আল্লাহ্ তা’আলা কাউকে তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না, আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। আমার এক কিতাব আছে, যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। [আল মুমিনুন: ৬২]
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। [বাকারা: ২৮৬]
আল্লাহ্ তা’আলা প্রতিটি দায়িত্বের একটি উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছেন এবং সেই উদ্দেশ্য পালনের সাথে সামর্থ্যকে সংযুক্ত করেছেন। আমরা যদি নিন্মোক্ত আয়াত গুলোর দিকে তাকাই তাহলে বিষয়টি দেখব এবং প্রতিটি কাজের সামর্থ্যকে আইনপ্রনেতা আল্লাহ তা’আলা নিজেই নির্ধারণ করেছেন,
আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর–পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। কাউকে তার সামর্থাতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন করা হয় না। আর মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এবং যার সন্তান তাকেও তার সন্তানের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন করা যাবে না। আর ওয়ারিসদের উপরও দায়িত্ব এই। তারপর যদি পিতা–মাতা ইচ্ছা করে, তাহলে দু’বছরের ভিতরেই নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে দুধ ছাড়িয়ে দিতে পারে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই, আর যদি তোমরা কোন ধাত্রীর দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে চাও, তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত বিনিময় দিয়ে দাও তাতেও কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ অত্যন্ত ভাল করেই দেখেন। [বাকারা: ২৩৩]
স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব। [বাকারা: ২৩৬]
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। [মায়িদা: ৮৯]তিনি বললেন: আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। [কাহফ: ৯৫]
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি–সামর্থ্য¸ দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত। [হাজ্জ: ৪১]তারা (শয়তান) এ কাজের উপযুক্ত নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। [আশ শু’আরা: ২১১]
তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ্য¸ দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা–মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর। [আন নামল: ১৯]
তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল। [আলে ইমরান: ১১৪]
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। [আত তাগাবুন: ১৬]
আবার নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে মানুষের নিজ বুদ্ধিতে সামর্থ্যের নির্ধারণকে প্রত্যাখান করেছেন,
যদি আশু লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং যাত্রাপথও সংক্ষিপ্ত হতো, তবে তারা অবশ্যই আপনার সহযাত্রী হতো, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। আর তারা এমনই শপথ করে বলবে, আমাদের সাধ্য থাকলে অবশ্যই তোমাদের সাথে বের হতাম, এরা নিজেরাই নিজেদের বিনষ্ট করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, এরা মিথ্যাবাদী। [আত তওবা: ৪২]
তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন। [আশ শূরা: ১৩]
তাই আমরা ফিকহের বই গুলতে দেখতে পাই মুজতাহিদগণ প্রতিটি হুকুম পালনের সাথে যোগ্যতাকে সংযুক্ত করেছেন এবং এ যোগ্যতার বিষয়টিকে দালিলিক ভাবে নির্ধারণ করেছেন।
যেমনঃ শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে বিবাহের জন্য অযগ্য বিবেচনা করেছেন, নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে যাকাতের ফারজিয়াত থেকে মুক্ত করেছেন, হজ্জের সামর্থ্য না থকলে হজ্জের ফারজিয়াত থেকে মুক্ত করেছেন, মেয়েদের অনেক শারীরিক কারণে রোজা পালন কে নিষিদ্ধ করেছেন, নাবালককে চুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত করেছেন ইত্যাদি।
এখন কেউ যদি শরীয়াহর নির্ধারিত পন্থায় যোগ্য না হন এবং সেই কাজ করার চেষ্টা করেন তাহলে শরিয়াহর দৃষ্টিতে তিনি অন্যায় করেছেন কারন রাসূল (সাঃ) বলেন,
যেই এমন কোনো কাজ করল যে ব্যপারে আমাদের পক্ষ হতে কোনো নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।
যেমনঃ কেউ যদি নাবালকের সাথে চুক্তি করে তাহলে তা শরিয়াহর দৃষ্টিতে প্রত্যাখাত। কারণ শরীয়াহ নাবালককে চুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত করেছে।
আবার আমাদের জন্য কখনোই এটা বলা উচিত হবেনা যে শরীয়াহর অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা নির্ধারণে নিশ্চুপ রয়েছে এবং এটা আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে এবং এটা আমাদের বুদ্ধি দিয়ে নির্ধারণ আমাদের জন্য অনুমোদিত। ইসলাম হছে এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যাতে প্রতিটি বিষয়ের সমাধান আছে। কারণ আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন,
আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা। [আন-নাহল: ৮৯]
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [মায়িদা: ৩]