ধর্ষণ মহামারীর একমাত্র প্রতিষেধক ইসলাম

বিশ্বব্যাপী চলছে ধর্ষণের মহোৎসব। UNICEF এর ২০২৪ অক্টোবরের সার্ভে মতে বিশ্বজুড়ে প্রতি ৮ জনে ১ জন নারী ১৮ বছর বয়স হবার আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। Irony হল, উন্নত বিশ্বে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি, যদিও টা উল্টো হবার কথা। প্রতি ৬৮ সেকেন্ডে আমেরিকাতে ১ জন ধর্ষিত হয়। লন্ডনে ২০২৩ সালে পুলিশের কাছে গড়ে প্রতিদিন ২৪ টি ধর্ষণের রিপোর্ট জমা হয়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে ধর্ষণের হার এখনও কম হলেও পিছিয়ে নেই। ২০২৫ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে ১২ টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন, ধর্ষণ মানে কিন্তু শুধুই জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন নয়, বরং হিংস্র যৌন সহিংসতা। ছোট ছোট শিশুদের যৌনাঙ্গ চিরে ফেলা বা অন্তঃসত্তা নারীদের গণধর্ষণ-এর ভয়াবহতা ও বীভৎসতা স্বাভাবিক ভাবে আমদের ভারাক্রান্ত করে তুলছে। শেষ পর্যন্ত হত্যার শিকার না হলেও প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী হাজারো Rape Victim ও তাদের পরিবারকে এই ধরনের চরম শারিরিক ও মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় সবাই চাইছে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে সমাজ বের হয়ে আসুক, কঠোর আইন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এমনকি প্রয়োজনে ধর্ষককে পাথর মেরে হত্যার দাবি তোলা হচ্ছে। আন্দোলনের মুখে আবার সরকার প্রচলিত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বহুবার এই আইনে পরিবর্তন এনেও ধর্ষণ কমানো যায় নি। 

বাংলাদেশে বিচার জটিলতা আছে একথা ঠিক। ২০১৮ সালের একটি জরিপে বলা হচ্ছে মোট ধর্ষণ মামলার ৩% এর কখনো সাজা হয় না। বাকি ৯৭% এর ক্ষেত্রে হয় আসামিরা গ্রেফতার হলেও জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় কিংবা মামলা খালাস হয়ে যায়। আর মামলা জট, মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া, ব্যয়বহুল মামলা চালানোর অপারগতাসহ জেরার মুখে হেনস্তা ইত্যাদির কারণে মামলা বিমুখতা তো আছেই। কিন্তু বিচারহীনতা বা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকাটাই যদি মূল সমস্যা হত তাহলে কিন্তু যেসব দেশে আইনের প্রয়োগ আছে সেখানে ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম। যেমন: নর্থ কোরিয়া। সেখানে রেপের শাস্তি Death by Firing Squad। সেখানেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর রিপোর্ট অনুসারে ৯০% মেয়ে কখনো না কখনো সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হয়। চীনের বিচার বিভাগ অনেক দ্রুত কাজ করে। বেশিরভাগ ধর্ষণের মামলা ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। মৃত্যুদণ্ড কিংবা আজীবনের জন্য নপুংসক করে দেয়া হয় ধর্ষককে। কিন্তু সেখানেও দৈনিক ৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যদিও বেসরকারি তথ্যমতে সেটা প্রকৃত সংখ্যার মাত্র ১০% । বাংলাদেশ যে বৃটেনের বিচার ব্যাবস্থাকে আদর্শ ধরে অনুসরণ করে, সেখানেও ৮১% মহিলা যৌন হয়রানির শিকার ।  

তারপরও সমস্যার গোঁড়ায় না যেয়ে কেবল দ্রুত কঠোর আইন বাস্তবায়নের ব্যর্থ সমাধানকেই বার বার সামনে আনা হয়। যেন আর কিছু করার নাই। তবে এটা ঠিক ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় আসলেও কিছু করার নেই। কারণ সমস্যার গোঁড়াতে হাত দিলে গেলে দেখা যাবে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য এই ব্যাবস্থাই দায়ী, এই ব্যবস্থাই ধর্ষণ রোগের কারণ ও পালনকারী। তাই কোনভাবে এই ব্যাবস্থার অধীনে থেকে এই সমস্যর সমাধান করা যাবে না।  

কেন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা ধর্ষণ নামক মহামারীর জন্মদাতা ও পালনকারি?

১) স্রষ্টা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ এই ব্যবস্থায় কোন সমাজ ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ সমাজে নারী-পুরুষ কিভাবে মিলামিশা করবে বা কার দায়িত্ব কর্তব্য কী হওয়া উচিত ইত্যাদি। এটা তারা ছেড়ে দিয়েছে তাদের ব্যাক্তিগত খেয়াল খুশির উপর। যে যার মত Freedom practice করবে সর্বোচ্চ ইন্দ্রিয় সুখ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে, আর এই ভিত্তিতেই নিজেদের করণীয় তারা নিজেরা ঠিক করে নিবে। শুধু শর্ত দিয়েছে যেন একজনের স্বাধীনতা চর্চা অন্যজনের স্বাধীনটাকে বাধাগ্রস্থ না করে। একটা রাস্তাতেও যদি কোন যান চলাচল ব্যবস্থা না থাকে, যে যার মত গাড়ি চালায়, সেই রাস্তা  চলাচল অনুপযোগী ও দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে পরবে, আর এখানে পুরো সমাজের কথা বলা হয়েছে। ফলে পুরো সমাজ আজ বিশৃঙ্খলাময়, সাধারনভাবে দুর্বলদের জন্য বিশেভাবে নারী ও শিশুদের জন্য আজ তা জঙ্গলে পরিনত হয়েছে যেখানে জান-মাল-সম্মান বাঁচাতে তাদের প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে আর ধাক্কা খেতে হচ্ছে। নারী পুরুষের সম্পর্কের ভিত্তি “স্বাধীনতা” ঘোষণা দিয়ে এই ব্যবস্থা অনেকগুলো সমস্যার জন্ম দেয়:

প্রথমতঃ স্বাধীনতার কোন সংজ্ঞা নাই। তাই যে যার যার মত তাঁর স্বাধীনতা ডিফাইন করবে। একটা ছেলে বা একটা মেয়ে সমাজে কী করবে তারা তা নিজেদের সুবিধা বা খেয়াল খুশি মত ঠিক করবে। কোন পুরুষ তাঁর পুরুষত্ব হিংস্রতার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে ঠিক করতে পারে আর মেয়েরা Bold and Beautiful হওয়াকে সমাধান ভাবতে পারে। যার যার জায়গায় সে সে ঠিক। আমরা দেখতে পাই পরস্পরকে প্রমান করার চেষ্টায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপুর্ণ এক অসহিষ্ণু সমাজ যেখানে পারস্পরিক ঘৃণা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অসম্মান আর সন্দেহ সবার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। 

দ্বিতীয়তঃ আছে পুঁজিপতিদের দৌরাত্ম। তারা মিডিয়া ও তাদের নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে বিশেষ করে কম বয়সী নারীদের স্বাধীনতার মুলা ঝুলিয়ে কৌশলে তাদের স্বাধীনতা হরণ করে। রুপালি পর্দায় ঝলমলে উপস্থিতির লোভ দেখিয়ে তাদের Beauty Product হিসেবে উপস্থাপন ও ব্যবহার করে। অল্প বয়সি মেয়েরা সহজেই এই ধূর্ত ভণ্ডদের থাবায় চলে আসে আর তারপর বের হতে পারে না। তাদের পরবর্তী অভিজ্ঞতা #metoo আন্দোলন ভাল ভাবেই সামনে নিয়ে এসেছে।  Beauty Industry থেকে ২০২৪ এ Officially ৭১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, এর সাথে  Prostitution ও  Porno Industry থেকে আয় যোগ করলে এক অবিশ্বাস্য উপার্জন সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাই তারা যে অন্যর স্বাধীনতা ভোগের উপকরণে পরিনত হয়েছে তা বুঝতে বুঝতেও অনেক দেরি হয়ে যায়।

তৃতীয়তঃ তাছাড়া ইন্দ্রিয় সুখ বিশেষ করে যৌনতাকে এই ব্যবস্থা এমনভাবে উপস্থাপন করে যে খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসা না হলেও চলবে কিন্তু নারী পুরুষের অবাধ মেলা মেশা আর যথেচ্ছা যৌনাচারের স্বাধীনতা ছাড়া চলবে না। সব ধরনের মিডিয়াতে বিবাহ পূর্ব আর বিবাহ বহির্ভূত ছাড়াও যেকোন লিঙ্গের যে কোন উপকরণের সব ধরনের শারীরিক সম্পর্ককে এমন Creative way  তে সবার সামনে উপস্থাপন করে যে Live Together এখন সামাজিক প্রথায় পরিণত হবার পথে। চলছে Pornography এমনকি Child পর্ণ কেন্দ্রিক রমরমা ব্যাবসা। এসব বিকৃত যৌনাচারের সহজ শিকার হয় শিশু, প্রতিবন্ধি, দুর্বল বা হাতের কাছে থাকা নারী।

২) এই ব্যবস্থা একটা অবাস্তব শর্ত দিয়েছে যে অন্যর স্বাধীনতা নষ্ট না করে যথেচ্ছা স্বাধীনতা ভোগ কর, রাষ্ট্র বাধা দিবে না। তারমানে সীমাবদ্ধ স্বাধীনতা, যা সবসময় মানুষ ছাড়িয়ে যাবার সুযোগ খুঁজবে, আইন কে ফাঁকি দিয়ে বা আইনের সুযোগ নিয়ে। অবাক হবার কিছু নাই যে মোট ধর্ষিতদের মধ্য একটা বড় অংশ তাদের আপনজন অর্থাৎ বাবা, শ্বশুর, মামা, চাচা, ভাই বা স্বামী দ্বারা আক্রান্ত। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ করা কি সহজ কথা?

তাছাড়া দিন শেষে কখনই ২ ব্যাক্তির স্বাধীনতা এক সাথে সংরক্ষিত হয় না, শুধু শক্তিশালী ব্যক্তির স্বাধীনটাই নিশ্চিত হয়। আমরা জানি Donald Trump or Bill Clinton or Bill gates দের  স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয়েছে, Monica দের নয়, যতোই তারা আইনি লড়াই চালাক।

ফলে দিনশেষে ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যবস্থার অবাধ স্বাধীনতা নামক ঘোড়ার ডিমের চর্চার ভুক্তভোগী আসলে কারা হয়? যারা বড়লোক, প্রতিষ্ঠিত নারী বা পুরুষ তারা কিন্তু ভুক্তভোগী হয় না বরং প্রান্তিক নারী-শিশু-পুরুষ সহ তুলনামুলক দুর্বল মানব অংশ। সুযোগ সন্ধানিরা ওঁত পেতে থাকে শিকারের আশায়। ফলে এই ব্যবস্থায় ধর্ষণ একটি স্বাভাবিক পরিনতি। তাই এই ব্যবস্থার অধীনে কোন কঠোর আইন বা বিচার তা যদি ইসলাম থেকেও নেয়া হয়, তবু ধর্ষণ কোন ভাবে কমবে না, কমে নাই বরং বাড়ছে এবং বাড়বে। ধর্ষণ মহামারীর উৎস ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যবস্থা থেকে যারা সমাধান বের করার চেষ্টা করছে তারা আসলে সত্যিকার ভাবে সমাধান চাইছে না, বরং মানুষের অসহায়ত্ব আর বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে তাদের অজ্ঞতাকে পূঁজি করে এই ব্যর্থ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছে।

সমাধান কী?

শুধুমাত্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সামগ্রিক বাস্তবায়ন ধর্ষণের এই মহোৎসব বন্ধ করতে পারে। ইসলামের জীবন ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা ইউনিক সিস্টেম, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা আল্লাহ থেকে কোন কিছু নিবেই না সেখানে ইসলাম আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ছাড়া আর কারও কাছ থেকে কিছু নিবে না। “আর আমি আপনাকে দ্বীনের বিধিবিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, অতএব আপনি তা অনুসরণ করুন এবং জ্ঞানহীনদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না” (সূরা আল-জাসিয়া, ১৮)। আর এই জীবনব্যবস্থা থেকে উঠে এসেছে ইসলামের সামাজিক ব্যবস্থা বা সোশ্যাল সিস্টেম। শুধুমাত্র এই ব্যবস্থাই নির্দেশ করেছে একটা সমাজে নারী পুরুষ কিভাবে চলবে, তাদের সম্পর্কে সীমারেখা গুলো কী রকম হবে, তাদের দায়িত্ব কর্তব্য, বিয়ে, তালাক অভিভাবক হিসেবে করণীয়সহ যাবতীয় নিয়ম কানুন যা তাদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আক্রমণাত্মক সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতামূলক সহবস্থান নিশ্চিত করে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কিভাবে শুধু মুসলিম নারী নয় বিশ্বজুড়ে সকল নারী-পুরুষ-শিশু আর দুর্বলকে নিরাপদ করবে তা বোঝার জন্য এই ব্যবস্থার কিছু দিক সংক্ষেপে তুলে ধরছি:  

১) ইসলামে  নারী মানেই সম্মান; একটা পুঁজিবাদী সমাজ, যেখানে নারীকে তাঁর সৌন্দর্য, সম্পদ, Family Status আর উপার্জনের ভিত্তিতে যাচাই করা হয়, সেখানে ইসলাম মুসলিম-অমুসলিম, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সুন্দর-অসুন্দর, ধনী-দরিদ্র, কর্মজীবি বা গৃহিণী প্রতিটি নারীর সম্মান ঘোষণা করেছে।  শুধুমাত্র একজন সম্মানিত ব্যক্তি নারীদের সম্মানের সাথে আচরণ করে, আর কেবল অজ্ঞ ও নীচ ব্যক্তি তাদের অবমাননা করে” ( আবু দাউদ)। কেউ তাদের ছোট করে কথা বলতে পারবে না ইভটিজিং তো অনেক পরের কথা। তবে এর মাঝে যার তাকওয়া বা আল্লাহ্‌ভীতি অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ নিষেধ যথাযথ ভাবে মেনে চলার প্রবণতা যে নারীর মধ্যে যত বেশি সে তত সম্মানিত। বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সকল কিছু মূল্যবান কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে একজন তাকওয়াবান নারী। স্বয়ং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই Certificate দিয়েছেন।

২) এই ব্যবস্থায় ইসলাম নারী বা পুরুষ কাউকেই স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেয়নি। আল্লাহ্‌ নারী-পুরুষ উভয়ের স্রষ্টা আর তিনি প্রত্যেকের জন্য সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, আচরন, এমনকি দৃষ্টি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হবে। যেমন, ঘরের বাইরে প্রত্যেক নারীকে আল্লাহ্‌ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক পরতে হবে। পাশাপাশি পুরুষদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে আদেশ করেছেন। “মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সংযত রাখে” (সূরা আন-নূর, ৩০)।  আলি (রা) বলেছেন, পরনারীর প্রতি প্রথম দৃষ্টি ভুলবশত হতে পারে কিন্তু দ্বিতীয়টি শয়তানের পক্ষ থেকে। এই দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে যে কোন নারী আজকে সাক্ষ্য দিবে এমনকি পর্দা করার পরেও পুরুষদের লালসা পূর্ণ দৃষ্টি কিভাবে তাদের অপমান করে।

৩) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইসলামি সমাজে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা রা হতে বর্ণিত: রাসুল (সা) বলেছন, “পুরুষদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট প্রথম সারি আর সর্বনিকৃষ্ট শেষের সারি আর নারীদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট শেষের সারি আর সর্ব নিকৃষ্ট ১ম সারি।” এই দলিল থেকে বের হয়ে আসে পুরুষদের সারি নারীদের থেকে পৃথক ও দূরবর্তী হবে। এর ভিত্তিতে সমাজে নারী-পুরুষের পরিপূর্ণ পৃথকীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ইসলাম কিন্তু মেয়েদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধা দেয়নি আবার বাধ্যতামুলকও করেনি বরং রুজি-রুটি উপার্জন ছেলেদের জন্য ফরয আর মেয়ের জন্য ঐচ্ছিক করেছে কারণ তাকে পরিবার দেখাশোনার কষ্টসাধ্য কাজ সামলাতে হয়।প্রয়োজনীয় কারণে পবালিক প্লেসে নারী-পুরুষের কথাবার্তা হতেই পারে,  যেমন কেনা-কাটা, বানিজ্য, চাকুরি, লেখাপড়া, গবেষণা ইত্যাদি প্রয়োজনে তারা কথা বলবে এবং সহযোগিতা করবে কিন্তু বিয়ে-শাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান, যানবাহনসহ যেখানে প্রয়োজন সেখানে তাদের পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।   

আবার ঘরের ভিতর বা ব্যক্তিগত স্থানে গায়ের মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ) এর সামনে নিজেদের সৌন্দর্য এবং কণ্ঠস্বরের কোমলতা প্রকাশ না করার আদেশ দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে এমনকি একা থাকার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। “কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে, কারণ তখন তাদের সঙ্গে তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান” (তিরমিজি ২১৬৫)। তাই যত তাকওয়াবান হিজাবি হোক না কেন, কিংবা যত বড় হুজুর আর মাদ্রাসার প্রিন্সিপালই হোক না কেন, কোন মেয়ের সাথে একাকী থাকা  নিষিদ্ধের মাধ্যমে  ছেলেদের  মিনিমাম Temptation তৈরির পথও আল্লাহ বন্ধ করে দিয়েছে ।   

তবে অমুসলিম নর-নারী Public place এ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পোশাক ও মেলামেশা করলেও তারা তাদের নিজ গৃহ বা ব্যক্তিগত জায়গায় নিজেদের মত পোশাক বা খাওয়া-দাওয়া বা মেলামেশায় তাদের মত নিয়ম মানতে পারে, সে স্বাধীনতা ইসলাম তাদের দিয়েছে।

৪)  এই সমাজে যেভাবে যিনা বা বিয়ে হীন যৌন সম্পর্ক কে সহজ আর বিয়েকে কঠিন করা মাধ্যমে মানুষের যৌন চাহিদা পুরণকে একটি বিকৃতির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, ইসলাম ঠিক তার উল্টো। যিনা কে আল্লাহ্‌ হারাম করেছে “আর ব্যভিচারের নিকটেও যেও না, নিশ্চয়ই এটি একটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ” (সূরা বনী ইসরাইল: ৩২)। ইসলামে বিয়েকে উৎসাহী করা হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন, “বিয়ে আমার সুন্নাহর অংশ। যে আমার সুন্নাহ অনুসরন করে না তাঁর সাথে আমার কিছু নাই। বিয়ে কর, কারণ আমি অন্য জাতির সামনে তোমাদের সংখ্যা নিয়ে গর্বিত হতে চাই” ইবনে মাজাহ। বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য শারিরিক সম্পর্ক নয় বরং নেক সন্তানে দুনিয়া আবাদ করা। ইসলামী রাষ্ট্র দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে যেন দ্রুত পরিবার গঠনে কাউকে বেগ পেতে না হয়। এভাবে আল্লাহ্‌ প্রয়োজন দিয়েছেন এবং সুন্দরভাবে টা পুরণের উপায় করে দিয়েছেন যা মানুষের Nature এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।  

৫) আজকে আমরা শুধু রেপ না, নারীদের সাথে ভয়াবহ Violence দেখতে পাই নিজের মাকে আঘাত করা, স্ত্রীকে যৌতুকের দায়ে মেরে ফেলা, কন্যা সন্তান কে এই যুগে এসেও বোঝা ভাবা হয়। অপরদিকে ইসলামী সমাজে স্ত্রী-মা—বোন-সন্তান – সকল পর্যায়ে নারীরা শুধু সম্মানের নয়, অত্যন্ত আদরের। রাসুল সা বলছেন “যে ব্যক্তির একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি, তাকে অপমান করেনি এবং তার পুত্রসন্তানের তুলনায় তাকে অবহেলা করেনি, আল্লাহ তাকে সেই কন্যার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (Ahmad)। এ প্রিন্সিপাল থেকে একটা সমাজে ও পরিবারে মেয়েরা সব চাইতে আদরের এবং ভালোবাসার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদেরকে জান্নাতের টিকেট বিবেচনা করে তাকে তাঁর বাবা-ভাই-মামা-চাচা সকলে আগলিয়ে রাখে এবং দায়িত্বর সাথে সৎ পাত্রস্থ করে। যখন তার বিয়ে হয়ে যায়, তখন হাসবেন্ড তাকে  সম্মান ও ভালবাসার সাথে আগলিয়ে রাখে কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো।” (সূরা আন-নিসা: ১৯)। আর মায়ের পায়ের নিচে জান্নাতের কথা তো সবাই জানি। এভাবে ইসলামী সমাজ নারীকে আদরে-সম্মানে সব সময় সিক্ত রাখে।

৬) মুমিন নারী ও পুরুষ আল্লাহর ভয়ে, আখিরাতে জবাব্দিহিতার চিন্তায় যা তাদের জান্নাত জাহান্নামের নির্ধারণকারি এই সীমা গুলো নিজেরাই মেনে চলবে এবং অন্যরা যেন মানে সে ব্যাপারে সামাজিক ভাবে সচেতন থাকবে। ফলে তাকওয়া ফ্রন্টলাইন ডিফেন্স হিসেবে কাজ করে। আর অমুসলিমরা দুনিয়াতে ভাল ও নিরাপদ থাকার আশায় এই বিধান গুলো মেনে চলবে। 

৭) তাই বলে নারীর নিরাপত্তাকে শুধু তাকওয়ার হাতে ছেড়ে দেননি বরং শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত করেছেন। পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাঁর অবস্থান সুক্ষাতিসুক্ষভাবে জানিয়ে দেয়ার পর, অপরাধের সকল দরজা বন্ধ করার পর কোন নারীপুরুষ কেউ এই সীমা রেখা অতিক্রম করলে মাত্রা অনুযায়ী আল্লাহ্‌ তায়ালা শাস্তির বিধান দিয়েছে যা খিলাফাহ রাষ্ট্র প্রয়োগ করবে। যেমন: যিনার শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত বা পাথর মেরে হত্যা, ধর্ষণের মাত্রা ভেদে বিভিন্ন শাস্তি, তাদের ভরণপোষণ, সম্পদের অধিকার লঙ্ঘিত হলে শাস্তি এমনকি নারীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন গুজব ছড়ালে এমনকি মুখের কথায় তাঁর সম্মান নষ্ট করলে উৎস নিশ্চিত করে তাকে জনসম্মুখে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হবে। অপরাধি ব্যক্তি যে পদমর্যাদার বা পরিবারের হোক না কেন, জনসম্মুখে তাঁর শাস্তি নিশ্চিত করা হলে চুনোপুঁটিরা এমনিতেই সোজা হয়ে যাবে।

ইসলামের এই ব্যবস্থা শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা নয়। ১৯২৪ সালে খিলাফাহ ধ্বংস হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা নারীদের সুরক্ষা দিয়ে এসেছে। রাসুল (সা) একজন নারীর অসম্মানের জন্য পুরো বানু কাইনুকা গোত্রকে নির্বাসনে পাঠায়, মু’তাসিম বিল্লাহ একজন নারীকে উদ্ধার করতে আমুরিয়া দখল করে নেয়, এমনকি ১৯২০ সালে খিলাফাতের দুর্বলতম অবস্থায় তুরস্কের একজন ইমাম দখলদার ফরাসি বাহিনির এক সৈন্যকে গুলি করে হত্যা একজন নারীকে অসম্মান করার প্রতিবাদে যা মারাশের যুদ্ধ শুরু করে বলে অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন। ১৩০০ বছর জুড়ে ১ জন নারীর সম্মানকে ইসলাম যেভাবে রক্ষা করে এসেছে কেন সেই ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আমাদের সামনে নানা জোড়াতালি দিয়ে ঘুরে ফিরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়েই ধর্ষণ সমস্যার সমাধানের প্রতি আহ্বান করা হয়? আজকে প্রতি মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার নারী যে চরম অসম্মান ও নিরাপত্তাহিনতার মধ্য দিয়ে অসহায়ের মত জীবন পার করছে তাঁর দাওয়াই আল্লাহ্‌ তায়ালা মুসলমানদের উপর নাযিল করেছেন। তাই আমরা যদি সত্যি এই ধর্ষণ মহামারি থেকে মানবজাতিকে বের করে আনতে চাই তাহলে আমাদের এখন উচিত একই ভুল দাওয়াই বার বার না দিয়ে সমস্যার সমাধানে বিকল্প বিশ্ব ব্যবস্থা ইসলামের সামগ্রিক প্রয়োগে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যারা ইসলামকে ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ করে নানা জোড়াতালি দিয়ে ঘুরে ফিরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়েই ধর্ষণ সমস্যার সমাধান ফেরি করেন তাদের জন্য একটি আয়াতই যথেষ্ট।

তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে (বাকারা: ৮৫)।

Leave a Reply