শরীয়াহ প্রদত্ত দায়িত্ব হিসেবে দলটি সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে। আমরা এখানে এমন কোন দলের দায়িত্ব নিয়ে আলোকপাত করব না যা আংশিকভাবে শরীয়াহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে, যেমন: দরিদ্র মুসলিমদের সাহায্য করবার জন্য গড়ে উঠা দাতব্য প্রতিষ্ঠান, নির্দেশনা ও উপদেশ দেবার জন্য গড়ে তোলা সংগঠন, মসজিদ নিমাের্ণর জন্য প্রতিষ্ঠান, কুরআন শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। বরং আমরা এমন একটি দল নিয়ে কথা বলব যারা পুরো দ্বীন বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাধে তুলে নেবে। আর এটা করা হবে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যা মুসলিমদের জীবনে ইসলামকে বাস্তবায়ন করবে। এর দায়িত্ব হবে শরীয়াহ প্রদত্ত সব মারুফাত বাস্তবায়ন করা ও সব মুনকারাতকে দূরীভূত করা। এই রাষ্ট্র তার ভেতরে ইসলামকে বাস্তবায়ন ও এর বাইরে পুরো বিশ্বে ইসলামকে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামকে জীবনে বাস্তবায়ন করবে।
ইসলামী রাষ্ট্রের রয়েছে শরীয়াহ প্রদত্ত বিশাল দায়িত্ব যা ইসলামি রাষ্ট্রের উপস্থিতি বাস্তবায়িত থাকলে হয় ও অনুপস্থিতি থাকলে বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিত্যক্ত হয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত দল গঠনের গুরুত্ব তার এই লক্ষ্যের কারণেই। ইসলামি রাষ্ট্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে যদি কোন দল রত না হয় তাহলে মুসলিমগন আল্লাহ প্রদত্ত সব ইসলামী গুরুদায়িত্বকে অবহেলা করল এবং এর চেয়ে বড় কোন গুনাহের কাজ আর কিছু হতে পারে না।
যখন কোন মুসলিম ইসলামী জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে না তখন কোন যিনাকারী যখন যিনা করে, চোর চুরি করে, শাসক অত্যাচার করে, নারীরা অর্ধনগ্ন অবস্থায় রাস্তায় বের হয়, দূনীর্তি ব্যাপকতর হয়, জিহাদ বন্ধ হয়ে যায়, কাফেররা মুসলিমদের অত্যাচার করে, মুনকার বি¯তৃতি লাভ করে এবং মারুফ সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন তার গোনাহ ঐ মুসলিম ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে। এর কারণ হল মুসলিমরা আল্লাহ নির্দেশিত খোলাফায়ে রাশেদীন প্রতিষ্ঠার কাজকে অবহেলা করবার কারণে এই মুনাকারাতসমূহ ব্যাপকতা পেয়েছে। ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রত্যেকটি জিনিসকে তার নির্ধারিত জায়গায় স্থাপন করবে, মুসলিমদের জীবনে শরীয়াহকে বাস্তবায়ন করবে, ঈমানকে মুমিনদের হৃদয়ে প্রোথিত করবে এবং তাকওয়া ও ইহসানের ফলকে আবাদ করবে। সুতরাং এই সামষ্টিক কাজটি একটি বাধ্যবাধকতা—যার মাধ্যমে শোচনীয় অবস্থার পরিবর্তন ও এর সংশোধন নির্ভরশীল। এই বাধ্যবাধকতা উম্মাহকে তার পতনের অতল গহ্বর থেকে টেনে তুলবে এবং পথের দিশাপ্রাপ্ত ও অন্য জাতির জন্য আলোর দিশারীরূপে হারানো গৌরব ও ক্ষমতা পুণরুদ্ধার করবে।
আজকের এ করুণ পরিণতি থেকে উদ্ধার করবে যে বাধ্যবাধকতা, তার চেয়ে বড় পুরষ্কার মুসলিমদের জন্য আর কী হতে পারে? এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
‘আল্লাহ যখন তোমাদের দ্বারা কোন ব্যক্তিকে হেদায়াত দান করে তখন তা লাল উটের চেয়েও উত্তম।’ (আল বুখারী)
মুসলিমদের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করা ও তাদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা, আর এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রশান্তিদায়ক দ্বীনে প্রবেশের জন্য লোকদের জন্য সব দরজা উন্মুক্ত করার চেয়ে উত্তম কাজ আর কী হতে পারে। যখন রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে জিহাদের সমতুল্য কোন কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি বললেন,
‘‘না, আমি এর সমতুল্য কোন কিছুকেই মনে করি না।’ তখন তিনি (সা) ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যখন একজন মুজাহিদ জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়ে তখন কি তুমি মসজিদে প্রবেশ করে ক্বিয়াম করতে থাক, কিন্তু ক্লান্ত হও না? রোজা রাখ কিন্তু ইফতার কর না?’ লোকটি তখন বলল, ‘এগুলো না করে কে থাকতে পারে?’’ (বুখারী)
রাসূল কী বলেননি,
‘সর্বোত্তম জিহাদ হল অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা।’
রাসূল (সা) কী একথা বলেননি,
‘শহীদদের সর্দার হামযা এবং সেই ব্যক্তি যে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের জন্য দাড়াল এবং তাকে হত্যা করা হল।’ (আল হাকীম)
মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে নীরব থেকে তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে দেয়া কোন মুসলিমের পক্ষে সম্ভব নয়। যদি নীরব থাকে তাহলে সে তো হাদীসের বর্ণণার মত হতে পারবে না, যেখানে রাসূল (সা) বলেছেন,
‘…. তারা একটি দেহের মত, যখন এর একটি অংশ ব্যাথা পায় তখন পুরো দেহ তাতে সাড়া দেয় ও জ্বর অনুভব করে ও নিঘূর্ম রাত কাটায়।’ (মুসলিম)
‘…. এমন একটি প্রাসাদ যেখানে একজন আরেকজনকে শক্তিশালী করে।’
সুতরাং মুসলিমদের সামনে রয়েছে মহাপুরস্কার অথবা বিশাল পাপ উভয় সুযোগ। আর এটাই ইসলামে (কোন কিছু) ফরয হবার শর্ত। এটি অন্যান্য ফরযের মতই। যখন মুসলিমগন এটা পালন করবে তখন পুরষ্কারপ্রাপ্ত হবে এবং যখন পরিত্যাগ করবে তখন শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমরা কোন আংশিক সামষ্টিক ইবাদতের কথা বলছি না যা ইসলামের একটি বা দু’টি হুকুম বাস্তবায়ন করবে। বরং আমরা এমন একটি দাওয়াতের কথা বলছি যা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামকে বাস্তবায়ন করবে।