খিলাফতই ইসলাম প্রতিষ্ঠার একমাত্র পদ্ধতি

“তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎকাজে আদেশ করবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে”। (আল ইমরানঃ ১১০)

সময়ের শুরু থেকেই যুগে যুগে পথহারা মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ পাক অসংখ্য নবী-রাসূলকে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার যাবতীয় মিথ্যাচার, যুলুম এবং মিথ্যা উপাস্য থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষ যাতে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপাসনা করতে পারে এবং সিরাত্বাল মুস্তাক্বিমের অনুসারী হতে পারে এজন্য পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে আল্লাহ নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন। তৎকালীন আরবের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে যখন মানুষ একত্ববাদের পরিবর্তে মূর্তিপূজা এবং নানারকম অনাচারে ডুবে গিয়েছিল তখন শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আগমনে পৃথিবীর বিপন্ন মানবতার জন্য এক নতুন আশার সঞ্চার করে। নব্যুয়াত প্রাপ্তির পর মক্কায় দীর্ঘ তের বছর নিরন্তর তাওহীদের দাওয়াত এবং অত্যাচারী শাসকদের যুলুম নির্যাতন তাওহীদের দাওয়াতকে করেছিল আরো বেশি সুসংহত। অবশেষে আল্লাহর সাহায্যে মদীনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলাম পুরো জাজিরাতুল আরবের এক শক্তিশালী এবং প্রতাপশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পরবর্তীতে রাসূল (সা) এর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে ইসলাম ইরাক, শাম, পারস্য ও রোমানের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখে। উমাইয়া, আব্বাসী এবং উসমানীয় খিলাফতের সময় ইসলাম উত্তর আফ্রিকা, স্পেন, মরক্কো গ্রীস, সিসিলি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সামরিক দিক দিয়ে ইসলাম পৃথিবীর ইতিহাসকে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করেছে এবং নিপীড়িত জনগোষ্ঠীদের জন্য ত্রাতা হিসেবে বরাবর আবির্ভূত হয়েছে।

কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে ঘটে মুসলিম ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন করে দেয়া সেই ঘটনাটি। ১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ, সাম্রাজ্যবাদী সম্মিলিত কুফফার শক্তি ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের নিরন্তর প্রচেষ্ঠায় বিশ্বাসঘাতক মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক তুরষ্কে উসমানীয় খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটায়। ১৯২৪ সালের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দালাল শাসকদের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে সৃষ্টি করেছে অসংখ্য কৃত্রিম সীমানা এবং অসংখ্য জাতির পিতা যারা কুফফারদের পা চাটতে কোন রকম কার্পণ্য করেনি। তারা মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে অন্ধ জাতীয়তাবাদের বিষাক্ত বীজ যা মুসলিমদের দেহকে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। খিলাফাহ ধ্বংসের পর ১৯৪৮ সালে মুসলিমদের রক্ত দ্বারা বিজিত বায়তুল মাকদিসকে ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে তারা আজ অবধি মুসলিম উম্মাহর হাজার হাজার নিরীহ ভাই-বোনদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে। মূলত খিলাফাহ ধ্বংসের পরবর্তী ইতিহাস মুসলিমদের অপমানকর, লজ্জাজনক এবং দুর্দশার ইতিহাস। ইরাক, আফগানিস্তান, বসনিয়া, চেচনিয়া, গুজরাট, হায়দ্রাবাদের অগণিত শহীদের আত্মদানে মুসলিমরা নীরব দর্শক ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। গুয়ান্তানামো, আবু গারিব কারাগারে আজ উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উপর চরম নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে।

কুফফাররা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যাবর্তন টের পেয়ে মুসলিমদের উপর অধিক মাত্রায় খড়গহস্ত হয়েছে এবং তাদের অত্যাচারের হাতকে করেছে প্রসারিত। মুসলিম ভূমিগুলোর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি আজ তাদের ইশারায় পরিচালিত হচ্ছে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, 

“নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সত্যসম্বলিত গ্রন্থ দিয়ে যাতে করে আল্লাহ তোমাকে যা দেখিয়েছেন তা দিয়ে তুমি মানবজাতিকে শাসন করতে পার”। (সূরা নিসাঃ১০৫)

আল্লাহ তায়ালার এ হুকুম পৃথিবীতে বাস্তবায়ন করার যে নির্দেশ তা খিলাফত রাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব নয়।

 রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, 

“আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো যে তার কাঁধে খলিফার বায়াত নেই তবে তার মৃত্যু হচ্ছে জাহেলি মৃত্যু”। (মুসলিম)

আজ মুসলিমরা তাদের দুর্দশার কারণ উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং তারা আবারও সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে যেটি আল্লাহর রাসূল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদীনায়।

মুসলিম ভূমিগুলোর রাজধানীতে আজ আবারো তরুণরা ইসলামের ‘রায়া’ এবং ‘লিওয়া’ হাতে জড়ো হচ্ছে ইসলামের সেই সোনালী ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যার প্রতিশ্রুতি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) দিয়েছেন।

তিনি (সা) বলেন,

“তোমাদের মধ্যে নব্যুয়াত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন……………তারপর ফিরে আসবে নব্যুয়াতের আদলে খিলাফত” (আহমদ)

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply