বাইতুল মাল শব্দটি গঠনের দিক থেকে জটিল ও বহু অর্থবোধক এবং এটি রাষ্ট্রের এমন একটি স্থানকে নির্দেশ করে যেখানে ব্যয়ের পূর্ব পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রাপ্ত সকল রাজস্ব জমা রাখা হয়। এছাড়া, এর দ্বারা এমন একটি কর্তৃপক্ষকেও বোঝানো হয়ে থাকে, যা মুসলিমদের অধিকারকৃত সম্পদসমূহ গ্রহণ ও ব্যয়ের জন্য দায়িত্বশীল।
আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, সেনাবাহিনী, বিচারব্যবস্থা এবং তহবিল ব্যতীত ওয়ালীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হবে। সুতরাং, সমগ্র সেনাবাহিনীর একটি কেন্দ্রীয় বিভাগ থাকবে, যার নেতৃত্বে থাকবে আমীর-উল-জিহাদ।
একইভাবে, বিচারব্যবস্থার জন্যও একটি কেন্দ্রীয় বিভাগ, যাকে বিচারবিভাগ বলা হবে এবং রাষ্ট্রের সকল রাজস্ব বা তহবিল একটি কেন্দ্রীয় বিভাগের অধীনে থাকবে, যাকে বলা হবে বাইতুল মাল।
এ ব্যাপারে অসংখ্য দলিল-প্রমাণ রয়েছে যে, রাসূল (সা) এর সময় বাইতুল মাল সরাসরি তাঁর কিংবা, তিনি (সা) যাকে এর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করতেন তার তত্ত¡াবধানের অধীন ছিল। আল্লাহ্’র রাসূল (সা) ক্ষেত্রবিশেষে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তহবিল তদারকী করতেন, যেখানে এ তহবিল একটি সিন্দুকে জমা রাখা হত। তিনি (সা) সাধারণত নিজে তহবিল গ্রহণ করতেন, এগুলো বন্টন করতেন এবং সঠিক স্থানে সেগুলো ব্যয় করতেন। আবার, কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি (সা) অন্য কাউকে এ তহবিলের দায়িত্বে নিযুক্ত করতেন। রাসূল (সা) কে অনুসরণ করে খোলাফায়ে রাশেদীনরাও (রা) একই কাজ করেছেন; হয় তাঁরা নিজেরা সরাসরি বাইতুল মাল এর দায়িত্ব নিয়েছেন কিংবা, তাঁদের পক্ষ থেকে এ দায়িত্ব পালন করার জন্য অন্য কোন ব্যক্তিকে মনোনীত করেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সা) মসজিদেই বাইতুল মাল-এর তহবিল রাখতেন। আনাসের (রা) সূত্রে আল বুখারী বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আনাস (রা)) বলেছেন:
‘বাহরাইন থেকে আগত কিছু তহবিল নবী (সা) এর নিকট আনা হল। তিনি (সা) বললেন, ‘এগুলো মসজিদে ছড়িয়ে রাখো।’
(সহীহ্ বুখারী, হাদীস নং-৪২১)
তিনি (সা) মাঝে মাঝে এগুলো তাঁর স্ত্রীদের কক্ষে রাখতেন। এ ব্যাপারে আল বুখারী উকবা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উকবা বলেছেন,
‘আমি মদীনাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর পেছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। নামাজের শেষে তিনি সালাম দিয়ে অতি দ্রæত উঠে দাঁড়ালেন। তিনি কাতারবন্দী মুসলিমদের অতিক্রম করে তাঁর স্ত্রীদের ঘরের দিকে ছুটে গেলেন। লোকেরা তাঁর গতিতে অবাক হয়ে গেল। তিনি ফিরে আসলেন এবং দেখলেন লোকেরা তাঁর দ্রæতগতিতে ছুটে চলা দেখে অবাক হয়ে আছে। তিনি বললেন, ‘আমার মনে পড়ল, কিছু স্বর্ণের ধূলা আমাদের জিম্মায় আছে। এগুলো আমাকে পেছন থেকে তাড়া করবে ভেবে ভীত ছিলাম এবং সে কারণে ওগুলোকে বন্টন করার নির্দেশ দিয়ে এলাম।’’ অন্যথায় তিনি (সা) এগুলোকে তাঁর (সা) সিন্দুকে জমা রাখতেন। এ ব্যাপারে উমর (রা) থেকে মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে,
‘সুতরাং আমি তাঁকে (তাঁর স্ত্রীকে) বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা) কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘তিনি তাঁর সিন্দুকের ঘরে।’, আমি রাসূল (সা) এর সিন্দুকের দিকে তাকালাম এবং হঠাৎ করে এক সা’ (ক্ষুদ্র পরিমাণের একক) পরিমাণ বার্লি দেখতে পেলাম এবং ঘরের ফলের রস তৈরীর জন্য এক পাশে একই পরিমাণের কিছু ফল দেখতে পেলাম; আর দেখলাম ঘরের দেয়ালে টাঙানো একখানা চামড়ার টুকরা। তা দেখে আমার দু’চোখ অশ্রæসিক্ত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ‘হে খাত্তাবের পুত্র, কিসে তোমাকে কাঁদালো?’ আমি বললাম, ‘হে রাসূলুল্লাহ্! কেন আমি কাঁদবো না, যখন আমি দেখতে পাচ্ছি এই পাটির দাগ আপনার শরীরে বসে গেছে এবং এই হচ্ছে আপনার সিন্দুক, যেখানে আমি যা দেখলাম এছাড়া আর কিছুই নেই।”
খোলাফায়ে রাশেদীনদের (রা) সময়ে রাষ্ট্রীয় তহবিল রাখার স্থানকে বাইতুল মাল নামে অভিহিত করা হয়। সাহল ইবন আবু হাছমা এবং অন্যান্যদের থেকে সা’দ তার আল তাবাকাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, “আল-শানে আবু বকরের একটি গৃহ ছিল যার জন্য কোন পাহারাদার নিযুক্ত ছিল না। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘কেন আপনি এর জন্য কোন পাহারাদার নিযুক্ত করছেন না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘এর জন্য তালা আছে।’ তিনি এ গৃহ থেকে এর মধ্যে যা রক্ষিত থাকত তা বিতরণ করতেন যে পর্যন্ত না তা খালি হয়ে যেত। যখন তিনি মদিনায় গেলেন, তিনি এটিকে (তহবিল) স্থানান্তরিত করে নিজ গৃহে রাখলেন।”
হিনাদ তার আল জুহদ গ্রন্থে আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, “এক ব্যক্তি উমরের নিকট আসলো এবং বললো, ‘হে আমীর-উল-মু’মিনীন! আমাকে সাহায্য করুন, যেন আমি জিহাদে যেতে পারি।’ উত্তরে উমর বললেন, ‘তার হাত ধর এবং তাকে বাইতুল মাল-এ নিয়ে যাও, যেন সে তার প্রয়োজন মত অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।’ আল-শাফীঈ তার আল-উম্ম গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, যে বর্ণনাকে আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াদিয়্যাহ’র সূত্রে ইবন হাজার সঠিক বলেছেন, তিনি বলেছেন: ‘আবু হুজাইফা’র সালিম নামের এক দাস ছিল, পূর্বে যে আমাদের গোত্রের সালমা বিনত ইয়ার নামের এক নারীর দাস ছিল। অন্ধকার যুগেই সে তাকে মুক্ত করে দিয়েছিল। যখন উক্ত দাস ইয়ামামা’র যুদ্ধে শহীদ হলেন, তখন তার রেখে যাওয়া সম্পদ (উত্তরাধিকার) উমর ইবনুল খাত্তাবের কাছে নিয়ে আসা হল। তখন তিনি ওয়াদিয়্যাহ ইবন খিদমাহ্’কে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন: ‘এটা হল তোমার দাসের উত্তরাধিকার এবং তোমরাই এর অধিক দাবিদার।’ (একথা শুনে) তিনি বললেন: ‘হে আমির-উল-মু’মিনীন! আল্লাহ্ আমাদেরকে এর মুখাপেক্ষী করেননি। আমাদের বংশের নারী তাকে কোন শর্ত ছাড়াই মুক্ত করে দিয়েছে। সুতরাং, আমরা আমাদেরকে এ বিষয়ে অসম্মানিত করতে চাই না।’ অতঃপর, উমর তার (উক্ত দাসের) উত্তরাধিকারের সম্পদ বাইতুল মালে জমা রাখলেন।” এছাড়া, আল বায়হাকী এবং আল দারিমী বর্ণনা করেছেন এবং ইবন হাজিম এটাকে শুদ্ধ করেছেন: “সুফিয়ান ইবন আবদুল্লাহ ইবন রাবিয়্যাহ আল ছাকাফি একটি চামড়ার ব্যাগ কুড়িয়ে পান এবং তা উমর ইবন আল-খাত্তাবের কাছে নিয়ে যান। তিনি বলেন: ‘এক বছরের জন্য ঘোষণা দাও এবং এ সময়ের মধ্যে যদি কোন দাবিদার চিহ্নিত হয়, তাহলে এটি ফিরিয়ে দাও। আর, যদি না পাওয়া যায় তাহলে এটা তোমার।’
এক বছরের মধ্যে এটার কোন দাবিদার আসল না। পরের বছর তার সাথে সাক্ষাৎ কালে তাকে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়া হল। তখন উমর বললেন: “এটা এখন তোমার। কারণ, আল্লাহ্’র রাসূল (সা) আমাদের এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” তিনি (সুফিয়ান ইবন আবদুল্লাহ) বললেন: ‘আমি এটা চাই না।’ তখন ’উমর সেটাকে নিলেন এবং বাইতুল মালে জমা রাখলেন।” এছাড়া, আবদুল্লাহ ইবন আমরু থেকে আল দারিমী বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: “উসমানের শাসনামলে এক ভৃত্য কোন আত্মীয়-স্বজন না রেখেই মৃত্যুবরণ করলো। তিনি তার সম্পদ বাইতুল মাল-এ জমা করার নির্দেশ দিলেন।” আনাস ইবন শিরিন থেকে ইবন আবদ আল-বার তার আল-ইসতিদকার গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, “আলী সে পর্যন্ত সম্পদ বিতরণ করতেন যে পর্যন্ত না বাইতুল মাল শূণ্য হয়ে যেত। এরপর, তা পরিস্কার করা হত এবং তখন তিনি সেখানে বসতেন।”
এসব হাদীস বা ঘটনায় বাইতুল মাল’কে স্থান অর্থে বোঝানো হয়েছে। আর, বাইতুল মাল-এর দ্বিতীয় অর্থ, যেখানে এ শব্দসমূহের দ্বারা একটি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হয়; সে সম্পর্কে বলা যায় যে, তহবিল বা সম্পদ অনেক সময় কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে থাকে না বলে এ কর্তৃপক্ষের অপরিহার্যতা তৈরি হয়েছে, যেমন: জমি, তেলের খনি, গ্যাসের খনি, যে সব সাদাকা গ্রহণ করার পর কোন নির্দিষ্ট স্থানে না রেখেই উপযুক্ত লোকদের মাঝে তা বন্টন করে দেয়া হয় ইত্যাদি। আল বায়হাকী, আহমদ ইবনে হাম্বল এর আল মুসনাদ, আবদুর রাজ্জাক এর মুসান্নাফে বর্ণিত হাদীস অনুসারে দেখা যায় যে, বাইতুল মাল’কে কখনও কখনও একটি কর্তৃপক্ষ বোঝানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। লাহিক ইবনে হুমাইয়াদ থেকে জানা যায়, ‘ইবনে মাসউদকে বিচারব্যবস্থা ও বাইতুল মালের প্রধান হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল।’ এর অর্থ এই নয় যে, উমর (রা) ইবনে মাসউদকে বাইতুল মাল-এর দরজার পাহারাদার হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন; বরং, এর অর্থ হল, তাঁকে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের কর্তৃত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। আল-হাসান থেকে ইবন আল-মুবারক তার আল-জুহদ গ্রন্থে যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন, সেখানেও বাইতুল মাল’কে একই অর্থে বোঝানো হয়েছে। যখন বসরার আমীরগণ আবু মুসা আল-আশয়ারী’র সাথে আসলেন, তারা তাঁকে তাদের জন্য কিছু খাবার বরাদ্দ করার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি একথা বলে তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন: ‘হে আমীর সম্প্রদায়! আমি আপনাদের জন্য বাইতুল মাল থেকে দুটি ভেড়া এবং
এক টুকরো কৃষি (গারীব) জমি বরাদ্দ করছি।” এখানেও বাইতুল মাল বলতে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ বোঝানো হতে পারে।
খলীফা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি বাইতুল মালের আয়-ব্যয় তত্ত্বাবধান করেন
রাসূল (সা) হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি তাঁর নিজের কোলে উসমান (রা) এর কাছ থেকে বিপদসঙ্কুল (’উসরাহ) যাত্রার সেনাবাহিনী’র জন্য অনুদান গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া, হাসান ও গারীব থেকে তিরমিযী এবং আহমাদ বর্ণনা করেছেন এবং আব্দুর রহমান ইবন সামরাহ্ থেকে আল-হাকিম বর্ণনা করেছেন এবং শুদ্ধ করেছেন এবং আল জাহাবী এর সাথে একমক পোষণ করেছেন, তিনি বলেছেন যে:
“উসমান রাসূল (সা) এর নিকট এক হাজার দিনার নিয়ে আসলেন, যখন তিনি (সা) বিপদসঙ্কুল যাত্রার সেনাবাহিনী অর্থাৎ, তাবুকের যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত করছিলেন। তিনি এ মুদ্রাগুলো রাসূল (সা) এর কোলের উপর রাখলেন। তিনি বলেন, রাসূল (সা) এগুলোকে নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন: “আজকের পর থেকে আর কোন কাজের দ্বারা উসমান ক্ষতিগ্রস্থ হবে না; এবং তিনি (সা) এ কথাটি অনেকবার বললেন।” তিনি (সা) মাঝে মাঝে বাইতুল মাল-এর অর্থ নিজেই বন্টন করতেন। আল বুখারী আনাসের সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে:
“বাইরাইন থেকে আগত অর্থ রাসূল (সা) এর নিকট আনা হল। তিনি (সা) বললেন: এগুলোকে মসজিদে ছড়িয়ে রাখ। নামাজ শেষ করে তিনি (সা) এগুলোর খুব কাছে বসলেন এবং উপস্থিত কাউকে সে অর্থ থেকে বঞ্চিত করলেন না। যখন রাসূল (সা) উঠে দাঁড়ালেন তখন আর কোন অর্থই অবশিষ্ট থাকল না।”
আবু বকরের (রা) শাসনামলেও তিনি নিজে বাহরাইন থেকে আগত অর্থ বন্টনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আল বুখারী জাবিরের সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন:
“রাসূল (সা) বলেছিলেন: ‘যদি বাহরাইন থেকে অর্থ আসে তবে আমি তোমাকে এভাবে, এভাবে এবং এভাবে দেব, অর্থাৎ, তিনবার বললেন। রাসূল (সা) এর ইন্তিকালের পর বাহরাইন থেকে অর্থ আসলো। তখন আবু বকর কাউকে এ ঘোষণা দেবার নির্দেশ দিলেন: যার যার রাসূল (সা)এর কাছে কোন ঋণ বা অন্যকিছু পাওনা আছে, সে যেন আমার কাছে আসে। এ কথা শোনার পর আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম আল্লাহ্’র রাসূল আমাকে বলেছিলেন: “আমার জন্য এভাবে, এভাবে এবং এভাবে; তারপর তিনি আমাকে তিনবার দিলেন।”
উপরে উল্লিখিত সুফিয়ান আল-ছাকাফী’র চামড়ার ব্যাগ সম্পর্কিত হাদীসটি যেখানে তিনি ব্যাগটি পাবার পর ঘোষণা দেন এবং শেষ পর্যন্ত কোন দাবিদার না পাওয়ায়: “উমর সেটাকে নিলেন এবং বাইতুল মালে জমা রাখলেন।” আল শাফীঈ তার আল-উম্ম গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: “একাধিক পন্ডিত ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, যখন ইরাকের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনীমত) উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট আসলো, বাইতুল মাল-এর তত্ত¡াবধায়ক তাকে বললেন: “আমাকে এগুলো বাইতুল মালে রাখতে দিন।” তিনি বললেন: “না! কাবার প্রভুর শপথ! এগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত কোন গৃহে রাখা হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এগুলোকে বন্টন করা হবে।” এরপর তিনি এগুলোকে মসজিদে রাখার নির্দেশ দিলেন এবং চামড়ার মাদুর দিয়ে এগুলোকে ঢেকে দেয়া হল। তারপর, আনসার ও মুহাজিরিনদের মধ্য হতে কিছু ব্যক্তি এগুলোকে পাহারা দেবার দায়িত্বে নিয়োজিত হল। সকাল বেলায় আল-আব্বাস ইবন আব্দুল-মুত্তালিব (রা) এবং আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা) তাঁর (উমর (রা)) সাথে বের হলেন; হয় তিনি এদের মধ্যে কোন একজনের হাত ধরে ছিলেন কিংবা, এদের মধ্যে কেউ একজন তাঁর হাত ধরে ছিলেন। যখন তারা (পাহারাদার) তাঁকে দেখল, তারা গণীমতের মালগুলোর উপর থেকে চামড়ার মাদুর সরিয়ে নিল। এরপর তিনি এমন এক দৃশ্য অবলোকন করলেন, যা তিনি পূর্বে কখনও দেখেননি। তিনি দেখলেন স্বর্ণ, ইন্দ্রনীলমণি, ক্রিসোলাইট, মুক্তা ঝল্মল্ করছে। এ দৃশ্য অবলোকন করার পর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। তাদের একজন বললেন, “আল্লাহ্’র কসম! আজকের এদিন কান্নার নয়; বরং, এদিন আনন্দের, এদিন (আল্লাহ্’র) প্রশংসা করার।” তিনি (উমর (রা)) বললেন: “আল্লাহ্’র কসম! তুমি বিষয়টিকে যেভাবে দেখছো আমি সেভাবে দেখছি না। এ ধরনের সম্পদ কোন জাতির মধ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়নি, যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলো তাদের ক্ষতি সাধন করেছে।” তারপর তিনি কিবলা’র দিকে ফিরলেন, তাঁর দুই হাত তুলে বললেন, “হে আমার প্রভু! আমি এসবের প্রলোভন থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। কারণ তুমি বলেছো:
“আমি তাদের অজ্ঞাতসারে তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাব।”
[সূরা ’আরাফ: ১৮২]
তারপর তিনি বললেন, সুরাকা ইবন জা’শম কোথায়? তাকে নিয়ে আসা হল যখন তার দুই হাত ছিল সরু ও চুলে আবৃত। তিনি তাকে কিসরা’র বাহুবন্ধনীগুলো দিলেন এবং বললেন: ‘এগুলো পরো’। তারপর তিনি বললেন, ‘বল, আল্লাহু আকবর।’ সে বলল, ‘আল্লাহু আকবর’। তখন তিনি বললেন, ‘বল প্রশংসা সেই আল্লাহ্’র যিনি কিসরা ইবন হিরমিজের হাত থেকে এটা বের করে করেছেন এবং বনু মিদলাজের এক (সামান্য) বেদুইন সুরাকা ইবন জা’শামকে তা দিয়ে অলঙ্কৃত করেছেন।’ তারপর তিনি একটি লাঠি দিয়ে মালামালগুলো উল্টে-পাল্টে দেখতে লাগলেন এবং বললেন, ‘নিঃসন্দেহে যে এগুলো আমাদের কাছে সমর্পণ করেছে সে সৎ।’ তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ‘আমাকে বলতে দিন, আপনি আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে (আমাদের) তত্ত্বাবধায়ক(আমিন উল্লাহ্) এবং তারা আপনার কাছে তাই সর্মপণ করেছে, যা আপনি আল্লাহ্’র কাছে সর্মপণ করেছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, ‘তুমি সত্য বলেছো।’ তারপর তিনি সেগুলোকে বন্টন করে দিলেন। এছাড়া, আমরা ইতোমধ্যে আবদুল্লাহ ইবন আমরু’র সূত্রে আল-দারিমী বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেছি: “এক ভৃত্য কোন আত্মীয়-স্বজন না রেখেই মৃত্যুবরণ করলো। সুতরাং, উসমান তার উত্তরাধিকারের সম্পদ বাইতুল মালে জমা করতে বললেন।” এর সাথে সাথে আল-ইসতিদকার গ্রন্থে উল্লেখিত আনাস ইবন শিরিন এর হাদীসটিই উল্লেখ করা হয়েছে যে: “আলী (রা) ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থ বিতরণ করতেন যতক্ষণ পর্যন্ত না বাইতুল মাল শূণ্য হয়ে যেত (তারপর সে গৃহকে পরিস্কার করা হত এবং তিনি সেখানে বসতেন)।”
কখনও কখনও রাসূল (সা) সম্পদ বন্টনের সময় সাহাবীদের (রা) মধ্য হতে কাউকে সামগ্রিকভাবে এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেবার জন্য মনোনীত করতেন। কিংবা, তিনি তহবিল বন্টন সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের দায়িত্ব দিয়ে কাউকে নিযুক্ত করতেন। উকবাহ্’র সূত্রে আল বুখারী বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন:
‘আমার মনে পড়ল, কিছু স্বর্ণের ধূলা আমাদের জিম্মায় আছে। এগুলো আমাকে পেছন থেকে তাড়া করবে ভেবে ভীত ছিলাম এবং সে কারণে ওগুলোকে বন্টন করার নির্দেশ দিয়ে এলাম।’’
এছাড়া, ইবন শিহাবের একটি হাদীস, যা ইবন আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন এবং এ বর্ণনাটি আল-হাফিয ইবন আল হাজার আল-আশক্বালানী, আল মুনদিরী এবং আল হাইছামী বিশুদ্ধ বলেছেন: “আল্লাহ্’র রাসূল (সা) বিলালের সিন্দুকের ঘরে গেলেন যেখানে তিনি সাদাকাহ্ জমা রাখতেন। সেখানে তিনি (সা) কিছু স্তুপীকৃত খেজুর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এ খেজুরগুলো কিসের জন্য, বিলাল?” তিনি বললেন, ‘হে রাসূলুল্লাহ্! আমি এগুলো আপনার দূর্দিনের জন্য রেখে দিয়েছি।’ তখন তিনি বললেন, ‘তুমি কি নিজেকে নিরাপদ মনে কর, যখন তুমি ঘুম থেকে উঠো এবং নিজেকে জাহান্নামের ধোঁয়ার মধ্যে আবিস্কার করো?’ এগুলো বিতরণ করে দাও এবং আরশের মালিকের পক্ষ থেকে কোন প্রকার কৃপণতার ভয় করো না।”
এছাড়া, অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “রাসূল (সা) এর সময় আব্দুর রহমান ইবন আউফ সাদাকা’র উট ও ভেড়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর, বিলাল নিযুক্ত ছিলেন সাদাকা’র ফল-ফলাদির দায়িত্বে; আর, মাহমিয়্যাহ ইবন জুয (আল্লাহ্’র রাসূল ও তাঁর পরিবারের) এক পঞ্চমাংশের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। আর, খলীফা বলেছেন: “এবং বিলাল তাঁর ব্যয়ের জন্য দায়িত্বশীল ছিলেন।”
আবদুল্লাহ ইবন লাহী আল-হুযানী’র সূত্রে ইবন হিব্বান তার সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেছেন: ‘আমি রাসূল (সা) এর মুয়াজ্জিন বিলালের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে বিলাল! আল্লাহ্’র রাসূল এর ব্যয়ের পরিমাণ কেমন ছিল?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘তাঁর (ব্যয় করার মত) কিছুই ছিল না। আমি তাঁর রাসূল হিসাবে মনোনীত হবার দিন থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলাম। তাঁর কাছে যদি কোন মুসলিম আসতো, যার পরনে কোন কাপড় থাকতো না, তিনি আমাকে দ্রুত কিছু অর্থ ঋণ করে নিয়ে আসার নির্দেশ দিতেন, যেন তিনি ঐ ব্যক্তির জন্য পোষাক ও খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন।’ ইমাম মুসলিম রাসূল (সা) এর ক্রীতদাস আবু রাফি’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে:
‘রাসূল (সা) একটি বাচ্চা উট ধার করেছিলেন। যখন তাঁর কাছে উটের সাদাকাহ্ পৌঁছাল, তখন তিনি আমাকে ঐ উটের মালিককে বাচ্চা উটটি ফেরত দেবার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, চার বছরের একটি ভাল উট ছাড়া আমি আর কোন উট দেখতে পাচ্ছি না। রাসূল (সা) বললেন, ‘ওটাই তাকে দাও; কারণ, উত্তম মানুষ তারাই যারা ঋণ পরিশোধে উত্তম।’ এছাড়া, ইবনে আব্বাসের হাদীসে এটি উল্লেখিত আছে, যে ব্যাপারে চার ইমাম একমত পোষণ করেছেন:
‘রাসূল (সা) যখন মু’য়াজকে ইয়েমেনে প্রেরণ করেন, তখন তিনি (সা) তাঁকে বলেন:
‘যদি তারা তোমার কথা মেনে নেয়, তবে তাদের জানাবে যে, আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর সাদাকাহ্ ধার্য করেছেন, যা তাদের মধ্যকার সম্পদশালী ব্যক্তিদের নিকট হতে সংগ্রহ করা হবে এবং দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এটা মেনে নেয়, তবে তাদের নিকট হতে তাদের সর্বাপেক্ষা ভালো সম্পদ নেয়া থেকে বিরত থাকবে; এবং মজলুমদের অভিশাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে; কারণ, তাদের ও আল্লাহ্’র মধ্যে কোন পর্দা থাকে না।”
এছাড়া, আবু হুরাইরাহ থেকে দুটি সহীহ্ গ্রন্থে (সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম) বর্ণিত আছে যে: “আল্লাহ্’র রাসূল (সা) উমর (রা) কে সাদাকাহ্ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।”
খোলাফায়ে রাশেদীনগণও তাঁর পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিলেন; এজন্য তাঁরাও তহবিল সংক্রান্ত বিষয়াদি পরিচালনার জন্য কিছু মানুষ নিযুক্ত করেছিলেন। ইবন ইসহাক এবং খলীফা বর্ণনা করেছেন যে: “আবু বকর বাইতুল মাল-এর দায়িত্বে আবু উবাইদাহ ইবন আল-জাররাহ্’কে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তারপর, তিনি তাঁকে আল-শামে প্রেরণ করেছিলেন।”
মুয়াকিবের জীবনের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে আল জাহাবী বলেছেন যে, আবু বকর ও উমর তাকে বাইতুল মাল-এর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের হতে ইবন ইসহাক বর্ণনা করেছেন, যা আল-তারাতিব আল-ইদারিয়্যাহ (প্রশাসনিক বিন্যাস) গ্রন্থের রচয়িতা আল-হাকিম কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: “তিনি আবু বকরকে পত্র লিখেন এবং আবু বকর তাকে বাইতুল মাল-এর দায়িত্বে নিয়োজিত করেন এবং উমর ইবনুল খাত্তাব এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন।” এখানে আবদুল্লাহ ইবন আল-আরকামকে বোঝানো হয়েছে। ইবন সা’দ তার তাবাকাত গ্রন্থে এবং ইবন হাজার তার আল-ইসাবাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, উমর (রা) এর কোষাধ্যক্ষ ছিল তাঁর ভৃত্য ইয়াছ্ছার ইবন নুমায়ের। ইমাম আহমাদ তাঁর আল-মুসনাদে এবং আব্দুর রাজ্জাক তার আল-মুসান্নাফে লাহিক ইবনে হামিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: “এবং তিনি (উমর) ইবন মাসউদকে বিচারবিভাগ ও বাইতুল মাল-এর দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করলেন।” অর্থাৎ, আল-কুফাতে প্রেরণ করলেন। মালিক ইবন আনাস থেকে খলীফা এবং মালিক ইবন আনাস বর্ণনা করেছেন যায়িদ ইবন আসলাম থেকে, তিনি বলেছেন: “উমর বাইতুল মাল-এর দায়িত্ব দিয়ে আবদুল্লাহ ইবন আরকাম’কে নিযুক্ত করেছিলেন।”
উরওয়া ইবনে আল যুবায়ের থেকে ইবনে খুজায়মা তার সহীহ্ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, ‘আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল ক্বারী বলেছেন, ‘উমর ইবনুল খাত্তাবের সময় আমি বাইতুল মাল-এর দায়িত্বে ছিলাম।’ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের গুণাবলীর বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনে হাজার তার আল-ফাতহ্ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘এবং উমর ও উসমান তাঁকে কুফায় বাইতুল মাল-এর দায়িত্বে নিয়োজিত করেন।’ আল জাশাইয়ারী তার আল-ওজারা ওয়াল কুত্তাব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ‘মনে করা হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর লেখক (scribe) আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম ইবনে আবদ ইয়াগুছ তাঁর সময় বাইতুল মাল-এর দায়িত্ব ছিলেন’ অর্থাৎ উসমান এর খিলাফত কালে। আল যুবায়ের ইবনে বক্কর থেকে আল হাকীম আল মুসতাদরাক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম ইবনে আবদ ইয়াগুছ ’উমরের সময়ে এবং উসমানের শাসনামলের শুরুর দিকে বাইতুল মাল এর দায়িত্বে ছিলেন, যে পর্যন্ত না তার মৃত্যু হয়; এবং তিনি কিছুদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সাহচার্য পেয়েছিলেন।’
আল ইসতি’য়াব গ্রন্থে ইবনে আবদুল বার বর্ণনা করেছেন যে, “উসমানের খিলাফতের সময় যায়িদ ইবনে সাবিত বাইতুল মাল-এর দায়িত্বে ছিলেন; যায়িদ এর ওয়াহিব নামে একজন ক্রীতদাস ছিল। উসমান তাকে বাইতুল মালে সহায়তা করতে দেখেন। উসমান বললেন, ‘কে এই ব্যক্তি?’ যায়িদ প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘আমার ক্রীতদাস।’ তিনি বললেন, ‘আমি তাকে মুসলিমদের সহায়তা করতে দেখছি এবং একারণে সে কিছু পাবার অধিকার লাভ করেছে; আমি তার জন্য এটা (ভাতা) বরাদ্দ করলাম।’ এরপর, তিনি ঐ ক্রীতদাসের জন্য দু’হাজার (দিরহাম) বরাদ্দ করলেন। যায়িদ বললেন, ‘আল্লাহ্’র কসম, আপনি একজন দাসকে দু’হাজার দিতে পারেন না।’ অতঃপর, তিনি তার জন্য একহাজার বরাদ্দ করলেন।’
আল সাফাদি মিশরের পন্ডিতগণ ও রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সাহাবীদের (রা) সম্পর্কে তার গ্রন্থে বলেছেন, ‘আবু রাফি’কে
’আলী ইবনে আবু তালিবের কাছে প্রেরণ করা হলে তিনি তাকে কুফায় বাইতুল মাল-এর দায়িত্ব দেন।’ আল ইসতি’য়াব গ্রন্থে ইবনে আবদুল বার উল্লেখ করেছেন যে, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনে রাফি’ আলীর একজন কোষাধ্যক্ষ ও সচিব ছিলেন।’ আল আইনী তার উমদাত উল ক্বারী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব আল সুয়্যি’কে আলী সম্মান করতেন, ভালবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। সেকারণে তিনি আল-কুফা’তে তাকে বাইতুল মাল-এর দায়িত্ব প্রদান করেন।’ এছাড়া, আলী বসরাতে এ কাজের জন্য যিয়াদকে নিযুক্ত করেন। আল জাশিয়্যারী বলেছেন, ‘আল-বসরা ত্যাগ করার সময়, তিনি তাকে আল-খারাজ ও দিওয়ানের দায়িত্ব অর্পণ করেন।’ বাইতুল মাল’কে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
১. রাজস্ব : এর মধ্যে তিনটি দিওয়ান আছে:
– গণীমত ও খারাজ এর দিওয়ান: এর মধ্যে রয়েছে – গণীমত, খারাজ, ভূমি, জিজিয়া, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ এবং কর।
– গণমালিকানাধীন সম্পত্তির দিওয়ান: এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ, সমুদ্র, নদী, খালবিল, ঝর্ণা, বন, তৃণভূমি এবং হিমা (সংরক্ষিত ভূমিসমূহ)।
– সাদাকাহ্’র দিওয়ান: এর মধ্যে রয়েছে টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য, ফসল ও ফলমূল, উট, গরু ও ভেড়ার উপর যাকাত ।
২. ব্যয় : এর মধ্যে আটটি দিওয়ান রয়েছে:
- খলীফার বাসভবনের দিওয়ান
- রাষ্ট্রীয় সেবার দিওয়ান
- মঞ্জুরীর দিওয়ান
- জিহাদের দিওয়ান
- সাদাকাহ্ ব্যয়ের দিওয়ান
- গণমালিকানাধীন সম্পদের ব্যয়ের দিওয়ান
- জরুরী অবস্থার দিওয়ান
- সাধারণ বাজেট, হিসাব-নিকাশ ও পরিদর্শনের দিওয়ান