মিশরের শীর্ষ ইসলামি ব্যক্তিত্ব আল্লামা সায়্যিদ কুতুব রহ. কে কালিমা তাইয়্যিবার ব্যাখ্যা লেখা ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা সংবলিত একটি কিতাব লিখার কারণে তৎকালীন মিসরের স্বৈরশাসক তাকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করেছিলো। ফাঁসির আগের রাতে সায়্যিদ কুতুব রহ. কে কালিমা পড়ানোর জন্য জেলের ইমামকে পাঠানো হলো। জেলের ইমাম এসে আল্লামা সায়্যিদ কুতুব রহ. কে কালিমার তালকিন দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। তাকে দেখে সায়্যিদ কুতুব জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন?
ইমাম বললেন, আমি আপনাকে কালিমা পড়াতে এসেছি। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আগে আসামীকে কালিমা পড়ানো আমার দায়িত্ব।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, এই দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে?
ইমাম বললেন, সরকার দিয়েছে।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, এর বিনিময়ে কি আপনি বেতন পান?
ইমাম বললেন, হ্যাঁ আমি সরকার থেকে বেতন-ভাতা পাই।
তখন সায়্যিদ কুতুব রহ. সেই ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি জানেন কী কারণে আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে?
ইমাম বললেন, না বেশি কিছু জানি না।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, আপনি আমাকে যেই কালিমা পড়াতে এসেছেন, সেই কালিমার ব্যখ্যা লেখার কারণেই তো আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। কি আশ্চর্য! যেই কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান সেই কালিমার ব্যখ্যা মুসলিম উম্মাহকে জানানোর অপরাধেই আমাকেই ফাসি দেয়া হচ্ছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, আপনার কালিমার বুঝ আর আমার কালিমার বুঝ এক নয়। আপনার কোন প্রয়োজন নেই।”
এটাই হলো চরম বাস্তবতা। আমাদের আজকের সমাজেও দেখা যায়, অনেকেই তোতা পাখির মতো বুলি আওড়ানো কালিমার দাওয়াত দিচ্ছেন কিন্তু তারা কোন বাঁধার সম্মুখীন হন না। চতুর্দিক থেকে কেবল নুসরাত আর নুসরাত পাচ্ছেন।
বর্তমান জালিম শাসকরাও আজ কুরআনের ব্যখ্যা দিচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক নাম ধারা উলামায়ে কিরামও দীন প্রচার করছে। কিন্তু যেই কালিমা তাইয়্যিবা এক আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বাণী শোনায়, যেই কালিমার অনুসারীদের জন্য মানবরচিত সকল শাসন ব্যবস্থার অধীনে থাকা হারাম হয়ে যায়, যেই কালিমার বাণী মক্কায় প্রচার করার কারণে চতুর্দিক থেকে প্রিয়নবী সা. বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই একই কালিমা আজ সমাজে প্রচার করা হচ্ছে তার মূল আহ্বান আর মর্মকে বিলুপ্ত করে। যার ফলে যে কালিমা বলছে সে নিজেও বুঝে না যে সে কি বলছে আর যার কাছে কালিমার দাওয়াত দিচ্ছে সে কালিমার দাওয়াতও গ্রহণ করছে আবার গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্রসহ মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে এই কালিমা এবং ইসলামের মূল ভিত্তিই আজ বিপর্যস্ত হওয়ার পথে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কালিমার সঠিক ব্যখ্যা জানার এবং বুঝার তাওফীক দিন। আমীন।
ইসহাক খান
৫ই এপ্রিল, ২০১১