‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এর উপর বিশ্বাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-অর্থাৎ ‘মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ্’র রাসূল’ এটি যোগ করা না হয়। কেননা তাঁর মাধ্যমেই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বাণী আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। একজন মুসলমানকে অবশ্যই হযরত মুহাম্মদ (সা) এর শ্রেষ্ঠতম ও সর্বশেষ নবী হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং তাঁর নবুয়্যাত তথা তাঁকে প্রেরণ করার উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে।
একটি সুনির্দিষ্ট মিশন দিয়ে আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর রাসূল (সা) কে মানব জাতির কাছে পাঠিয়েছেন, আর তা হলো আল্লাহ্র প্রেরিত জীবন ব্যবস্থা – ইসলামকে পৃথিবীতে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত আর সব বাতিল জীবন ব্যবস্থার উপর অধিষ্ঠিত করতে, তাদের শক্তিকে খর্ব করতে ও ইসলামকে একমাত্র বিজয়ী দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।
রাসূলুল্লাহ্ (সা) এ উপর আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত গ্রন্থ আল-কুর’আন তাঁর মিশনকে নিম্নের আয়াতদ্বয়ে স্পষ্ট বলে দিচ্ছে:
“নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সত্যসম্বলিত গ্রন্থ দিয়ে যাতে করে আল্লাহ্ তোমাকে যা দেখিয়েছেন তা দিয়ে তুমি মানবজাতিকে শাসন করতে পারো।” [সূরা নিসা : ১০৫] এবং
“তিনিই আল্লাহ্, যিনি তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন হেদায়েত ও সত্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) সহ, যাতে করে তা আর সব দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) এর উপর বিজয় লাভ করতে পারে যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” [সূরা তাওবা : ৩৩]
ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
“আমি (আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হয়েছি যেন মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে থাকি যতক্ষণ না তারা “আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ্’র রাসূল” – একথার স্বীকৃতি দেয় এবং নামাজ কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে। অতএব, যদি তারা তা করে তবে তাদের জীবন ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ, তবে যেটা আল্লাহ্’র আইন (অর্থাৎ শারী’আহ্ লঙ্ঘনে প্রাপ্য শাস্তি) তা ব্যতীত। আর তাদের হিসাব নিকাশ আল্লাহ্’র কাছে।” (বুখারী)
মানবজাতির প্রতি রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর বৃহত্তর আহ্বান ছিল এই যে, তারা যেন আল্লাহ্’র সার্বভৌমত্বে কোন প্রকার শরীক না করে আর পুরোপুরি আল্লাহ্’র কতৃত্বকে মেনে নেয়। এর অর্থ হচ্ছে সমগ্র মানবজাতি তাঁকে স্বীকার করে নিতে এবং তাঁর আনীত জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে মেনে নিতে বাধ্য। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন,
“সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে (আমি) মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর জীবন! বর্তমান মানব গোষ্ঠীর কোন ইহুদী বা নাসারা আমার আবির্ভাবের সংবাদ শোনার পর যে দ্বীন নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করলে সে নিশ্চিতই জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (মুসলিম)
অর্থাৎ, তাঁর আগমনের পর থেকে শুরু করে সব যুগের সমগ্র মানবজাতির জন্যই তাঁকে একমাত্র পদপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করা এবং ইসলামের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানবজাতির সকল কর্মকান্ড পরিচলনা করা আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে মানবজাতির প্রতি একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। কেননা, রাসূল এই উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করা হয় যেন তাঁর প্রদর্শিত পথে আল্লাহ্’র পূর্ণ আনুগত্য করা হয়। তাই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের প্রতিটি ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর নির্দেশিত পথেই চলতে হবে। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,
“আমি রাসূল এ জন্যই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহ্’র নির্দেশ অনুসারে তাঁর আনুগত্য করা হবে।” [সূরা নিসা : ৬৪]