আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা তাদের পড়ালেখার Subject choice করা থেকে শুরু করে, বন্ধুত্ব নির্বাচন, লেনদেন, বিয়ে শাদী নানা রকম কর্মকান্ডে Standard maintain করার চেষ্টা করেন। সব জায়গায়, সব কিছু আসলে তার সাথে Chill করে না। ‘আমি করব তার সাথে বন্ধুত্ব!’ ‘আমি ওখানে যাব!’ ‘আমি এটা কিভাবে করব!’ এই টাইপ কথা বলে থাকেন। কারণ, এসব করতে তার আসলে আত্মসম্মানে নাড়া দেয়। আর যে কাজ করতে তার আত্মসম্মানে নাড়া দেয় সেই কাজ যত কঠিন হোক না কেন তা সে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
একটু ভিন্ন ভাবে বিষয়টা আলোচনা করা যাক। আল্লাহ তায়ালা সুরা ইউসুফের ২৩ নম্বর আয়াতে আমাদের জানাচ্ছেন, “আর যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো (তাড়াতাড়ি করো)’। সে বলল, আল্লাহর আশ্রয় (চাই)। নিশ্চয় তিনি আমার মনিব, তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমগণ সফল হয় না।”
উপরোক্ত ঘটনাটি হযরত ইউসুফ (আ) এর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনা সমুহের একটি। যখন তার মুনিব, মিশরের আজিজ(শাসক) এর স্ত্রী তাকে দীর্ঘদিন অন্যায় কাজের (ব্যভিচারের) প্ররোচনা দেওয়ার পর সর্বশেষ ও চুড়ান্ত যে আহবান দেন “এসো” তখন ইউসুফ (আ) আল্লাহপাকের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন।
আয়াতটি লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, মুনিবের এই আহবানে ইউসুফ (আ) মাঝে যে বিষয় গুলো ফুটে উঠে তা হচ্ছে,
· তাক্বওয়া
· প্রবল কৃতজ্ঞতা বোধ
ঘটনাটি আরো একটু বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি, ইউসুফ (আ) ছিলেন তখন একজন দাস। মুনিবের হুকুম বিনা বাক্যে পালন করাই ছিল তার মূল কাজ। কিন্তু সাইয়িদেনা ইউসুফ (আ) যদিও শারীরিক ভাবে মুনিবের দাস ছিলেন, মানসিক ভাবে তিনি ততটাই স্বাধীন ও মুক্ত ছিলেন। মুনিবের কাছ থেকে এই নোংরা আহবান পাওয়ার সাথে সাথে তার মধ্যে তাক্বওয়া ও কৃতজ্ঞতা বোধের পাশাপাশি প্রবল আত্মসম্মান জেগে উঠে, ‘কিভাবে তিনি এই কাজ করবেন!’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে একজন দাসের এমন আত্মসম্মান কিভাবে জেগে উঠলো! তার উত্তর হচ্ছে, এই প্রবল আত্মসম্মান এসেছে নবী ইউসুফ (আ) তার নিজের আত্মপরিচয় থেকে। কিভাবে???
একটি মানুষের জন্য তার নিজের আত্মপরিচয় জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আত্মপরিচয়ই তাকে তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে মৌলিক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ড, সিন্ধান্ত এই আত্মপরিচয়ের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষের জীবন সম্পর্কে তার যে মৌলিক ধারনা (Concept) যেমন,
· সে কে?
· সে কোথা থেকে এসেছে?
· এই দুনিয়াতে তার আসা/পাঠানো পিছনের objective টা কি?
· এই দুনিয়ার পর সে কোথায় যাবে?
যখন একজন মানুষ তার জীবন সম্পর্কে এই মৌলিক প্রশ্নের Convincing উত্তর পায় তখন তার জীবন সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা (Concept) তৈরি হয়। এবং সেখান থেকেই তার সঠিক আত্মপরিচয় গঠিত হয়।
যেমন, আজকাল boyfriend-girlfriend culture. যারা এই culture ধারণ করে তার পিছনে তার আত্মপরিচয় কিভাবে গঠিত হল?
প্রথমত, তারা তাদের জীবনের সকল functions থেকে দ্বীনকে পৃথক করে ফেলে বা সেকুলারিজম কে তার চিন্তার মৌলিক উৎস বানিয়ে ফেলে। কারণ, তাকে বুঝানো হয় ‘দুনিয়াতে এসেছো একবারই, আর আসা হবে না। So, have fun! Enjoy yourself! Weekend এ গিয়ে জুমা পড়বা বা শেষ জীবনে একবার হজ্ব করে নিবা। সাত খুন মাফ।’ এবং এটাই হয়ে থাকে আমাদের বর্তমান বাস্তবতা। আমরা নিজেদের মেধা খাটিয়ে একবারও চিন্তা করতে পারি না যে, আমরা যা চিন্তা করছি বা যেভাবে চিন্তা করছি সেটা সঠিক কিনা। আমাদের ভুলিয়ে রাখা হয়েছে, আমরা কে? কারণ, আমরা যদি একবারও বুঝতে পারি ‘আমরা আল্লাহ পাকের কাছ থেকে এসেছি সুনির্দিষ্ট objective পূরণের জন্য, তার ইবাদাত করার জন্য, আমরা আবার তারই কাছে ফিরে যাব’ তাহলে আমরা আমাদের আসল আত্মপরিচয় পাব। আর এই সঠিক আত্মপরিচয় জানার পর নষ্ট সেকুলার চিন্তাকে গ্রহন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে আমাদের আত্মসম্মানে নাড়া দিবে।
তাছাড়া, সম্মানিত ইউসুফ (আ) তার জীবন সম্পর্কে সঠিক ও স্বচ্ছ ধারনার পাশাপাশি তিনি জানতেন এই নোংরা কাজ তার দ্বারা শোভা পায় না। তিনি খুব ভাল করেই জানতেন তিনি কে? ইউসুফ (আ) এর বাবা ছিলেন একজন সম্মানিত নবী ইয়াক্বুব (আ), তার দাদা ছিলেন সম্মানিত নবী ইসহাক্ব (আ), তার পর দাদাও ছিলেন সম্মানিত নবী ইব্রাহিম (আ)। যিনি নবী পরিবারের একজন সদস্য তিনি এরকম কাজ কিভাবে করতে পারেন। একজন দাস হয়েও তার কি পরিমান আত্মসম্মান, একবার চিন্তা করুন।
কিন্তু আমরা! আমরা তো শারীরিক ভাবে দাস নই। বরং আমাদের গোটা জাতি এক চরম মানসিক দাসত্বে বন্দী। কারণ, আমরা আমাদের আত্মপরিচয় ভুলে পশ্চিমাদের দেখানো কুফরি আদর্শ, সেকুলারিজমকে গ্রহন করেছি, যা আমাদের জীবনের সকল কর্মকান্ড ও সিন্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা বুঝে বা না বুঝে এর অন্ধ অনুসরণ করছি। আমাদের বিন্দু মাত্র আত্মসম্মানে লাগছে না যে ইসলামকে বাদ দিয়ে আমরা নষ্ট আদর্শ গ্রহন করছি। আমাদের একটুও আত্মসম্মানে লাগছে না যেখানে আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা) রেখে যাওয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা খিলাফাত পুনঃ প্রতিষ্ঠা না করে আমাদের মতো একজন মানুষের তৈরি করা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত তথা খিলাফত বিদ্যমান নেই, তবুও আমরা নিষ্ক্রিয়।
এটাই মূলত বর্তমান তরুন ও যুবসমাজের অবক্ষয়ের মৌলিক কারণ। কিন্তু একসময় মুসলিমরা পুরো বিশ্বের কাছে Idol ছিল। কারণ, তারা তাদের জীবনকে আক্বীদার ভিত্তিতে গঠিত করেছিলেন। দুনিয়াতে আসা বা পাঠানোর যে objective ছিল আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত ও সম্মুন্নত রাখা, সেই কাজটিই তারা করে গিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তারা সফলকাম হয়েছেন। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,
“তোমরাই দুনিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, মানব জাতিকে কল্যাণের দিকে নেওয়ার জন্য তোমাদের বাছাই করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে আর অসৎ কাজের নিষেধ করবে, আর আল্লাহর উপর ঈমান আনবে।” (সুরা আলে ইমরান : ১১০)।
আমরা যদি আবার দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হতে চাই যারা পুরো মানব জাতিকে Guide করবে, তাহলে সঠিক আত্মপরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। উম্মাহর হারিয়ে যাওয়া আত্মসম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা কতৃক একমাত্র বৈধ শাসন ব্যবস্থা খিলাফত পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হারানো গৌরব ও সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক।