খাদেমুল আমেরিকার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর তথাকথিত ইসলামিক জোট- পশ্চিমা কুফর শক্তির ঘৃণ্য চক্রান্তের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত

বাস্তবতা:

গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫) সৌদি আরব ৩৪টি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর, আফগানিস্তান ও অন্যান্য মুসলিম দেশে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একটি সামরিক জোটের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং বলে যে, বাংলাদেশ এই জোটে অংশগ্রহনের জন্য আন্তরিকভাবে সম্মত হয়েছে কারণ এটা ‘সহিংস উগ্রবাদের’ বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অন্যকথায়, ইসলামের বিরুদ্ধে যালিম হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

কারণ:

মার্কিন নেতৃত্বাধীন  ক্রুসেডার পশ্চিমারা শক্তিশালী খিলাফত রাষ্ট্রের দাবিতে নিষ্ঠাবান মুসলিমদের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে অংশগ্রহণকে ঠেকাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে যা সিরিয়াতে তীব্ররূপ ধারন করেছে। সকল বিকল্প ব্যবহার শেষে, অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ঘৃণ্য মার্কিনীরা এখন শুধু সিরিয়াতেই নয় প্রয়োজনে মুসলিম বিশ্বের যেকোন প্রান্তে সত্যনিষ্ঠ মুসলিমদের জাগরণকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে মুসলিম সেনাবাহিনীর গভীরতর অংশগ্রহণ চাচ্ছে, এবং তাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে এই ধরনের সামরিক জোটের উত্থান দেখা যাচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব এশ কার্টার মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে আরও সমর্থন জোগানোর জন্য তার আঞ্চলিক সফরের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার তুরষ্কে ইনকিরলিক বিমানঘাটিতে পৌছানোর পর তৎক্ষণাৎ এই জোট ঘটেেনর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে: “এই জোটকে হুবুহু আমাদের নীতির সাথে এক মনে হচ্ছে, যা আমরা বেশকিছুদিন যাবৎ আকাঙ্খা করছিলাম, যা আইএসআইএল-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুন্নী আরব দেশগুলো কর্তৃক অভিযানে বড় অবদান রাখবে।” 

সচেতন উম্মাহ’র যা জানা উচিত:

উম্মাহ্’কে পেছন দিক থেকে ছুরিকাঘাত করতে সৌদি রাজতন্ত্র সবসময় কেন্দ্রীয় ভুমিকা পালন করে আসছে, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে চক্রান্তের মাধ্যমে খিলাফত রাষ্ট্র ধ্বংসের মাধ্যমে যার যাত্রা শুধু হয়। এবং এখন ২য় খিলাফতে রাশেদাহ্’র প্রত্যাবর্তন যখন আসন্ন, তখন কৃত্রিমভাবে গঠিত মুসলিম জাতি-রাষ্ট্রসমূহের বিশ্বাসঘাতক শাসকেরা খিলাফতের জন্য উম্মাহ্’র আকাঙ্খা ও সংগ্রামের উপর চরম ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে স্বঘোষিত ‘খাদেমুল হারামাইন’(!)-এর নেতৃত্বের অধীনে একত্রিত হয়েছে।

যখন পশ্চিমাদের জারজ সন্তান ইসরাইল অর্ধশতকেরও বেশী সময় ধরে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের রক্তপাত ঘটাচ্ছে, আমাদের প্রথম কিবলা আল আকসাকে অপবিত্র করছে, তখন মুসলিম শাসকেরা তাদের সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে বন্দী করে রেখেছে- যদিও সংখ্যা ও সাহসিকতায় ইয়াহুদীদেরকে তারা অনেক আগেই অতিক্রম করেছে। যখন মূর্তিপূজারী হিন্দুরা মুসলিমদেরকে কসাইয়ের মত হত্যা করেছে এবং উম্মাহ’র সম্মানিত মুসলিম নারীদের অসম্মান করেছে তখন শাসকেরা মুহম্মদ বিন কাসিমের উত্তরসুরি মুসলিম সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করেনি। যখন মায়ানমারের বৌদ্ধ মুশরেকরা হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করেছে, তাঁদের দেহগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছে মুসলিম শাসকেরা তখন খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসুরি মুসলিম সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করেনি। যখন মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের মুসলিমদের পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছিল ও তাদেরকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছিল তখন মুসলিম শাসকেরা মুসলিম সেনাবাহিনীকে সেখানে প্রেরণ করেনি। যখন আমেরিকা ও পশ্চিমা ক্রুসেডাররা আফগানিস্তান ও ইরাককে দখল করল এবং মুসলিমদের রক্তের বন্যা বইয়ে দিল তখন মুসলিমদের রক্ষায় শাসকেরা সাইয়্যুদনা সুহাদা(শহীদদের সর্দার) হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের উত্তরসুরী মুসলিম সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করেনি, বরং তারা যথাসম্ভব ক্রুসেডারদের সহায়তা করেছে।

যখন নির্যাতিত মুসলিমদের প্রয়োজনে ও জালিম কাফিরদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করার শারী’য়াহগত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছিল তখন জালিম শাসকগণ নিজস্ব দূর্বলতা ও উপনিবেশিকদের বেঁধে দেয়া সীমান্তের পবিত্রতা লঙ্ঘিত হওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু আজকে তাদের সত্যিকারের প্রভূ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা যখন ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে তখন দূর্বলতা ও ‘পবিত্র’ সীমান্তের অজুহাতকে অতিক্রম করে তারা সাড়া দিয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘…আবার আসবে নবুয়্যতের আদলের খিলাফত।’ (মুসনাদে আহমদ)

পুরো পৃথিবী এক হয়েও প্রতিশ্রুত খিলাফত ফিরে আসাকে রুখতে পারবে না। কারণ ইতিহাস স্বাক্ষী জালিম ফিরাউন মুসা (আ)এর উত্থানকে প্রতিহত করতে কোন প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নে ছিলেন সবচেয়ে উত্তম কৌশলী। আল্লাহ(সুওতা) বলেন, 

‘যাদেরকে(বনী ইসরাইলকে) দূর্বল করে রাখা হয়েছিল, আমার ইচছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী করার। এবং তাদেরকে ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত।’ (সূরা কাসাস:৫-৬)

মুসলিম উম্মাহ ও এর সেনাবাহিনীকে অবশ্যই এসব জালিম বিশ্বাসঘাতক শাসকদের সহযোগী ও সমর্থনকারী হওয়া যাবে না এবং তাদের প্রত্যাখান করতে হবে । মুসলিম সেনাবাহিনীকে অনতিবিলম্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হতে হবে এবং সেই অতুলনীয় আল্লাহ’র সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত হতে হবে যা তাদের আগে কেবলমাত্র মদীনার আনসারগন অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করেছিল। আল্লাহ(সুওতা) বলেন, 

‘হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।’(সূরা মুহম্মদ:৭) 

রাফীম আহমেদ

Leave a Reply