এবং সমগ্র বিশ্বজুড়ে মুসলিম হত্যাকারী ক্রুসেডার বাহিনী এক প্রকার free access পেয়ে যায় সেনাবাহিনীর উপর। আর মোটামুটি এরপর থেকেই একের পর এক এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু। সেনাবাহিনীর উপর প্রভাব বিস্তারে আমেরিকার সাথে টাইগার শার্ক (সামরিক মহড়া), প্রথমবারের মত ভারতের বি.এস.এফের সাথে বি.জি.বির মহড়া, নৌবাহিনীর সাথে আমেরিকান সেনাবাহিনীর মহড়া, আমেরিকান সেনাবাহিনীর মাসব্যাপী কর্মসূচি (সিলেট), টিপাইমুখ মরণবাঁধ, ট্রানজিট চুক্তি এবং টিকফা।
এছাড়াও সম্পূর্ণ ক্ষমতাকালে মোটামুটি দেশের বিভিন্ন খাতই আমেরিকা-ভারতের হাতেই তুলে দিয়েছে। দেশের খনিজ সম্পদসমূহ তুলে দিয়েছে মার্কিন মুল্লুকের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। আবার তাদের কাছ থেকেই চড়া দামে দেশের জনগণকে কিনে নিতে হচ্ছে এগুলো। দেশের পাটশিল্প থেকে শুরু করে, চিনিশিল্প, গবাদিপশু প্রকল্প, কৃষিক্ষেত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ভারতের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণে। তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে, বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধংসে ঘটানো হয়েছে একের পর এক হত্যাকান্ড। আর এই সকল হত্যাকান্ড নামকরণ হয়েছে ট্র্যজেডি হিসেবে।
এই মুহুর্তে বাংলাদেশ আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১০ সালের পহেলা এপ্রিল প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বিষয়টি উঠে আসে সুস্পষ্টভাবে। ‘Bangladesh : Political and Strategic Developments and US Interests’ রিপোর্টে বলা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। একদিক দিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গীবাদবিরোধী ভূমিকা সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সম্পর্কোন্নতিরও প্রশংসা করা হয়েছে রিপোর্টে।
এটা ঠিক ঐ সময়টা, যখন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাই গণতান্ত্রিক দুঃশাসন দ্বারা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন।
কিন্তু এসব কিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বক্তব্যটি এই রিপোর্টে লেখা হয়েছে তা হচ্ছে-
‘Bangladesh is situated at the northern extreme of the Bay of Bengal and could potentially be a state of increasing interest in the evolving strategic dynamics between India and China. This importance could be accentuated by the development of Bangladesh’s energy reserves and by regional energy and trade routes to China and India’ (‘বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের একেবারে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। তাই এখন ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত কারণে যে ধরনের গতিশীল সম্পর্কের সূচনা হয়েছে তাতে করে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আমেরিকান স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের জ্বালানি মজুদ বৃদ্ধি পেলে আঞ্চলিক জ্বালানি-ভান্ডার এবং চীন-ভারতের মধ্যেকার বাণিজ্যপথের জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বাড়বে।’)
ক্ষমতার দীর্ঘ এই পরিক্রমায় মার্কিন-ভারতের অন্যতম common ইস্যু ছিল ইসলামের উত্থান এবং এর জন্য আন্দোলনকারীদের ঠেকানো। এই অঞ্চলে ইসলামের উত্থান মার্কিন-ভারতীয় দাদাদের মাথাব্যথার মূল কারণ। কারণ, ইসলামই এই অঞ্চল থেকে তাদের স্বার্থ হাসিলে প্রধান অন্তরায়।
আরব জাগরণের পর থেকে আমেরিকা এই অঞ্চলের দিকে পূর্বের তুলনায় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে আরবের অনেক ভূমি থেকে সে বিতাড়িত। আর যেগুলোতে মোটামুটি অবস্থান নিয়ে টিকে আছে বা নতুন দালাল বসাতে সক্ষম হয়েছে, সেগুলোর স্থানও আজ নড়বড়ে। অর্থ্যাৎ, যেকোন সময় তার বসানো দালালের গদি উলটে যেতে পারে।
এই তাগাদাতে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তার নজর আসে, যদিও এই অঞ্চলের ব্যাপারে তার চক্রান্ত বাস্তবায়ন হয়ে আসছিল। কিন্তু, এই সময়ের পরই আমেরিকা এই অঞ্চলকে ঘিরে তার চক্রান্তের ব্যাপারে তাড়াহুড়া শুরু করে।
ইতিমধ্যে হাসিনার ক্ষমতার ৪ বছরও পার হয়ে যায়। ৪ বছর পার হয়ে যাওয়ার মানেই হল সামনের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। আর এই সময়ে সে প্রস্তুতি হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচার উঠিয়ে আনে, যে বিচারের ধোঁয়া সে উড়িয়েছিল নির্বাচনের আগে। এর উদ্দেশ্য ছিল না বিচার সম্পাদন, বরং এর প্রক্রিয়া বলবৎ রেখে পরবর্তী নির্বাচনেও ইস্যু হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচারকেই আনা। আর ঠিক তখন থেকেই দেশের পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় অধিক ঘোলাটে হতে থাকে।
এই সময়টায় সবচেয়ে সূক্ষ চাল চালে আমেরিকা, যেখানে আওয়ামী থেকে শুরু বড় বড় রাঘব বোয়ালরাও ধরাশায়ী হয়। আমেরিকা এই ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট কোন অবস্থান নেয়নি, যেকারণে শেখ হাসিনা তার পরিবারগত (বি.এন.পি) সমস্যা সমাধানে আমেরিকাকে বাঁধা ভাবেনি, আবার জামায়াতও এই স্থানে তাদের পক্ষে আমেরিকার মৌন সমর্থন ধারণা করছিল। আমেরিকা একদিকে বলছিল, যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া উচিত, আবার অন্যদিকে এটাও বলছিল যে, এই ইস্যুতে কেউ যেন বাড়াবাড়ি করতে না পারে। ফলশ্রতিতে, আমেরিকার সাথে হাসিনা সরকারের সখ্যতা অটুট থাকে, পাশাপাশি ইসলামের ফ্লেভারে গণতন্ত্র বজায় রাখতে জামায়াতকেও সাথে পায়।
কিন্তু এই স্থানে মূল বাঁধা সৃষ্টি করে আওামীলীগের বংশগত প্রভু বৃটেন। আওয়ামী লীগকে বাগে রেখে আমেরিকা যখন তার একের পর এক স্বার্থ আদায় করে যাচ্ছে, বৃটেন তখনই আওয়ামী লীগকে তার পরম্পরা স্মরণ করিয়ে দিতে শুরু করে। এবং কঠোরভাবে সমালোচনা শুরু করে আওয়ামী শাসনের। আর তখন আওয়ামী সরকারও প্রভুর কঠোর বাক্যে জর্জরিত হয়ে তার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসার দিকে মনোনিবেশ করে।
অন্যদিকে আমেরিকা ভারতের সাথে বি.এন.পির সখ্যতা গড়ে তোলার ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে এবং খালেদা জিয়া ভারতও সফর করে আসে। আমাদের মনে আছে, ভারত সফরে খালেদা অতীতের কথা ভুলে গিয়ে নতুন শুরু ব্যাপারে ভারতকে আশ্বস্ত করে। আর ঠিক এরপর থেকেই বি.এন.পির ভারতের প্রেক্ষিতে তথাকথিত অবস্থান শিথিল দেখাতে শুরু করে; যা ছিল সম্পূর্ণরূপে আমেরিকারই ইশারা।
তবে, এরপরও ভারত এখন পর্যন্ত বি.এন.পির উপর সম্পূর্ণ আস্থা স্থাপনে উদগ্রীব নয়। কারণ, বি.এন.পি টিকে আছে জাতীয়তাবাদী মডারেট ইসলামী দলগুলোকে কেন্দ্র করে। তার নিজস্ব কোন ভিত্তি নেই। জনগণের পক্ষ থেকে যেটুকু ভোট সে পাচ্ছে বলে দেখানো হয়, তার অধিকাংশই জামায়াত বা অন্যন্য ইসলামী দলগুলোর সমর্থকদের ভোট। এক কথায়, চাষের জন্য বি.এন.পির নিজস্ব কোন জমি নেই। আর এটাই ভারতের মূল বাঁধা।
ভারতের জাতীয়তাবাদী ইসলাম বা গণতান্ত্রিক ইসলামের ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা নেই। এই কারণে ইসলাম নাম শুনলেই সে মোটামুটি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই জামায়াত বা অন্যান্য সমমনা গণতন্ত্রের সাথে আঁতাতকারী দলগুলোর ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়। যদিও, এই দলগুলো পরক্ষোভাবে তার এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আবার এই ব্যাপারে আমেরিকা সিদ্ধহস্ত। সমগ্র বিশ্বে ইসলামের আন্দোলন সে এই গণতন্ত্রের আড়ালেই কবর দিয়ে রেখেছে। যে কারণে, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে সে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়, বরং এদের এভাবেই টিকিয়ে রাখতে পারলেই তার চক্রান্ত বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যায়।
কিন্তু স্বার্থগত কারণে ভারত-আমেরিকার মাঝে এই ব্যাপারেও সমঝোতা হয়েছে আগেও এবং এখন যে হবেনা সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। এর পূর্বেও আমেরিকা জামায়াত বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলোকে ব্যবহার করেছে, এবং প্রয়োজনে চক্রান্ত বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতার তুলনায় ভিন্নতাও ছিল। উদাহরণস্বরূপ ৯৬ এর নির্বাচন কি যথেষ্ট নয়??? এবং এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এইবারও সমঝোতা হতে পারে এবং এই ক্ষেত্রে বি.এন.পি-এর সাথে বাস্তুহারা জাতীয় পার্টির আঁতাত স্বাভাবিক। পাশাপাশি হেফাযতকেও জুড়ে দিতে পারে ১৮ দলীয় জোটে। অর্থ্যাৎ, উভয় পাশেই মোটামুটি ব্যালেন্স করা।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে। অনেকেই এই নির্বাচনকে বি.এন.পির জয় বা আওয়ামী লীগের পরাজয় বা জনগণের বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের উপর ক্ষোভ হিসেবেই দেখছে। কিন্তু আমি মনে করি বিষয়টা তেমন নয়।
আমরা যদি ‘০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমেরিকার মোটামুটিভাবে বড় অর্জনসমূহ একে একে অর্জন করতে চলেছে। যে এজেন্ডাগুলো বেশ কয়েকবছর ধরে আমেরিকা চেষ্টা করে আসছিল অর্জনের জন্য, কিন্তু বিভিন্ন কারণে সম্ভব হচ্ছিল না; বি.এন.পির তুলনায় আওয়ামী সরকার অধিক ভক্তির সাথে একের পর এক এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমেরিকাকে সহায়তা দিয়ে যায়। এবং আমেরিকা বাংলাদেশে তার চক্রান্ত বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অগ্রগামী। and this credit goes to awami govt.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
“আপনি তাদের অনেককে দেখবেন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত আছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে” [আল মায়িদাহ: ৮০]
“যদি তারা আল্লাহ’র প্রতি ও রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না” [আল মায়িদাহ: ৮১]
মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। [আল মুমতাহিনা: ১]
আর এই মূহুর্তে আমেরিকা চাইবেনা এমন কেউ আসুক, যে তার এই এজেন্ডাসমূহ যা অনেকাংশে বাস্তবায়িত হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হওয়ার দরুন এগুলো পন্ড হয়ে যাক, বা বাধাগ্রস্ত হোক। বরং এমন কেউ আসুক যে, এই এজেন্ডা সমূহকে পূর্ণতা দিতে পারে।
আর আমেরিকার ঠিক এই মনোভাব প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই খালেদা মোটামুটি তাকে এই ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কখনো ওয়াশিংটন পোস্টে, আবার কখনো আমেরিকার সিনেটে প্রতিনিধি কতৃক আহবান জানাচ্ছে আমেরিকাকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগও কম যায়না। মোটামুটি তারাও সম্পর্ক অটুট রাখছে মার্কিন মুল্লুকের সাথে যা আমরা দেখতে পাচ্ছি বিগত কয়েক মাসের মধ্যেই আমলা-গামলা সকলের আমেরিকা সফরের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে হয়ে উঠছে। এমনকি সেনাবাহিনী প্রধানও।
সেই অনুসারেই আমেরিকা এবার তার চক্রান্তে ভিন্নতা আনতে পারে। আর এই মুহুর্তে সে যে প্ল্যানটি খেলছে, তা হল ক্ষমতা বন্টন। অর্থ্যাৎ, কর্মসুচি সম্প্রসারণ করে দালালদের স্থান বর্ধন। যেহেতু আওয়ামী-বি.এন.পি উভয়েই আমেরিকার প্রতি loyalty প্রদর্শন করছে, সুতরাং আমেরিকাও এখানে ক্ষমতা ভাগ করেই দিচ্ছে। অর্থ্যাৎ সিটিগুলোতে বি.এন.পির জয় নিশ্চিত করে বি.এন.পিকে আশস্ত করছে, যা আমরা তাদের হম্বিতম্বি কমে যাওয়ার মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। আর এই নির্বাচনে আওয়ামী পরাজয়কে অনেকেই বি.এন.পির জয় হিসেবে দেখছে, যেখানে শেখ হাসিনে নিজেই ঘোষণা দিয়েছে যে, শেষ খেলা তার হাতেই থাকবে। ধারণা করা যায়, সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছে। আর বি.এন.পি কেও সন্তুষ্ট করা হচ্ছে তাতে। আর এর মধ্যে জামায়াতের সাথে মধ্যস্থতার ব্যাপারটি আগেই উল্লেখ করেছি।
সুতরাং, দিনের শেষে আওয়ামী-বি.এন.পি-জামায়াতের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাঁয়তারাই আমরা দেখতে পাচ্ছি।
“অথচ এরা যদি তোমাদের কাবু করতে পারে, তাহলে এরা শত্রুতে পরিণত হবে, এরা নিজেদের হাত ও কথা দিয়ে তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে, এরা তো এটাই চায় যে, তোমরাও তাদের মত কাফের হয়ে যাও” [আল মুমতাহিনা: ২]
এখন আমরা যদি আলোচনা শুরুতে তাদের যে কমন এজেন্ডা ইয়ে আলোচনা হয়েছে তার দিকে লক্ষ্য করি, তবে দেখব, স্বার্থগত দিকের চেয়েও আমেরিকা-ভারত-বৃটেনের এই কমন এজেন্ডা নিয়েই মাথাব্যাথা বেশি। কারণ, এই কমন এজেন্ডা তথা ইসলামী রাস্ট্র ব্যবস্থা খিলাফাহ’র দাবী এই মুহুর্তে সমগ্র বিশ্বব্যাপী তুঙ্গে পৌঁছেছে। আর আরব থেকে বিতারিত হওয়ার পথে আমেরিকা যখন এশিয়াতে তার অবস্থান শক্ত করার জন্য ব্যতিব্যস্ত, ঠিক সেইসময়েই এই অঞ্চলেই এইধরণের আন্দোলন তার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ।
এই কারণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরি করে পঙ্গু করে দেওয়া এবং সামরিক অবস্থানের ব্যাপারেও অত্যন্ত দৃঢ় আমেরিকা। আর এই ক্ষেত্রে ভারত তাকে আঞ্চলিকভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবেই। প্রতি বছর সিঙ্গাপুরে আয়োজিত আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংলাপগুলোর দিকে তাকালেই আমরা এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারি সহজেই।
তদুপরি আল্লাহ’র ইচ্ছায় এই এশিয়ান sub-continent থেকেও দিন দিন ইসলামী রাস্ট্রের দাবী বৃদ্ধি পাচ্ছে, যে বিষয়টি সর্বশেষ জরিপসমূহের (পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ) মাধ্যমে জানা যায়।
আর এই কারণেই কুফর শক্তিসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে পূর্বের তুলনায় অধিক চিন্তিত এনং ঐক্যবদ্ধভাবে খিলাফাহ’র প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইন সংশোধন থেকে শুরু করে, পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ, F.B.I এর গোয়েন্দা দপ্তর খোলা ইত্যাদি চক্রান্তকে রূপ দিয়ে যাচ্ছে ইসলামের জন্য আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে।
কিন্তু, তারা ব্যর্থ হয়েছে পূর্বে বারবার, আর এইবারও ব্যর্থ হবে ইন-শা-আল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য” [আন নূর: ৫৫]
তৌসিফ ফারহাদ