সরকারের দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ টের পাচ্ছে। কার্যত ঢাকা এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে এবং সারাদেশে তা আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতি ১ মিনিটে গড়ে ১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামালাতে হিমশিম খাচ্ছে। আক্রান্তদের স্বজনরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ জনগণ পরিবারের সদস্যদের বিশেষত শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, কারণ একদিকে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে মৃতের সংখ্যাও। এবার বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এমন আগাম সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও জনগণের প্রতি উদাসীন এই সরকার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার নিধন ও বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে গুরুত্ব দেয়নি। বরং, মশার ঘনত্ব ১০গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জটিল আকার ধারণ করা বর্তমান এই পরিস্থিতির পেছনে সরকারের শুধু দায়িত্বহীনতাই নয় দুর্নীতিও প্রতীয়মান হয়েছে, আইসিডিডিআরবি এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে যে, মশা নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে তা অকার্যকর, এতে এডিস মশা মরে না। ২২ মে, গবেষণা রিপোর্টটি প্রাপ্তির পরও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই ওষুধ ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে! এরপরও নির্লজ্জ মন্ত্রী-মেয়ররা নিজেদের ব্যর্থতা ঠাকতে অকার্যকর ওষুধের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, কখনো মশাকে দোষারোপ করে বলেছেন মশা অনেক শক্তিশালী তাই ওষুধে কাজ হচ্ছে না, কখনোবা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন না বলে রোগীদের দুষেছেন, এমনকি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাঙ্গ করে বলেছেন, এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা রোহিঙ্গাদের মতো, তাই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না! এছাড়াও, দেশের এই দুর্যোগময় মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ বেড়াচ্ছেন, সড়কমন্ত্রী সিনেমার মহরতে যোগ দিয়ে মানুষের কষ্টের সাথে তামাশা করছেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মন্ত্রনালয়ের সবার ছুটি বাতিল করে পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়া ঘুরতে গেছেন।
মানুষের সঙ্কটাপন্ন অবস্থা নিয়ে এমন নিষ্ঠুর উদাসীনতার পর নির্লজ্জ এই শাসকগোষ্ঠী এখন দায় এড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে গুজবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। অর্থাৎ সরকারের ব্যর্থতার যেকোন খবরকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দেয়া এবং গুজবকারী হিসেবে জনগণের প্রতিবাদী কণ্ঠকে রোধ করাই এর উদ্দেশ্য, যেরকম প্রেসিডেণ্ট ট্রাম্প তার যেকোনো মিথ্যা বা ব্যর্থতার খবর প্রকাশ হলেই তাকে “fake news” বলে উড়িয়ে দিতে চায়। সংবাদ মাধ্যমে যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও প্রাণহানীর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশিত হওয়া শুরু করলো তখন দক্ষিণের মেয়র সেটিকে গুজব আখ্যা দিয়ে হুমকি দিয়ে বললেন, ছেলেধরা ও সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা। সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞভাবে এই ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করবে, কঠিন জবাব দিবে।
জনগণের কষ্ট ও যন্ত্রণার সাথে তামাশাকারী এই মন্ত্রী বা মেয়ররা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নামক বিষবৃক্ষের বিষফল, যা এদের লালন-পালন এবং রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে। এই শাসনব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়, অতঃপর সবসময় আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে, ফলে দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য কারো নিকট জবাবদিহি করতে হয়না, দুঃশাসন বিস্তার লাভ করে। অতঃপর জনগণ যখন তাদের দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখন তারা জনগণের বিরুদ্ধে নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয়। তাই এই দুর্বৃত্ত শাসকদের প্রত্যাখ্যান করলেই চলবে না বরং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকেও প্রত্যাখ্যান করতে হবে, আল্লাহ্ প্রদত্ত রহমতপূর্ণ শাসনব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণ যে উন্নত স্বাস্থ্যসেবাসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছে ইতিহাস তার সাক্ষী। খিলাফতের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে জনগণ এই ডেঙ্গু সমস্যার মত যেকোনো বালা-মুসিবত হতে পরিত্রাণ পাবে, কারণ খলিফা তার উপর অর্পিত ফরয হিসেবে জনগণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবেন এবং এক্ষেত্রে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র সন্তুষ্টি এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাঁর জবাবদিহিতার ভয়ে সর্বদা বিচলিত থাকবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন: “যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন একটি বিষয়ের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত, অথচ তাদের চাহিদা, দারিদ্রতা ও প্রয়োজন পূরণ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’ও ঐ ব্যক্তির চাহিদা, দারিদ্রতা ও প্রয়োজন হতে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।” [আবু দাউদ]
স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে খিলাফত রাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে: “রাষ্ট্র সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুবিধা দেবে। তবে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত চিকিৎসা অনুশীলন, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ কিংবা ঔষধ বিক্রয় করাকে বাধা দেবে না।” ইসলাম চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবাকে একটি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং মানুষের একটি অন্যতম মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করে। তাই, খিলাফত রাষ্ট্র ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রত্যেককে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্যখাতে গবেষণার মান ও পরিধি বাড়াতে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে। “…নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রত্যেকটি রোগের জন্য তৈরি করেছেন চিকিৎসা এবং ঔষধ, কেবলমাত্র একটি রোগ ছাড়া (বার্ধক্য)” [তিরমিজি]। খিলাফত রাষ্ট্রের বিজ্ঞানীগণ নতুন নতুন ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার ও উন্নয়নে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হবেন। ফলে ডেঙ্গু কিংবা ইবোলার মত ভাইরাসের ওষুধ তৈরিতে মুনাফার বিষয়টি মাথায় না নিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গৃহিত হবে। তাছাড়া মহামারীর মত ক্ষেত্রে ত্বরিত ব্যবস্থা গৃহিত হবে যেভাবে খলীফা উমর (রা)-এর সময়ে সিরিয়াতে প্লেগের মহামারীর ক্ষেত্রে করা হয়েছিল, “যখন কোন অঞ্চলে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাবে সেখান থেকে কেউ অবস্থান পরিবর্তন করবে না এবং বাইরে থেকে কেউ সেখানে প্রবেশ করবে না”। অতএব খিলাফত রাষ্ট্র কোন স্থানে মহামারী দেখা দিলে সেই স্থানকে বিচ্ছিন্ন রাখবে এবং পাশাপাশি ঐ স্থানে যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিবে। এছাড়াও, রাস্তা-ঘাট, ঝোপ-ঝাড় পরিস্কার রাখার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিবে ইসলামী রাষ্ট্র। আমরা সীরাতে দেখতে পাই, মদীনায় যাবার পরপরই বেশ কিছু সাহাবী এক ধরনের বিশেষ জ্বরে আক্রান্ত্র হন, আয়েশা (রা) বর্ণনা অনুযায়ী মদীনার নিম্নভুমিতে একধরনের পঁচা দুর্ঘন্ধযুক্ত পানির উপস্থিতি ছিল অর্থাৎ, ধারনা করা হচ্ছিল এ থেকে রোপের উপদ্রব। পরবর্তীতে রাসূল (সা) মদীনাকে (মক্কার মতো) হারাম ঘোষনা করেন অর্থাৎ, মদীনাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে গড়ে তুলেন।
হে মুসলিমগণ! এই দুর্বৃত্ত শাসকগোষ্ঠী ও শাসনব্যবস্থার বোঝা আর বহন করবেন না, তাদের দায়িত্বহীনতার নির্মম শিকার আর হবেন না। তাদের চরম দুঃশাসনের ফলে সৃষ্ট গজব কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। মন্ত্রী, সচীবের স্ত্রী, পুলিশ, সরকারী কর্মকর্তা, অভিনেতা, ডাক্তার, বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রসহ সবাই আজ আক্রান্ত। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন: “যারা কোন অত্যাচার হতে দেখেও হাত গুটিয়ে রাখে আল্লাহ্ তাদের সকলকে শান্তির সম্মুখীন করবেন।” রাসূলুল্লাহ্ (সা) আরো বলেছেন: “যখন কোন জাতি পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং কেউই তাদের প্রতিরোধ করে না তখন আল্লাহ্ গোটা জাতির উপর শাস্তি নাযিল করেন যা তাদের সকলকে ছেয়ে ফেলে।” [আবু দাউদ, ৩৭৭৫]।
জাতির এই সঙ্কটকালীন মুহুর্তে আমাদের নীরবতা একটি চরম গুনাহ্। সুতরাং, এই দুঃশাসন হতে মুক্তির লক্ষ্যে হাসিনা সরকার ও তার ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে রহমতপূর্ণ খিলাফতে রাশিদাহ্ শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ুন। আল্লাহ্ আমাদেরকে সেই পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন যেই পরিস্থিতির ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ্’র রাসূল (সা) আমাদেরকে সাবধান করে গেছেন: “সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সত্য ও ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতিরোধ করবে। তা না করলে খুব শীঘ্রই আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন। তখন তোমরা দোয়া করবে কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না।”
ইন শা আল্লাহ, খুব শীঘ্রই আমরা আল্লাহর পক্ষ হতে বিজয় প্রত্যক্ষ করবো এবং ঈমান ও তাকওয়ার সেই আকাংক্ষিত পরিবেশ ফিরে পাবো। আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
“আর যদি সে জনপথের অধিবাসীরা ঈমান আনতো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করতো, তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমীনের নেয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম…” [সূরা আল-আরাফ : ৯৬]