নারী, ফুটন্ত কড়াই থেকে জলন্ত উনুনে

বাঙ্গালী নারীর অতীত অবস্থা:

আমরা যদি মাত্র দুই প্রজন্ম আগে ফিরে যাই,আমাদের দাদী-নানীদের যে চিত্র দেখব তা কম-বেশী একই রকমের। শৈশব পেরোতে না পেরোতে সংসার, কিছু বুঝে উঠার আগে মা, তার পর কোল জুরে একের পর এক সন্তান, বিরাট সংসারের ঝক্কি এক হাতে সামলানো সেই সাথে ক্ষেত-খামারে কাজ করা মানুষের খাদ্য যোগান দেয়া। তার উপর আছে শ্বাশুড়ীর গঞ্জনা। সবার উপরে আছে স্বামীর অবহেলা। কবে যে পৌড়া থেকে বৃদ্ধায় পরিনত হয়, নারী টের পায় না। এক সময় সে তার নিজ সন্তানের বোঝা বলে গন্য হয়। জন্মের সময় পরিবারে ভ্রুকুন্ঠনের উদ্রেককারী এই নারী মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথিবীর বিরাট উপকার সাধন করে চলে যায়। বেগম রোকেয়া তাই আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা ভুমিষ্ঠ হইয়াই শুনিয়াছি যে আমরা জন্মিয়াছি দাসী, চিরকাল দাসী, থাকিব দাসী,”এ অবস্থা অবশ্যই কাম্য নয়। কী করা যায়? নারী হৃদয় কেঁদে উঠে। তোদেরি কল্যানে, বোন! কিন্তু কী করিব? কাঁদিতে শক্তি আছে, কাঁদিয়া মরিব”

না আর কান্না নয়। দেখা গেল পুরুষ নামের অপর শক্তি শুধু মাত্র অর্থ-উপার্জন করে বলে সব ব্যাপারে মেয়েদের দাসী জ্ঞান করে। তাই নারীর এই বিপুল কর্মযজ্ঞ, নিরব ত্যাগ কিছুই তার চোখে পরে না। তাই মেয়েরা যদি তার গন্ডি ছেড়ে বেড়িয়ে এসে ঘড়-সংসার এর সাথে সাথে আর্থিক ভাবে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে তবে তার স্বীকৃতি সে আদায় করে নিতে পারবে। পরগাছা জীবনই তার দুরগতির কারণ।

বেগম রোকেয়ার ভাষায়, “ভগীনিগন, চক্ষু রাঙ্গাইয়া জাগিয়া উঠুন- অগ্রসর হউন। বুক ঠুকিয়া বল মা! আমরা পশু নই; বল কন্যে। আমরা জড় অলঙ্কার রুপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বল, আমরা মানুষ। আর কার্যত: দেখাও যে আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ অংশের অর্ধেক।”

কিন্তু আসলেই কি অর্থ উপার্জন না করাটাই মেয়েদের অপরাধ ছিল? অন্য কথায় টাকা দিয়ে কি সম্মান কেনা যায়? এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তরের পিছনে সময় নষ্ট করা হলো না। শুরু হলো আরেক কালো অধ্যায়ের। সেই প্রসঙ্গে পরে আসি, আগে দেখা যাক সমাধানের প্রয়োগ।

সমাধান:

আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে। মেয়েরা প্রকৃত কর্তৃত্ব ফিরে পাবে। দেশের অর্থনৈতিক গতি প্রবল হবে। তাই রাষ্ট্র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নীতি প্রনয়ণ করল। BCWD (National Council For Women’s Development)-১৯৯৭ এর ফেব্রুয়ারীতে সরকার নীতি চুড়ান্ত করে যা ঐ বছর মার্চে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে প্রয়োগ শুরু হয়ে যায়।

নীতিমালার লক্ষ্য ছিলঃ সর্বক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ের সম অধিকার। মেয়ে ও নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দুরীকরণ। নারীকুলের মানবাধিকার নিশ্চিত করা। নারীদের মানব সম্পদে পরিণত করা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে মেয়েদের স্বীকৃতি দেয়া। প্রশাসন, রাজনীতি, শিক্ষা, খেলাধুলাসহ সকল আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নারী পুরুষের অংশ গ্রহনে সমতা আনয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ণ। নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ভাবমূর্তি উপস্থাপন। প্রচার মাধ্যমে মেয়েদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি উপস্থাপন। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আশ্রয় নিশ্চিতকরণ।

এই নীতির আলোকে আমরা সেখানে পাই নারী শিক্ষাকার্যক্রমের আওতায় প্রথমে ৮ম শ্রেনী পরে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। চালু হয়েছে বৃত্তি, উপবৃত্তির ব্যবস্থা। ফলাফল হিসাবে আমরা দেখি যে ১৯৯০ সালে যেখানে নারী সাক্ষরতার হার ছিল ১৩.৪% বর্তমানে তা ৩০% ছাড়িয়ে গেছে। একই ভাবে চাকুরীতে কোটা পদ্ধতির প্রবর্তন, নারী কর্মী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ, ক্ষুদ্র-মাঝারী ঋণের আওতায় মেয়েদের সংখ্যা বাড়ানো, উদ্যোক্তা হিসেবে উৎসাহ প্রদান সহ মিডিয়াতে ব্যাপক উপস্থিতি, গৃহীত নীতির বাস্তব প্রয়োগেরই সাক্ষ্য বহন করে। অধিক সন্তান এবং তাড়িতাড়ি বিয়ে মেয়েদের অর্থনৈতিক কাজের অন্তরায়। তাই ব্যাপক প্রচার ও মাঠ কর্মের মাধ্যমে অল্পসন্তান ও দেরীতে বিবাহ উৎসাহিত করা হচ্ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রনের উপকরণের ব্যাবহার ৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। গড় বিয়ের বয়স ১৩.৫ থেকে বেড়ে ১৯.৫ এ ঠেকেছে। Total Fertility Rate ৪.৫ থেকে কমে ৩.৪ এ নেমেছে। চাকুরী ক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যথাক্রমে শতকরা ২০,৭৪,৯ এবং ১৪জন নারী শিক্ষক শিক্ষা দানে নিয়োজিত আছেন। ২য় শ্রেনীর অফিস কর্মী হিসাবে যেখানে ১৯৯০ সালে ৯% নারী নিয়োজিত ছিল তা ২০০৪ সালে এসে ৩৭.১%এ দাঁড়ায়।উচ্চতর পেশার ২৬০৬টি পদের মধ্যে নারীদের দখলে আছে ১১১৮টি। কৃষিক্ষেত্রে মালিক হিসাবে আছে ২২.৩% নারী এবং কর্মী হিসেবে আছে ২৫.৩% নারী। প্রায় ২০০০টি ছোট বড় গার্মেন্টসে নিয়োজিত কর্মীদের শতকরা ৯০ভাগই নারী। বর্তমানে ১৫মিলিয়ন নারী ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত।

কেমন আছে আজকের নারীঃ সাফল্য এসেছে। পরিসংখ্যান তাই বলে। অনেক মেয়েই আজ পরগাছা নয়। কিন্তু গোড়ার সেই গলদ, পুরুষদের প্রশ্ন না করা, “মেয়েদের প্রভু হবার হুকুম তোমাদের কে দিয়েছে ?”- আজকে পর্বত আকারে দেখা দিয়েছে। নারীকে সুরক্ষিত করতে যেয়ে করা হয়েছে অরক্ষিত। পূর্বে স্বামী তাকে অসম্মান করত, বর্তমানে গলির মোড়ের চা বিক্রেতা, বাসের হেল্পার, ফুটপাথের ছেলে, অফিসের বস, স্বামীর বন্ধু, যতো শ্রেনীর পূরুষ লোক আছে সকলে তাকে অসম্মান করে। মেয়েদের স্কুলে যাবার সংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে বখাটে ছেলেদের গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে অশ্লীল মন্তব্য করার মাত্রা। শুধুমাত্র নারীদের চিহ্ন শরীরে ধারণ করার জন্য গিলতে হয় এই অশ্রাব্য কথাবার্তা। সহ্য করতে না পেরে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় সিমি, রুমি, তৃষার মত কোমলমতি উজ্জল মেয়েরা। প্রতি ২১ মিনিটে একটি মেয়েকে আজকে এই জাতীয় লাঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রত্রিকার পাতায় কমপক্ষে ৩জন নারীর ধর্ষনের রিপোর্ট ছাপা থাকে। ১৯৯৭ সালে ধর্ষিত হয়েছিল ৭৫৩ জন, ১৯৯৯ সালে যা বেড়ে হয় ১২৩৮ জন। আমরা জানি প্রকৃত সংখ্যা আরো আনেক বেশী। ১২০০০০ গার্মেন্টস নারী কর্মীদের একটি বিরাট অংশ এই যৌণ নিপীড়ণের শিকার। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ পতিতা রয়েছে। যাদের মধ্যে ৬৫%এর বয়স ১১ থেকে ১৩ এর মধ্যে। ৩৩%এর বয়স ১৩ থেকে ১৫ এর মধ্যে। মেয়েরা তো স্বাবলম্বী হচ্ছে, প্রস্টিটিউটের সংখ্যা এত বাড়ছে কেন?

অন্ততঃ ৬০ বছর আগেও তো পরিস্থিতি এরকম জঘন্য ছিল না! মিডিয়ার নারীকে একটি মুখরোচক পন্য ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না পাবলিকের কাছে। সব চেয়ে মর্মান্তিক অবস্থা মায়েদের। সন্তানের সংখ্যা একটি বা দুইটি। তাও একটি বিড়াট মাথা ব্যাথার কারন। কে দেখবে এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। পরিবারে শিশু বেড়ে উঠে গৃহকর্মীর কাছে। যাদের আর্থিক সংগতি নেই তারা শিশুদের শেকলবন্দী করে রাখে, যার ছবি আমরা পত্রিকায় দেখেছি। পিতা-মাতা জীবিত থাকার পরও এতিম এই অসহায় শিশুগুলো হতে থাকে যৌণ নিপীড়ণের শিকার। ঘরে, বস্তিতে, পথে। কী মর্মান্তিক!

গ্রামের নারীদের অবস্থা পাল্টে গেছে। তাদের বেশীর ভাগ শহরে চলে আসছে, বরণ করছে ভাসমান জীবন। বাকিরা ক্ষুদ্র ঋণের কল্যানে সন্তান পালন আর ব্যাবসা পরিচালনা, এক হাতে সব কাজ করছে। স্বামীরা পুজীর অভাবে হাওয়া খায় আর বৌ পেটায়। আসলে সুবিধা হয়েছে তাদেরই।

ঠিক এরকম একটা ভবিষ্যতের চিত্র কি আমাদের পুর্ব প্রজন্ম চেয়েছিল?

পৃথিবীর সব চেয়ে সস্তা বস্তুতে পরিনত হয়েছে এমন এক প্রানী যার সম্মান সৃষ্টিকর্তার কাছে সবচেয়ে বেশী। আমাদের নানী যদি আমাকে প্রশ্ন করেন “কেমন আছিস তোরা?” কী উত্তর দিব আমরা! তারা লাঞ্চিত হয়েছে নিজ পরিবারে। আমরা লাঞ্চিত হচ্ছি সমস্ত সমাজে – এই পার্থক্যটাই শুধু হয়েছে।

কেন এমন হলো ? আসলে আমরা এমন এক সমাজকে গড়ে তুলেছি সেখানে এমনটাই তো হওয়া স্বাভাবিক। এমনই হবার কথা। আসলে সমস্যা ছিল নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিখ্যাত কবি বায়রন বলেছিলেন, “পুরুষদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার অধিকার মেয়েদের নেই। তাদের জন্য উপযুক্ত স্থান হল ঘরের মধ্যে রান্না ঘর।”

দাইমাস্তিন অপর এক স্থানে বলেছেন, “আমরা নারীদের মধ্যে দেহপসারিনীদের উপভোগের জন্য ব্যাবহার করি, আর প্রেমিকদের মনোরঞ্জনের জন্য রাখি এবং স্ত্রীদের রাখি সন্তান উৎপাদনের জন্য।”

সমাজের এক অংশ যখন অন্য অংশের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গী লালন করে, তখন অর্থ কেন অন্য কোনভাবেই নারী তার প্রকৃত সম্মান ধারন করতে পারবে না। আজকে ঘরে যে পুরুষরা তার পরিবারের প্রতি অন্যায় করে, সেই পুরুষই সমাজের কোন না কোন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। কেন সে অন্য নারীর প্রতি মহানুভবের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে? খুবই অযৌক্তিক কথা। বরং যৌক্তিক হল সে তার পরিবারের সাথে যা করতে পারে নি, অন্য নারীর সাথে তাই করবে, তাই করছে। মানুষ তার রচিত নিয়মে এমন কোন পরিবর্তন আনবে না যে পরিবর্তন তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। আর তাদের রচিত এই অন্যায় সমাধান ধংস করে প্রজন্মের পর প্রজন্মের জীবন। অন্ধকার থেকে বের করার নামে ঠেলে দেয় ঘোর অন্ধকারে।

কী করা উচিত ছিলো? আমাদের পরিবার গুলোতে যদি ইসলাম ঠিকমত থাকতো তাহলে আসলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। আল্লাহ (সূবহানাহু ওয়া তায়ালা) পুরুষদের নারীর অভিভাবক রুপে সৃষ্টি করেছেন, প্রভু হিসাবে নয়। ঠিক যেমন রাষ্ট্রের অভিভাবক রাষ্ট্রনায়ক। যখন নারীদের উপর অন্যায় হচ্ছিল, তখন যেমন কুরআনের আয়াত, রাসূল (সা) হাদীস বিদ্যমান ছিল। এখনও আছে। ভূল যেটা হয়েছে যে আমরা অনুসন্ধান করি নি, এ ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তা কী রায় দিয়েছেন। কিন্তু নিজেদের নীতি যখন ব্যার্থ হয়েছে তখন আবার সুকৌশলে ইসলামের উপর দোষ চাপাতে পিছ পা হয় না অনেকে। রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যাক্তি ২জন বা তার অধিক কন্যা সন্তান লালন পালন করে সৎ পাত্রস্থ করার আগ পর্যন্ত আল্লাহর আমানত হিসাবে রাখবে, জান্নাতে ওই ব্যক্তি এবং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর মধ্যে ২ আঙ্গুলের ব্যাবধান থাকবে। এই বলে তিনি তার আঙ্গুল তুলে ধরেন। এই হাদীসের চর্চা পরিবারে থাকলে কেউ কন্যা সন্তানের জন্মকে বোঝা ভাবতে পারত না। দাসী তো অনেক পরের কথা।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“……… নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। অতঃপর যদি তাকে অপছন্দ কর তবে হয়তো এমন কিছু অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রভুত কল্যান রেখেছেন।” [সূরা নিসা: ১৯]

রাসূল (সা) বলেছেন “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। নিশ্চয়ই আমি আমার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।” তিনি (সা) আরো বলেছেন, “গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ। আর সৎ কর্মশীল স্ত্রী হল তার মধ্যে শ্রেষ্ট।

আরাফাহর ময়দানে বিদায় হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে রাসূল (সা) স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হতে বলেছিলেন। সন্তান পালনের কষ্টকর কাজের জন্য আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) নারীকে যথার্থ পারিশ্রমিক দিয়েছেন। সন্তান জন্ম দান, স্তন্যদান এবং বড় করা প্রতিটির জন্য আলাদা করা নেকী। সেই সাথে রয়েছে মাতৃত্বের অনন্য স্বাদ। সন্তানের হক আছে তার পিতা মাতার কাছে। সে শেকল বন্দী হবার বস্তু নয়, নিপীড়নের পাত্র নয়। পিতামাতার হক আছে সন্তানের কাছে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেছেন, তাদের মধ্যে একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ হলে আমরা যেন তাদের প্রতি এমনকি উহ শব্দটিও উচ্চারণ না করি। আল্লাহ এবং রাসুল (সা) এর পর আমাদের কাছে সবচেয়ে সম্মানের বস্তু আমাদের মা-বাবা।

মেয়েরা কর্তৃত্ব চায় না, মেয়েরা সম্মান চায়, স্বস্তি চায়। যা শুধু তার সৃষ্টিকর্তা প্রণীত নিয়মই তাকে দিতে পারে। অথচ নারীর সে চাওয়া ভুল খাতে প্রবাহিত করে চরম লাঞ্চনার মুখোমুখি দাড় করিয়ে, নারীর অনুভুতির গলা টিপে মারে সৃষ্টিকর্তার উপর দোষ চাপানোর ষড়যন্ত্র চলছে পুরোদমে।

মেয়েদের ক্ষুব্ধ প্রশ্নের মুখে তার সামনে শত্রু হিসেবে তার প্রভুকে দাড় করিয়ে দেওয়ার হীন চেষ্টাও আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি।

যেমন আন্দদা শংকর রায় বলেন, “প্রকৃতির অবিচার নারীকে মেরে রেখেছে- বিদ্রোহ নিষ্ফল। এই দেখনা প্রতি মাসে কয়দিন বর্ষাকাল। পুরুষের এমন ঝঞ্ঝাট আছে? কিংবা এক যাত্রায় পৃথক ফল। পুরুষের কাছে যা ৫মিনিটের সুখ, নারীর কাছে তাই ১০মাসের অসুখ। প্রকৃতির এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীর করার কিছুই নেই।” (নাউযুবিল্লাহ)। সৃষ্টিকর্তার দেয়া নিয়ামত ‘সন্তান’ আমাদের কাছে ঝামেলা হিসাবে উপস্থাপন কারার স্পর্ধা তারা কোথায় পায়?

শেষ কথাঃ মেয়েরা তাদের অবস্থা পরিবর্তন করতে যেয়ে গরম কড়াই থেকে ঝাপিয়ে উনুনে পড়েছে। আসলে তাকে সুকৌশলে ফেলা হয়েছে। এতে তাকে যথেচ্ছ ব্যাবহার করা সুধাজনক হয়। নারী সমস্যার সমাধানের সত্যিকারের চেষ্টা থাকল এতোবড় ভুল হবার কথা নেই। মেয়েদের উপর অন্য মেয়ে কিংবা পুরুষের সমাধান চাপিয়ে নেয়ার দিন শেষ করতে হবে। এই মানব রচিত সুবিধাবাদী সমাধানের পরিণতি আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের মধ্যে চাহিদা,প্রয়োজন দিয়েছেন, আমাদের চাওয়া পাওয়া তিনিই (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ভালো জানেন। সে হিসাবেই তিনি নিয়ম নির্ধারন করেছেন। যার মাধ্যমে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ যা হক দিয়েছে তার চেয়ে বেশী নেয়ার কথা যে বলবে তার অন্য উদ্দেশ্য থাকবে। সে অধিকার আমাদের ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাবে দুনিয়া ও আখিরাতে। তাই চলুন সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবারের ইসলাম কায়েম করি, যা আমাদেরকে শুধু নয় প্রত্যেককে, প্রতিটি বস্তুকে, ন্যায় বিচার তথা আলোর দিকে চালিত করবে।

নুসরাত জাহান

Leave a Reply