সহকারীরা হলেন ওয়াযির (মন্ত্রী) যাদেরকে খলীফা খিলাফতের দায়িত্ব পালনে তাকে সহযোগিতা করার জন্য নিযুক্ত করে থাকেন। খিলাফত রাষ্ট্রের অসংখ্য কাজ রয়েছে; বিশেষ করে তখন যখন রাষ্ট্রের সীমানা ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে এবং তা সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় খলীফার একার পক্ষে খিলাফতের গুরুদায়িত্ব পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য। এ কারণেই তার ভার বহন করা এবং তার দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করার জন্য সহকারীর প্রয়োজন।
তবে, কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়া তাদের ওয়াযির (মন্ত্রী) বলা যুক্তিসঙ্গত হবে না। অন্যথায় ইসলামে ওয়াযির এর ধারণার সাথে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ, পুঁজিবাদী, গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত মানবরচিত ব্যবস্থা অথবা, অন্য যে সকল ব্যবস্থা আমরা দেখে থাকি, তাদের ধারণার দ্বন্দ বা বিভ্রান্তি তৈরি হবে।
প্রতিনিধিত্বকারী সহকারী বা মু’ওয়ায়ীন আত তাফউয়ীদ হলেন খলীফার শাসন ও কর্তৃত্বের দায়িত্বে সহায়তা করার জন্য খলীফা কর্তৃক নিয়োজিত ওয়াযির বা ডেপুটি। খলীফা বিভিন্ন বিষয়সমূহে শারী’আহ্ হুকুমের আওতায় সহকারীকে তার নিজস্ব মতামত এবং ইজতিহাদের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনে তাকে তার (খলীফার) প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত করতে পারেন। অর্থাৎ, খলীফা তার সহকারীকে সাধারণভাবে বিভিন্ন বিষয় নিরীক্ষণ ও তদারকি করার দায়িত্ব দেন এবং সাধারণভাবে তাদের প্রতিনিধিত্ব দিয়ে থাকেন।
আল হাকীম এবং আত তিরমিযী আবু সাইদ আল খুদরীর (রা) রেওয়াতে বর্ণনা করেন রাসূল (সা) বলেছেন যে,
“আকাশে আমার দুই ওয়াযির জিবরাইল এবং মিকাইল এবং পৃথিবীতে আমার দুই ওয়াযির আবু বকর ও উমর।”
(আলহাকিম, আল মুসতাদরাক, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১০, হাদীস নং-৩০৪৬ এবং সূনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৬৮০)
উপরোক্ত হাদীসে ওয়াযির বলতে সাহায্যকারী এবং সহযোগী বলা হয়েছে – যেটা ভাষাগত অর্থ। একই ধরনের অর্থ পবিত্র কুর’আনেও পাওয়া যায়:
“আমার পরিবারের মধ্য থেকে একজন সাহায্যকারী (মন্ত্রী) পাঠান।”
[সূরা তোয়াহা: ২৯]
এখানেও সাহায্যকারী এবং সহযোগী বোঝানো হয়েছে। হাদীসে ওয়াযির শব্দটি সুনির্দিষ্ট কোন অর্থ হিসাবে আসেনি, যার মধ্যে যে কোন সাহায্য ও সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, বলা যায় যে, খিলাফতের গুরুদায়িত্ব পালনে ওয়াযিরগণ খলীফাকে সহায়তা করতে পারেন। আবু সাইদ খুদরির বর্ণিত হাদীসে যে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে তা শাসনকার্যে সহযোগিতার অর্থে সীমাবদ্ধ নয়, কেননা জিবরাইল এবং মিকাইলকে আকাশে রাসূল (সা) এর সহযোগী বলা হয়েছে যার সাথে তাঁকে শাসনকার্যে সহযোগিতা করার কোন সম্পর্ক নেই। সে কারণে এখানে ‘ওয়াযিরাই’ (আমার দুই ওয়াযির) ভাষাগত ছাড়া অন্যকোন অর্থ বহন করে না, যার অর্থ হচ্ছে আমার দুই সহকারী। এ হাদীস থেকে আরও বোঝা যায় যে, একের অধিক সহযোগী থাকাও অনুমোদন যোগ্য।
যদিও আবু বকর (রা) ও উমর (রা) সরাসরি রাসূল (সা) এর সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন না, তবে কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা ছাড়াই তিনি (সা) তাঁদেরকে শাসনকাযর্স হ সব ব্যাপারে সহযোগিতা করার আবশ্যিক ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। আবু বকর (রা) খলীফা হবার পর উমর (রা) কে তাঁর সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং এ ব্যাপারে উমর (রা) এর সহযোগিতা ছিল খুব প্রত্যক্ষ। যখন উমর (রা) খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন উসমান (রা) এবং আলী (রা) ছিলেন তাঁর সহকারীবৃন্দ। কিন্তু, শাসনের ব্যাপারে উমর (রা) কে সহযোগিতা করতে তাঁদের দেখা যায়নি। তাঁদের অবস্থা ছিল রাসূলের (সা) এর পাশে থাকা আবু বকর (রা) ও উমরের (রা) মতো। উসমান (রা) এর সময় আলী (রা) এবং মারওয়ান বিন আল হাকাম (রা) ছিলেন তাঁর দুই সহকারী। যেহেতু আলী (রা) কিছু ব্যাপারে উসমানের (রা) উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন সেহেতু তিনি দূরে ছিলেন। কিন্তু, মারওয়ান বিন আল হাকাম বেশ প্রত্যক্ষভাবেই শাসনকার্যে উসমান (রা) কে সহযোগিতা করেন।
যদি প্রতিনিধিত্বকারী সহকারী সৎ হন তাহলে তিনি খলীফার জন্য বড় নেয়ামত হবেন। তিনি তাকে সব ভাল কাজের ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং তা সম্পাদনে তাকে সহায়তা করবেন। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন:
‘যদি আল্লাহ্ আমিরের জন্য ভাল কিছু চান তবে তাকে একজন ভাল ওয়াযির দান করেন। আমির যখন কিছু ভুলে যান তখন সে তাকে তা স্বরণ করিয়ে দেন এবং আর স্বরণ থাকলে সে ব্যাপারে ওয়াযির তাকে সাহায্য করেন। যদি আল্লাহ্’র অন্য কোন ইচ্ছা থাকে তাহলে তাকে একজন মন্দ ওয়াযির দান করেন। তখন আমির যদি কিছু ভুলে যান ওয়াযির কিছু স্বরণ করিয়ে দেন না এবং যে কাজ স্বরণ আছে তা সম্পাদনে অসহযোগিতা করেন।’
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ২৯৩২)
এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। আন নাববী এর সনদকে উত্তম বলেছেন এবং আল বাজ্জার তার নিজস্ব ইসনাদ সহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যে ব্যাপারে আল হায়ছামি বলেছেন ‘এর সকল বর্ণনাকারীরা সহীহ্’।
রাসূল (সা) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনদের (রা) সময়কার সহকারীদের কাজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এইসব সহকারীদের কিছু বিশেষ কাজের জন্যও নিযুক্ত করা যায়, যেখানে তিনি সাধারণভাবে এই সমস্ত কাজের তদারকি করে থাকেন। আবার, তাকে সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবার জন্যও সাধারণভাবেও নিযুক্ত করা যায়। তাকে কোন একটি বিশেষ এলাকায় সাধারণ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া যায় কিংবা ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও দেয়া যায়। আল বুখারী ও মুসলিম আবু হুরাইরা (রা) এর রেওয়াতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
‘রাসূলুল্লাহ্ (সা) সাদাকার দায়িত্ব দিয়ে উমরকে প্রেরণ করলেন।’
(সহীহ্ বুখারী, হাদীস নং-১৪৬৮, সহীহ্ মুসলিম, হাদীস নং-২২৭৪)
ইবনে খুজায়মা এবং ইবনে হিব্বান বর্ণনা করেছেন যে,
‘রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন যি’রানার উমরা থেকে ফিরে আসলেন তখন তিনি আবু বকরকে হজ্জ্বের ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন।’
(আল নাসাঈ, সুনান, হাদীস নং-২৯৯৩)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আবু বকর (রা) ও উমর (রা) রাসূল (সা) এর সহকারী ছিলেন, যাদের সাধারণভাবে নির্দিষ্ট বিশেষ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, যদিও তাঁরা দু’জন ওয়াযির ও প্রতিনিধি হিসাবে সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যা কিনা প্রতিনিধিত্বের জন্য প্রয়োজনীয়। উমর (রা) এর শাসনামলে আলী (রা) এবং উসমান (রা) এরও একই অবস্থা ছিল। এমনকি আবু বকর (রা) এর খিলাফতের সময়েও সব ব্যাপার সাধারণভাবে তদারকির জন্য উমরকে এমনভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যে, কিছু সাহাবী (রা) আবু বকরকে (রা) বলেই বসলেন, “আমরা বুঝতে পারি না খলীফা কে? উমর না তুমি?” যদিও আবু বকর (রা) উমরকে (রা) কিছু সময়ের জন্য বিচারক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন – যে ব্যাপারে আল হাফিযের সমর্থনে আল বায়হাকীর বণর্না পাওয়া যায়।
সুতরাং, রাসূল (সা) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনদের (রা) জীবনী থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সহকারীগণ কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে সাধারণ পর্যবেক্ষণ ও খলীফার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা নির্দিষ্ট দায়িত্বে তাদের নিযুক্ত করার ব্যাপারটিও অনুমোদিত, কেননা রাসূল (সা) আবু বকর (রা) ও উমর (রা) কে এবং আবু বকর (রা) উমর (রা) কে এভাবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা এমন হতে পারে যে, একজনকে খিলাফত রাষ্ট্রের উত্তরপ্রান্ত এবং অন্যজনকে রাষ্ট্রের দক্ষিণ প্রান্তের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এছাড়া, খলীফার প্রথম সহকারীকে দ্বিতীয়জনের স্থানে এবং দ্বিতীয়জনকে প্রথমজনের স্থানে স্থানান্তরিত করারও অধিকার রয়েছে। তিনি একজনকে একটি বিশেষ এলাকায় দায়িত্ব দিয়ে পাঠাতে পারেন এবং অন্যজনকে অন্য দায়িত্ব দিতে পারেন; তিনি খিলাফতের দায়িত্ব পালনে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সেভাবেই তার সহকারীদের দায়িত্ব দিতে পারেন। এজন্য তাদের নতুন কোন পদবীর প্রয়োজন নেই; শুধুমাত্র যা প্রয়োজন তা হল তাদের এক দায়িত্ব থেকে অন্য দায়িত্বে স্থানান্তরিত করা। কারণ, তাদের মূলতঃ সাধারণভাবে খলীফার যে কোন কাজে সহযোগিতা করার জন্যই নিযুক্ত করা হয়েছে এবং এই সমস্ত কাজগুলো সহকারী হিসাবে তার দায়িত্বের মধ্যেই পরে। এক্ষেত্রে, ওয়ালী’র (গভর্ণর) কাজের সাথে সহকারীর কাজের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, ওয়ালী’কে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাধারণ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা হয়, যেক্ষেত্রে তাদেরকে স্থানান্তরিত করা হয় না। যদি কোন কারণে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়, তবে তাকে প্রদত্ত নতুন দায়িত্বের জন্য পুণরায় নিযুক্ত করতে হয়; কারণ, তার প্রথম নিযুক্তিকরণের মধ্যে পরের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কিন্তু সহকারীদের যেহেতু সাধারণ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিনিধিত্বের জন্য নিযুক্ত করা হয়, তাই তাকে স্থানান্তরিত করলে তার নতুন কোন পদবী বা নিযুক্তিকরণের প্রয়োজন হয় না। কারণ, মূলতঃ সহকারীদেরকে খলীফার সকল কাজের সাধারণ পর্যবেক্ষণ এবং তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই নিযুক্ত করা হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, খলীফা তার সহকারীদেরকে রাষ্ট্রের সমস্ত অঞ্চলে তার সমস্ত কাজ সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা দিয়ে নিযুক্ত করতে পারেন। আবার, তিনি তাদেরকে একটি বিশেষ দায়িত্বও দিতে পারেন, যেমন: একজনকে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহের (উলাই’য়াহ্) দায়িত্ব, আবার অন্যজনকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহের দায়িত্ব ইত্যাদি। খলীফার একাধিক সহকারী থাকলে এক এক জনকে একেক দায়িত্বে নিযুক্ত করার এই ব্যবস্থা আবশ্যকীয়, যাতে করে তাদের কর্তব্য পালনে কোন প্রকার সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি না হয়।
সুতরাং, উপরোক্ত এই বিষয়গুলোর ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে:
সহকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে: প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীকে রাষ্ট্রের সর্বত্র সমস্ত কাজ সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে নিযুক্ত করা হবে।
সহকারীর কাজের ক্ষেত্রে: তাদের রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হবে। অর্থাৎ, খিলাফত রাষ্ট্রকে বিভিন্ন উলাই’য়াহ্’তে বিভক্ত করে একেক জনকে একেক অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হবে। একজন সহকারী পূর্বাঞ্চলীয় উলাই’য়াহগুলো পরিচালনার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন, একইভাবে অন্যজন পশ্চিম দিক, আবার আরেকজন উত্তরাঞ্চল পরিচালনার ব্যাপারে খলীফাকে সাহায্য করবেন ইত্যাদি।
সহকারীকে স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে: নতুন নিয়োগ ব্যতিরেকেই সহকারীদের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চল কিংবা এক কাজ থেকে অন্য কাজের দায়িত্ব দিয়েই স্থানান্তরিত করা হবে। এক্ষেত্রে, তাকে নতুনভাবে নতুন কাজের জন্য নিযুক্ত করা হবে না। বরং, প্রথম নিয়োগের ভিত্তিতেই তাকে স্থানান্তরিত করা হবে, কারণ, মূলতঃ তাকে সাধারণভাবে সমস্ত কাজ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েই খলীফার প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
প্রতিনিধিত্বকারী সহকারী হবার শর্ত
খলীফা পদে নিযুক্ত হবার জন্য যে সব শর্ত প্রয়োজন, প্রতিনিধিত্বকারী সহকারী হবার জন্যও একই শর্তাবলী পূরণ করতে হবে, যেমন: তাকে পুরুষ, মুক্ত, মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী এবং ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। এছাড়াও তাকে অবশ্যই প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য হতে নির্বাচিত করতে হবে।
খলীফার প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীকে যে খলীফা হবার প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ পূরণ করতে হবে এক্ষেত্রে দলিল হল, যেহেতু প্রতিনিধির দায়িত্ব শাসনকার্য পরিচালনার অংশ সেহেতু তাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। কারণ, রাসূল (সা) বলেছেন,
‘যারা নারীদেরকে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করে তারা কখনওই সফল হবে না।’
(সহীহ্ বুখারী, হাদীস নং- ৪৪২৫)
তাকে অবশ্যই আযাদ বা মুক্ত হতে হবে। কারণ, একজন দাসের তার নিজের কর্মকান্ড পরিচালনার ব্যাপারেই কোন প্রকার কর্তৃত্ব থাকে না, সুতরাং, জনগণের বিষয়াবলী দেখাশোনা করা ও তাদের শাসন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সেইসাথে, তাকে অবশ্যই পরিণত (বালেগ) হতে হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন:
“তিন প্রকার ব্যক্তিকে জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জেগে উঠে, নাবালক যতক্ষণ পর্যন্ত না সে পরিণত হয় এবং উন্মাদ ব্যক্তি যতক্ষণ না সে মানসিকভাবে সুস্থ হয়।”
(সূনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৮)
একই হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী তাকে অবশ্যই মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন,
‘উন্মাদ ব্যক্তি যতক্ষণ না সে মানসিকভাবে সুস্থ হয়।’
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে,
“সে ব্যক্তি যে তার মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিয়ন্ত্রণ ফিরে না পায়।”
এছাড়া, মু’ওয়ায়ীন’কে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। কারণ, ন্যায়পরায়নতাকে আল্লাহ্ তা’আলা সাক্ষ্যদানকারীদের শর্ত হিসাবে আরোপ করেছেন। তিনি বলেন:
‘আর এমন দু’জন লোককে তোমরা সাক্ষী বানাবে যারা তোমাদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ হবে।’
[সূরা আত-তালাক: ২]
বৃহত্তর যুক্তিতে খলীফার সহযোগীর ন্যায়পরায়ণতার গুণাবলী থাকা আবশ্যকীয় বলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, মু’ওয়ায়ীন’কে অবশ্যই শাসনকার্যে নিযুক্ত যোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্য হতেই নিয়োগ করতে হবে, যেন সে খিলাফত পরিচালনা এবং শাসন- কর্তৃত্বের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে খলীফার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাকে সহায়তা করতে পারে।
প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর দায়িত্ব
প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর দায়িত্ব হলো তিনি যে সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে চান তার ব্যাপারে খলীফাকে পুরোপুরি অবহিত করা। পরবর্তীতে, তিনি যে সব সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন এবং ব্যবস্থাপনা ও নিয়োগের ব্যাপারে যে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন সে সম্পর্কে খলীফাকে অবহিত করবেন, যাতে করে তার ক্ষমতা খলীফার সমপর্যায়ভুক্ত না হয়। সুতরাং, তার দায়িত্ব হল কাজের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি খলীফাকে অবহিত করা এবং তারপর তা বাস্তবায়ন করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না খলীফা তাকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন।
মু’ওয়ায়ীন এর দায়িত্বের যে এ ধরনের প্রকৃতি হবে সে ব্যাপারে দলিল হল, একজন ডেপুটি নিযুক্ত প্রতিনিধি হিসাবে তার পক্ষ হয়েই কাজ করেন যিনি তাকে নিয়োগ করে থাকেন। সুতরাং, দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তিনি খলীফার জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারেন না। বরং, তিনি সবসময়ই খলীফাকে তার কাজের ব্যাপারে অবহিত করবেন, যেভাবে উমর (রা) আবু বকরকে অবহিত করতেন যখন তিনি আবু বকর (রা) এর ওয়াযির (সহকারী) ছিলেন। তিনি যে সব কাজ সম্পাদন করতে চাইতেন তা আগে থেকেই আবু বকর (রা) কে অবহিত করতেন এবং তারপর তা বাস্তবায়ন করতেন। খলীফার সাথে আলোচনা বা তাকে অবহিত করার অর্থ এই নয় যে, সহকারীকে সবসময় প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে খলীফার অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে, কারণ তাহলে তা প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক হবে। খলীফার সাথে আলোচনা করার অর্থ হল বিষয়টির ব্যাপারে খলীফাকে অবহিত করা এবং তার সাথে পরামর্শ করা। এটা হতে পারে কোন এক প্রদেশে (উলাই’য়াহ্) একজন যোগ্য গভর্ণর বা ওয়ালী নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে, বাজারে খাদ্য ঘাটতির ব্যাপারে জনগণের অভিযোগের ব্যাপারে কিংবা রাষ্ট্রের যে কোন বিষয় সম্পর্কে। এটা এ রকমও হতে পারে যে, তিনি খলীফার নিকট কোন একটি বিষয় উপস্থাপন করতে পারেন, যাতে করে ভবিষ্যতে খলীফার অনুমতি ছাড়াই খুঁটিনাটি বিষয়সহ এ কাজটি সম্পাদন করা মু’ওয়ায়ীন এর জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে, খলীফা যদি কোন কার্য সম্পাদন না করার জন্য কোন নির্দেশ জারি করেন, তবে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। তবে, খলীফার সামনে কোন বিষয় উপস্থাপনের অর্থ হল একটি প্রস্তাবকে সামনে নিয়ে যাওয়া ও তার সাথে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা; তার অনুমতি প্রার্থনা করা নয়। মু’ওয়ায়ীন ততক্ষণ পর্যন্ত যে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না খলীফা তাকে সেটি করতে বারণ করছেন।
সঠিক সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করা এবং ভুল সিদ্ধান্তকে সংশোধন করার জন্য খলীফাকে অবশ্যই মু’ওয়ায়ীন এর কাজ এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, উম্মাহ্’র বিষয়সমূহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলতঃ খলীফার এবং তার ইজতিহাদের ভিত্তিতেই সমস্ত কার্যাবলী সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে দলিল হল জনগণের দায়িত্বের ব্যাপারে রাসূল (সা) এর হাদীস যেখানে তিনি (সা) বলেছেন,
“ইমাম হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।”
(সহীহ্ বুখারী, হাদীস নং-৮৯৩)
সুতরাং, খলীফাকেই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তিনিই তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। কিন্তু, মু’ওয়ায়ীন জনগণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল নন; বরং তিনি শুধুমাত্র তার কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, জনগণের দায়িত্বের বিষয়টি একমাত্র খলীফার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ কারণে, জনগণের প্রতি তার নিজ দায়িত্ব পালনের স্বার্থেই খলীফাকে অবশ্যই মু’ওয়ায়ীন এর কাজ এবং কর্মদক্ষতার পর্যালোচনা করতে হবে। এছাড়া, প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীরা কখনও ভুল-ভ্রান্তি করতে পারেন এবং খলীফাকে এ ত্রæটি-বিচ্যুতি সমূহ ধরিয়ে দিতে হবে। এভাবে তাকে তার প্রতিটি সহকারীর কাজসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে। সুতরাং, বলা যায় যে, দু’টি কারণে খলীফা মু’ওয়ায়ীন এর কাজ পর্যালোচনা করতে বাধ্য – জনগণের প্রতি তার যে দায়িত্ব তা পরিপূর্ণভাবে পালনের জন্য এবং তার সহকারীদের সম্ভাব্য ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের জন্য। কাজেই, এ দু’টো কারণেই খলীফা তার সহকারীদের কাজসমূহ পর্যালোচনা করতে বাধ্য।
যদি প্রতিনিধিত্বকারী সহকারী কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং খলীফা সেটি অনুমোদন করেন, তখন কোন ধরনের সংশোধন বা পরিবর্তন ছাড়াই মু’ওয়ায়ীন এ কাজটি সম্পাদন করতে পারেন। আর, যদি মু’ওয়ায়ীন এর সম্পাদিত এ কাজের ব্যাপারে খলীফা কোন ধরনের আপত্তি জানান তাহলে এক্ষেত্রে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে। যদি মু’ওয়ায়ীন সঠিকভাবে কোন একটি রায়কে বাস্তবায়ন করেন কিংবা, সঠিক খাতে বা প্রকল্পে কিছু অর্থ ব্যয় করে থাকেন, তবে এক্ষেত্রে মু’ওয়ায়ীন এর মতামতই প্রাধান্য পাবে। কেননা, নীতিগতভাবে এটা আসলে খলীফারই মতামত এবং আইনপ্রয়োগ বা অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে মু’ওয়ায়ীন যা সম্পাদন করেছে তা সংশোধন বা বাতিল করার কোন অধিকার খলীফার থাকবে না। কিন্তু, মু’ওয়ায়ীন যদি অন্য কোন ধরনের কাজ করে থাকেন, যেমন তিনি যদি কোন ওয়ালী নিযুক্ত করে থাকেন কিংবা, (যুদ্ধের জন্য) কোন সেনাদল প্রেরণের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, তবে এ সকল ক্ষেত্রে মু’ওয়ায়ীন এর সিদ্ধান্তকে সংশোধন বা বাতিল করে খলীফা তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। কারণ, খলীফার তার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার অধিকার রয়েছে, সুতরাং তার প্রতিনিধির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অধিকারও তার আছে।
এটা হল মু’ওয়ায়ীন কোন পদ্ধতিতে কাজ করবেন এবং খলীফা কিভাবে তার কর্মকান্ড পর্যালোচনা করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা। মূলতঃ এ বিষয়টি খলীফার যে কাজসমূহকে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় এবং যে কাজসমূহকে কোন প্রকার সংশোধন বা পরিবর্তন করা যায় না তার উপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ, মু’ওয়ায়ীন এর কাজকে মূলতঃ খলীফার কাজ হিসাবেই ধরা হয়ে থাকে। এর ব্যাখ্যা হিসাবে বলা যায় যে, মু’ওয়ায়ীন এর জন্য নিজে শাসন করা কিংবা তার স্থলে অন্য কাউকে শাসক হিসাবে নিযুক্ত করা অনুমোদিত, যেভাবে বিষয়টি খলীফার জন্যও অনুমোদিত। কারণ, শাসনকার্য পরিচালনার সব শর্তই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তিনি নিজে কোন অভিযোগের তদন্ত করতে পারেন বা কাউকে এ ব্যাপারে নিযুক্ত করতে পারেন। কারণ, অভিযোগের সকল শর্তও তার উপর প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া, তিনি স্বয়ং জিহাদের দায়িত্ব নিতে পারেন বা কাউকে এ কাজের জন্য নিযুক্ত করতে পারেন; কারণ, যুদ্ধের সকল শর্তই তার জন্য প্রযোজ্য হবে। তিনি তার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন কার্য সম্পাদন করতে পারেন কিংবা এ কাজ সম্পাদনের জন্য তার পক্ষ হতে তিনি কাউকে নিযুক্ত করতে পারেন; কারণ, জোরালোভাবে কোন মতামতকে উপস্থাপন করা কিংবা ব্যবস্থাপনার সকল শর্তই তার জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে, এর অর্থ এই নয় যে, খলীফাকে পূর্ব থেকে অবহিত করলে মু’ওয়ায়ীন যাই করুক না কেন খলীফা তা সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবেন না। বরং, এর অর্থ হল তিনি খলীফার মতোই ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন; তবে, তিনি খলীফার পক্ষ হয়ে কাজ করেন এবং তার কাজের ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি স্বাধীন নন। সুতরাং, খলীফা মু’ওয়ায়ীন এর সাথে দ্বিমত করতে পারেন কিংবা, তার সম্পাদিত যে কোন কাজ পুনঃমূল্যায়ন, বাতিল বা সংশোধন করতে পারেন; তবে, এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, এটি প্রযোজ্য হবে শুধুমাত্র সেই সব বিষয়ের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়ে খলীফা তার নিজের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কাজ পুনঃমূল্যায়ন বা পরিবর্তন করতে পারেন।
আর, যদি মু’ওয়ায়ীন কোন একটি আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন এবং সঠিক ক্ষেত্রে কোন অর্থ ব্যয় করেন তখন এক্ষেত্রে খলীফা’র কোন আপত্তি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং মু’ওয়ায়ীন এর গৃহীত সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হবে। কারণ, নীতিগতভাবে এটি খলীফা’র নিজস্ব মতামত হিসেবে গণ্য হবে এবং এ সকল ক্ষেত্রে তার নিজের সম্পাদিত বা বাস্তবায়িত কর্মকান্ডকেও তিনি পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারবেন না। সুতরাং, তিনি তার সহকারীর কাজকেও বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারবেন না। অন্যদিকে, মু’ওয়ায়ীন যদি একজন ওয়ালী, প্রশাসক, আর্মি কমান্ডার বা অন্য কাউকে নিয়োগ দেন অথবা তিনি যদি কোন অর্থনৈতিক কৌশল, সামরিক পরিকল্পনা কিংবা শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তখন খলীফা এগুলোকে বাতিল করে দিতে পারেন। কারণ, যদিও এগুলোকে খলীফার সিদ্ধান্ত হিসাবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে, কিন্তু, এ সিদ্ধান্তগুলো এমন শ্রেণীতে পড়ে যেগুলো খলীফা নিজে গ্রহণ করলেও তা পরিবর্তন বা বাতিল করার অধিকার তিনি রাখেন। সুতরাং, এ কারণে তিনি তার সহকারীর সিদ্ধান্তকেও বাতিল করতে পারেন। পরিশেষে বলা যায় যে, মু’ওয়ায়ীন এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা খলীফার জন্য অনুমোদিত। তবে এক্ষেত্রে মূলনীতি হল: খলীফা মু’ওয়ায়ীন এর সে সমস্ত কাজই পুনঃমূল্যায়ন বা পরিবর্তন করতে পারবেন যে সমস্ত কাজ তিনি নিজের ক্ষেত্রে পুনঃমূল্যায়ন বা পরিবর্তন করতে পারেন।
আর, তার নিজের যে সকল কাজ তিনি পুনঃমূল্যায়ন বা পরিবর্তন করতে পারেন না, তার মু’ওয়ায়ীন সে সকল কাজ সম্পাদন করবার পর তিনিও তা পুনঃমূল্যায়ন বা পরিবর্তন করতে পারবেন না।
প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীকে প্রশাসনিক ব্যবস্থার কোন নির্দিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে নিযুক্ত করা যাবে না, যেমন: শিক্ষা বিভাগ। কারণ, প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় আমলা বা সচিবদের, যারা কিনা সরকারী কর্মচারী, শাসক নয়। কিন্তু, প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর পদ হল শাসকের পদ, কর্মচারীর পদ নয়। তার কাজ হল জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনা করা, সরকারী কর্মচারী হিসাবে নিজেকে নিয়োজিত করা নয়।
মূলতঃ এ কারণেই তিনি প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবেন না। অবশ্য তার অর্থ এই নয় যে, তিনি প্রশাসনিক বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, প্রশাসনিক বিষয়ে তার কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ নয়, বরং শাসক হিসাবে তার দায়িত্ব সাধারণ ও বিস্তৃত।
প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর নিয়োগ ও অপসারণ
খলীফার নির্দেশ অনুসারেই প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীকে নিযুক্ত ও অপসারণ করা হবে। খলীফার মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের ক্ষমতার মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে যাবে এবং শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন আমীরের মেয়াদকাল ব্যতীত তারা আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। অন্তর্বর্তীকালীন আমীরের মেয়াদ অতিক্রান্ত হবার পর যদি তারা দায়িত্ব পালন করতে চান তবে নতুন খলীফা কর্তৃক তাদের নিযুক্তিকরণকে নবায়ন করতে হবে। এছাড়া, তাদের বরখাস্তের ক্ষেত্রে কারও কোন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে না; কারণ পূর্বের খলীফা, যিনি তাদেরকে সহকারী হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন, তার মৃত্যুর সাথে সাথেই তাদের ক্ষমতা রহিত হয়ে যাবে।