বাস্তবতা (reality) ও চিন্তা (concepts) প্রবৃত্তিকে তাড়িত করে

প্রবৃত্তি জৈবিক চাহিদা থেকে ভিন্ন যদিও উভয়টি মানবজীবনের অপরিহার্য জীবনীশক্তি। জৈবিক চাহিদাকে অনিবার্যভাবে পূরণ করতে হয়, তা পূরণ না হলে মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু প্রবৃত্তির চাহিদার ব্যাপারটি ভিন্ন, এটি স্রেফ তৃপ্ত হতে চায়। এটি তৃপ্ত না হলে মানুষ অস্থিরতায় ভোগে, কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকে, মৃত্যুবরন করে না। মানুষ যদি খাদ্য গ্রহন না করে বা প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া না দেয়, সে মারা যাবে; কিন্তু যদি প্রবৃত্তির চাহিদা তৃপ্ত না করে তার মৃত্যু হবে না। যদি সে কোনো নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক না করে কিংবা যদি সে উপাসনা না করে সে মারা যাবে না, কারণ প্রবৃত্তির চাহিদা অনিবার্যভাবে পূরণ হতে চায় না। উপরন্তু, জৈবিক চাহিদা পূরণের তাড়না মানুষ তার নিজের মধ্য থেকেই অনুভব করে এবং এটা বাইরের উপাদান দ্বারা আলোড়িত হয়। এটা প্রবৃত্তি থেকে ভিন্ন, কারণ প্রবৃত্তি কখনোই অভ্যন্তরীনভাবে আলোড়িত হয় না এবং বাহ্যিক আলোড়ন ছাড়া এটি কখনোই তৃপ্ত হবার অনুভুতি তৈরি করে না। যদি বাহ্যিক কোনো কিছু একে তাড়িত করে, তবে তা আলোড়িত হয়, এবং তৃপ্ত হবার অনুভুতি বজায় থাকে।

প্রবৃত্তিকে উস্কে দেবার জন্য যদি বাহ্যিক কোনো কিছু না থাকে, তবে এটি সুপ্ত থাকে এবং প্রবৃত্তি পূরণের কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে না। সুতরাং, ক্ষুধা মানুষের মাঝে স্বাভাবিকভাবে ভেতর থেকে আসে এবং এটি বিদ্যমান থাকার জন্য কোনো বাহ্যিক বাস্তবতা (external motive) প্রয়োজন হয় না। অতঃপর জৈবিক চাহিদা পূরণের আকাঙ্ক্ষা মানুষ নিজ থেকেই অনুভব করে, যদিওবা বাহ্যিকভাবে এটি করার জন্য কিছু নেই। তবে, বাহ্যিক উপাদান ক্ষুধাকে উস্কে দিতে পারে। সুতরাং, মজাদার খাবার আমাদের ক্ষুধাকে উস্কে দিতে পারে বা কোনো মজাদার খাবারের আলাপ যদি আমরা করি তাও ক্ষুধাকে উস্কে দিতে পারে। কিন্তু যৌন আকাঙ্ক্ষা নিজ থেকে তাড়িত হয় না, বরং একে উস্কে দেবার জন্য বাহ্যিক কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়। তাই, প্রবৃত্তির যে অনুভুতি তৃপ্ত হতে চায় তা মোটেও মানুষের নিজের মধ্য হতে উদ্ভুত হয় না; আর মানুষ তা অনুভুব করে না যতক্ষন কোনো বাহ্যিক উপাদান তা তাড়িত করে। সুতরাং, যৌন সম্পর্কের জন্য কোনো আকাংক্ষা থাকবে না, কিংবা কোনো অনুভুতি থাকবে না যতক্ষন না মানুষ কোনো ভৌত বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করবে যা এই অনুভুতির সূচনা করবে; অথবা কোনো ব্যক্তি তার সম্মুখে কিছু বাস্তবতা আলোচনা করতে পারে যা এই অনুভুতিকে উস্কে দিতে পারে; অথবা কোনো বোধ তার মাথায় আসতে পারে যা তার মাঝে তাড়িত করবার জন্য কিছু ধারণার জন্ম দিতে পারে। সুতরাং, যতক্ষন না কোনো ভৌত বাস্তবতা কিংবা চিন্তা থাকছে, ততক্ষন পর্যন্ত এই অনুভুতি তাড়িত হবে না।

তাই বলা যায়, শুধুমাত্র প্রবৃত্তির উপস্থিতি মানুষকে উদ্বিগ্ন করে না। বরং অনুভুতির যে তাড়না তৃপ্ত হতে চায় তা উদ্বিগ্নের কারণ হয়ে দাড়ায় যখন তা তৃপ্ত হয় না। যদি তৃপ্তি পূরণের কোনো উস্কে দেয়া অনুভুতি না থাকে, তাহলে কখনোই কোনো উদ্বেগ থাকবে না। তাই যৌন চাহিদা পূরণের অভাব থাকলে ব্যক্তির কোনো উদ্বেগের বিষয় নেই, এবং একে দমন করারও কোনো প্রয়োজন নেই যদি একে আলোড়িত করবার জন্য কোনো বাস্তবতা না থাকে। তাই জনগণের মাঝে যৌন চিন্তার দিকে উদ্রেক ঘটায় করে এমন বইপত্র, নাটক-সিনেমার প্রচার–প্রসার এক ধরনের নির্বুদ্ধিতা ও অদুরদর্শিতা। একইভাবে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার বাস্তব পরিবেশ বজায় রাখা যা প্রজনন প্রবৃত্তিকে তাড়িত করে একধরনের নির্বুদ্ধিতা ও অদূরদর্শী। কারণ এর অর্থ দাড়ায় যে বাস্তবতা একে উস্কে দেয় তা তৈরি করা, এবং উদ্বেগ তৈরি করা যতক্ষন না তা প্রশমিত হয়, এবং পরবর্তীতে আবার সেই বাস্তবতা তৈরি করা যা একে পুনরায় উস্কে দিবে, সুতরাং তা তৃপ্তির জন্য সবসময় তাড়িত হতেই থাকে। এভাবে সে (যৌন তাড়নাকে) প্রশমিত করবার চিন্তায় নিমজ্জিত থাকে কিংবা অতৃপ্ততা জনিত উদ্বিগ্নতায় ভোগে। এটি নিশ্চিতই বুদ্ধিবৃত্তিক অধঃপতন এবং স্থায়ী অস্থিরতা। তাই, নারী-পুরষের অবাধ মেলা–মেশা সমাজের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর, কারণ তা (মানুষের যৌন তাড়নাকে) তৃপ্ত করবার চেষ্টার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং একে প্রশমিত করবার জন্য মস্তিস্ককে ব্যস্ত রাখে কিংবা ব্যক্তিকে (অতৃপ্ততাজনিত) উদ্বিগ্নতায় ক্রমাগত ভোগায়। তাই যৌনতায় পরিপূর্ণ বই, (গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা)-এর ব্যপক প্রসার সমাজের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর।

যৌনতাকে ইতিবাচকভাবে সুসংগঠিত করার জন্য ইসলাম বিয়ে ও বিয়ে সংক্রান্ত সকল বিশদ ব্যবস্থার ধারনা নিয়ে এসেছে। ব্যক্তি ও তার মধ্যকার যাবতীয় সেসব বিষয় যা তার প্রজনন অনুভুতিকে উস্কে দেয় এবং তৃপ্ত হতে দেয় না তা বন্ধ করতে এসেছে, এবং ব্যক্তি তার মধ্যকার যাবতীয় যেসব বিষয় তাকে তার অধিকাংশ সময়ে তার প্রজনন প্রবৃত্তিকে তৃপ্ত করবার কাজের চিন্তায় ব্যস্ত রাখে তা বন্ধ করতে এসেছে। তাই ইসলাম একজন পুরুষের জন্য তার স্ত্রী ব্যতিত অন্য গায়রে মাহরাম নারীর সাথে একান্ত অবস্থান (খালওয়া) কে নিষিদ্ধ করেছে। কেননা এটি প্রজনন প্রবৃত্তিকে তাড়িত করে যা সে তার গ্রহণ করা ব্যবস্থা অনুযায়ী পূরণ করতে পারে না। এটি তার মধ্যে উদ্বেগের কারণ তৈরি করবে, কিংবা সে অশোভনভাবে ব্যবস্থা লংঘন করবে। বিশুদ্ধ হাদীসে (খালওয়ার) নিষেধাজ্ঞা পরিস্কারভাবে এসেছে,

যেখানে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন,

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ

“তোমাদের কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে একান্তে অবস্থান না করে যদি না তার সাথে মাহরাম কেউ থাকে।”

তিনি (সা) আরো বলেছেন,

لاَ يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ بَعْدَ يَوْمِى هَذَا عَلَى مُغِيبَةٍ إِلاَّ وَمَعَهُ رَجُلٌ أَوِ اثْنَانِ

“আজ থেকে কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে গোপনে একা থাকতে পারবে না যদি না তার সাথে একজন পুরুষ বা দুইজন উপস্থিত থাকে।”

অন্য একটি হাদীসে তিনি (সা) ব্যাখা করেছেন, খালওয়ার ক্ষেত্রে শয়তান পুরুষ ও নারীকে প্ররোচিত করে কারণ তখন তৃতীয় জন থাকে শয়তান।

রাসূল (সা) বলেন,

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ

“কোনো পুরুষ নেই যে কোনো নারীর সাথে একাকী থাকলে, শয়তান তাদের তৃতীয়জন হয়।”

সুতরাং, ইসলামের বিধান হচ্ছে যা প্রজনন প্রবৃত্তিকে তাড়িত করে এবং তাদের অনুভুতিকে উস্কে দেয় তা মানুষকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে।

Taken from the Book “Islamic Thought”

Leave a Reply