প্রশ্ন-উত্তর: খলীফা নির্বাচনের জন্য সময়সীমা বেধে দেয়ার দলীল কী?

নিচের অনুবাদটি সম্মানিত মুজতাহিদ ও মুফাচ্ছির শাইখ আতা ইবন খলীল আবু রাশতা (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন) কর্তৃক দেয়া এক প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন:

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

হে শায়খ, পূর্ববর্তী খলীফার অব্যাহতির পর তিনদিনের মধ্যে নতুন খলীফা নিয়োগ দেয়া সম্পর্কে একটি প্রশ্ন করতে চাই। ‘আজহিযাহ’ বইটিতে উল্লেখ রয়েছে যে এই সময়সীমা উমর (রা) সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে নেয়া হয়েছে যেখানে তিনি (রা) তিনদিনের মধ্যে ঐক্যমতে পৌছাতে না পারলে ছয় সাহাবীর মধ্যে অনৈক্যকারীকে হত্যার নির্দেশ দেন। আমার প্রশ্ন হলো কেউ কেউ বলেন, এই রেওয়ায়াত তারীখ আত-তাবারি হতে নেয়া হয়েছে যা দূর্বল (জয়ীফ) শ্রেনীর (বর্ণনার) মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? আল্লাহ আপনাকে বরকত ও উত্তম প্রতিদান দান করুন।

আহমাদ নাযিফ

উত্তর:

খলীফা নির্বাচন করার ব্যপারে উমর (রা)-এর তিনদিনের সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া – এ হুকুমুটি একদল সাহাবীর সম্মুখে ঘটেছে এবং একদল সাহাবীর সম্মুখে উমর (রা) সুহাইব (রা) কে বলেন,
 

صَلِّ بِالنَّاسِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، وَأَدْخِلْ عَلِيًّا وَعُثْمَانَ وَالزُّبَيْرَ وَسَعْدًا وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ وَطَلْحَةَ إِنْ قَدِمَ… وَقُمْ عَلَى رُءُوسِهِمْ، فَإِنِ اجْتَمَعَ خَمْسَةٌ وَرَضُوا رَجُلًا وَأَبَى وَاحِدٌ فَاشْدَخْ رَأْسَهُ أَوِ اضْرِبْ رَأْسَهُ بِالسَّيْف

জনগনকে তিনদিনের জন্য নামাজে নেতৃত্ব দাও এবং আলী, উছমান, আয-যুবাইর, সা’দ, আবদুর রহমান বিন আউফ যদি সে ফেরত আসে ও তালহা – এদেরকে একত্রিত কর। তাদের গর্দানের উপর দন্ডায়মান থাকো এবং যদি পাচজন কারো ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌছায় এবং একজন বিরোধিতা করে তবে তার মাথা গুড়িয়ে দাও কিংবা তরবারী দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দাও।

এটি ইবন সাহাবাহ কর্তৃক তারীখ আল-মদীনাতে বর্ণিত হয়েছে, তাবারী তার তারীখ-এ বর্ণনা করেছেন এবং ইবন সা’দ তার আত-তাবাকাত আল-কুবরাতে একই ধরনের বর্ণনা করেছেন। তারা সকলে শুরা সদস্য ও প্রবীন সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও এটি ঘটেছে। এটি সাহাবীদের দৃষ্টি ও শ্রবনের সম্মুখেই সংঘটিত হয়েছে এবং কোনো বর্ণনায় আসেনি যে তারা এর বিরোধিতা করেছেন। তাই এটি ইজমা আস-সাহাবাহ রূপে গণ্য হবে এবং এর ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য তিনদিন ও এর রাত্রিসমূহের অধিক সময় খলীফাবিহীন অবস্থায় থাকা বৈধ নয়। এবং ইজমা আস-সাহাবাহ কিতাব ও সুন্নাহর মতোই দলীলের উৎস।

এ কারণে পূর্ববর্তী খলীফার পর তার পদ শূন্য হয়ে পড়লে মুসলিমদের জন্য তিনদিনের বেশি সময় দেয়া হয়নি যদি না অনিবার্য কোনো পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্য অর্জনের পরিপন্থি অবস্থাকে প্রতিহত করা সম্ভব না হয়। সেক্ষেত্রে নিজেদেরকে এ কাজে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে অনিবার্য পরিস্থিতিতে অক্ষমতার দরুন এই ফরজ (পরিত্যাগ)-এর অপরাধ হতে পরিত্রান পাওয়া যাবে। ইবন হিব্বান ও ইবন মাজাহ ইবন আব্বাস হতে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: 

«إن الله وضع عن أمتي الخطأ، والنسيان، وما استُكْرِهوا عليه»

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মত হতে তুলে নিয়েছেন – ভুল, ভুলে যাওয়া ও যা তাদের উপর জোর করে আপতিত করা হয়েছে।

আর যদি তারা নিজেদের একাজে ব্যস্ত ও জড়িত না রাখে তবে তারা গুনাহগার হবে যতক্ষন না তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করছে এবং তখনই তাদের উপর হতে ফরজিয়্যাতের দায়িত্ব অপসারিত হবে। আর খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজ না করে তারা যে অপরাধ করেছে তা তাদের উপর হতে অপসারিত হবে না, বরং তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট থাকবে এবং তিনি সে ব্যাপারে তাদের হিসাব নিবেন, অন্য সকল সেই অবাধ্যতার মতোই যা মুসলিম করে যখন সে ফরজ কাজ পরিত্যাগ করে।

আপনাদের ভাই

আতা’ ইবনু খলীল আবু আল-রাশতা

২৫ রজব ১৪৩৪ হিজরী

৪ জুন ২০১৩ খৃষ্টাব্দ

Source: https://www.facebook.com/photo.php?fbid=177555205745898

Leave a Reply