কোথায় সেই শাসক যে বলবে, ‘যদি কর্ণফুলির তীরে একটি বকরী পিছলে পড়ে তবে আমি জিজ্ঞাসিত হবো’!

গত কয়েকদিন পূর্বে আমরা দেখেছি চলমান বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও পাহাড় ধ্বসে চট্টগ্রাম শহর ও এর পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকাতে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা সহ প্রায় শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। এ দুর্যোগে নিহত সেনা কর্মকর্তাসহ সকলের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন।

হে মুসলিমগণ! আপনারা জানেন চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক জনগণ রয়েছে যারা বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতাপ্রবণ ও পাহাড়সংলগ্ন বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ এলাকাসমূহতে বসবাস করছেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখব, জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট জটিলতা ও পাহাড়ধ্বসে মৃত্যুর ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়। প্রতি বছর পাহাড় ধ্বস ও অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ফলে মৃত্যু হয় আর এবারও সেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হল শতাধিক প্রাণ। এ ব্যাপারে সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করলে এ ধরণের মৃত্যুকে নেহাতই মৃত্যু বলা যাবে না বরং এটি হত্যাকাণ্ড/খুন। রাষ্ট্রের উদাসীনতা, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সদিচ্ছার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কথাবার্তা এর প্রমাণ বহন করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলছেন- “আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, সচেতনতামূলক মাইকিং করেছি, এটা তো রিমোট কন্ট্রোল না যে যখন তখন পরিবর্তন করা যাবে”। ঠিক একই ভাবে কিছুদিন আগে যালিম হাসিনা ‘ঘুর্ণিঝড় মোরা’ পরবর্তী সময়ে বলেছিল-“ বিএনপি আমলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হয়েছিল বেশি, আমাদের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার ফলে ক্ষতি হয়নি”। দুর্যোগ নিয়ে এদেশের শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অধনস্তদের নানামুখী বিভ্রান্তিমূলক কথা বার্তা এটা প্রমাণ করে এরা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন এবং কেবলমাত্র রাজনৈতিক বড়াই করার জন্য সময়ে সময়ে তা ইস্যু হয়। এসব যালিম শাসকগোষ্ঠী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলতে শুধুমাত্র আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ ও শুকনো খাবার প্রদান কে মনে করে। ফলস্বরূপ জনগণ এদের কথায় বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতেও অনীহা প্রকাশ করে। জনগনের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে এসব গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী ও ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন-

“মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ্‌ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।” [সূরা আর রুম- ৪১]

হে সম্মানিত মুসলিম উম্মাহ! এসব শাসকগোষ্ঠী বছরের পর বছরের ধরে জনগণের সাথে পরিষ্কার প্রতারণা করে চলেছে। জনগণের উন্নয়নের বিভিন্ন রঙিন প্রতিশ্রুতি নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসে, কিন্ত ক্ষমতায় আরোহণের পর এরা কেবল এদের সম্পদের আখের গুছাতেই ব্যস্ত থাকে। একটু চিন্তা করে দেখুন, পাহাড় ধ্বসপ্রবণ ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে জনগণকে নিরাপত্তা প্রদাণ করার জন্য কি বছরের পর বছর সময় লাগে? আরো চিন্তা করে দেখুন, নদী দিয়ে ঘেরা চট্টগ্রামের মতো একটি শহরের জলাবদ্ধতা দুর করা কি খুব কষ্টকর কোনো কাজ? যেখানে কোটি টাকার ফ্লাইওভার প্রজেক্ট খুব সহজেই নির্মান হয়ে সেখানে জলাবদ্ধতা দূর করতে কিসের প্রতিবন্ধকতা! মূলত যেসব প্রজেক্টে এসব শাসকগোষ্ঠী ও এদের সাঙ্গপাঙ্গরা প্রচুর লাভবান হয় এবং জনগণকে বাহ্যিক উন্নয়ন দেখিয়ে আই-ওয়াশ করা যায় সেসব প্রজেক্টই খুব দ্রুত পালে হাওয়া পায়। আর জনগণের মূল সমস্যা আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে। অথচ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুরো শহরের মাঝখান দিয়ে পশ্চিম হতে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত কালভার্ট ও মোটরচালিত পাইপ দিয়ে সহজেই জলাবদ্ধতা দুর করা যায়। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট খাল পুনরুদ্ধারেরও বড় কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও মানসিক সক্ষমতা যা এসব শাসকগোষ্ঠীর নেই।

এ সক্ষমতা রয়েছে ইসলামি শাসনব্যবস্থার। আমরা দেখেছি মদীনায় ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবার পর মদীনার শাসক হিসেবে সর্বপ্রথম যে কাজগুলো রাসূলুল্লাহ (সা) করেছিলেন তা ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। এছাড়াও আমরা দেখেছি উমর (রা)-এর মতো শাসক যিনি (আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের মতো) তৎকালীন সময়ের খিলাফত রাষ্ট্রের সীমানা অঞ্চল তথা ইরাকের ব্যাপারে বলেছিলেন, “যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি বকরীও পা পিছলে পড়ে তবে আমি উমর এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবো।” কোথায় সেই শাসক যে বলবে, ‘যদি কর্ণফুলির তীরে একটি বকরী পিছলে পড়ে তবে আমি জিজ্ঞাসিত হবো’! একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই এধরনের শাসনব্যবস্থা ও শাসক উপহার দিতে পারে।

হে উম্মতের সম্মানিত সেনাসদস্যবৃন্দ! জনগণের এ বিপদে নিজেদের জীবন বাজি রেখে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে আপনাদের জীবন দিয়েছেন। জনগণকে পাহাড় ধ্বস থেকে রক্ষা করতে যেভাবে জীবন বাজি রেখে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন ঠিক একইভাবে জনগণের উপর চেপে বসা গণতান্ত্রিক যুলুমের শাসন ও হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে ইসলামের ছায়াতলে এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আপনাদের আর কত সময় লাগবে!

হে সেনা অফিসারগণ, আমরা আপনাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই, আপনারা সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নুসরাহ প্রদান করুন। ফিরিয়ে আনুন সেই আকাঙ্ক্ষিত শাসনব্যবস্থা যা আপনাদের শক্তিশালী করবে এবং যাকে আপনারা শক্তিশালী করবেন। ফিরিয়ে আনুন ইসলামের ইতিহাসের সেইসব শক্তিশালী শাসকদের যাদের স্যালুট দিতে আপনাদের বুক গর্বে ভরে উঠবে। আল্লাহ আমাদের শীঘ্রই সেই সময় দেখার তৌফিক দান করুন। আমীন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, 

“যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।” (সূরা আনকাবুত: ৬৯)

Leave a Reply