মুমিনদের ভবিষ্যত অবশ্যই অবশ্যই অতীত হতে উত্তম হবে

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَالضُّحَى (1) وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى (2) مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى (3) وَلَلْآَخِرَةُ خَيْرٌ لَكَ مِنَ الْأُولَى (4) وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى (5)

অর্থ: ‍”কসম আলোকিত সকালের, কসম রাতের যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি। আর অবশ্যই আপনার ভবিষ্যত সময় পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে উত্তম। আর অচিরেই আপনার রব আপনাকে এমন কিছু দান করবেন, যার ফলে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।” (সূরা দুহা, আয়াত ১-৫)

সূরায় দুহা’র এই আয়াত গুলো প্রিয়নবী সা. এর উপর এমন এক সময় অবতীর্ণ হয়েছিলো, যখন তিনি নানাবিধ পেরেশানি আর মানসিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন। নবুওয়াতের শুরুর দিকে বিশেষ কিছু কারণে কয়েকদিন সাময়িকভাবে রাসূলের প্রতি ওহী আসা বন্ধ থাকলে কাফিররা বিষয়টিতে রঙ চড়িয়ে ব্যাপকভাবে অপপ্রচারে মেতে ওঠে। আবূ লাহাবের স্ত্রী ও তার দোসররা বলতে থাকে যে রাসূল সা. কে (নাউযুবিল্লাহ) তার রব পরিত্যাগ করেছেন, ফলে আর ওহী আসছে না।…

কাফির-মুশরিকদের অজ্ঞতাপ্রসূত নিন্দাবাদ আর চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে প্রিয়নবী সা. কে মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতেই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের ঐতিহাসিক এই আয়াত গুলো অবতীর্ণ করেন। এর মাধ্যমে পরিস্কারভাবে এটা জানিয়ে দেয়া হয় যে, সাময়িকভাবে বিশেষ কারণে রাসূল সা. কিংবা মুমিনরা বিপদগ্রস্থ বা সমস্যার সম্মুখীন হলেও এটা খুবই সাময়িক। শীঘ্রই এই আধার রজনী কেটে যাবে। নব প্রভাতের সূর্যোদয়ও সন্নিকটে। সবচেয়ে মহাসত্য বাস্তবতা পরকাল তথা আখেরাতে তো মুমিনদের জন্য মহা সফলতা আছেই এমনকি এই দুনিয়াতেও সাময়িক বিপর্যয়ের পর আবারও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।

একইভাবে প্রতিটি মানুষের জীবনেই সফলতা-ব্যর্থতা, সমস্যা-সম্ভাবনা আসে যায়। প্রকৃত মুমিন এবং মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাসী ঈমানদারের সকল অবস্থাই কল্যাণকর। কেননা সে সুখে-দুখে সর্বাবস্থায়ই একটি স্বাভাবিক রোল প্লে করে থাকে। আর এই অবস্থায় তার ধৈর্য্য ও সবর তার জন্য মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত নিশ্চিত করে দেয়। যারা তাদের কঠিন এবং সমস্যা সঙ্কুল পরিস্থিতিতেও মহান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থায় সৎ থাকে, সঠিক পথের উপর চলতে চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ তাদেরকে আখেরাতে তো বটেই এই দুনিয়াতেও নিজ অনুগ্রহে ধন্য করেন। আর পরকালের চির কল্যাণ তো আছেই।

পরিশেষে মহান আল্লাহর সেই ঘোষণাটি স্মরণ করতে চাই, তিনি বলেছেন-

فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا (5) إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا (6) فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ (7) وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ

অর্থ: ‍“সুতরাং কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ। নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ। অতএব যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হও। আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও।” (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৭)

ইসহাক খান

Leave a Reply