রমজান মাস – মুনাফা নাকি তাকওয়া অর্জনের মাস?

রমজান মাস তাই বিভিন্ন মহলে সাড়া পড়ে গেছে,

১. কাপড় ব্যবসায়ীরা নতুন মডেলের কাপড় সংগ্রহে ব্যস্ত। সাড়া বছর এই একটি মাসের জন্য তারা অপেক্ষা করে। পুরাতন কাপড় সরিয়ে নতুন কাপড়ে শোরুম সাজাচ্ছে ক্রেতা আকৃষ্টে চলছে বিভিন্ন কৌশল। দাম ও পাওয়া যায় অন্য মাস থেকে দ্বিগুন বা তিনগুন।

২. নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এর ব্যবসায়ীরা যেমন: ছোলা, চিনি, খেজুর, বিভিন্ন ডাল, তেল ইত্যাদি মজুদ করা হয়েছে যাতে রমজানে চওড়া দামে বিক্রি করা যায়। দাম বাড়ছে ২-২০ টাকা বেশি। যেন এ মাস না হলে আর কখন?

৩. সবজির বাজার তো ২০ থেকে ৩০ টাকার স্থলে ৬০ থেকে ৭০ টাকা করতে হবে, তা না হলে পোষাবে না।

৪. বিভিন্ন আফিসে কর্মচারীরা, থানায় পুলিশ, রাস্তায় ট্রাফিকরা কেউ বাদ নেই। এ মাস যেন সোনার হরিণ টাকা আয়ের, এ মাস না হলে পুরো বছরটাই বৃথা।

এ যেন এক অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের মৌসুম। কিন্তু প্রশ্ন হল এটা কি অর্থ উপার্জনের মাস না অন্য কিছু ? ? ?

আসুন দেখি এই রোজার ইবাদতের হুকুমদাতা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কোরআনে কী বলেছেন,

হে মুমিনগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হল যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারা- ১৮৩)

আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের উপর রোজা ফরজ করেছেন যেন আমারা আল্লাহ্‌র নৈকট্য অর্জন করতে পারি। এই শিক্ষা নিয়ে বাকী সারা বছর যেন মহান আল্লাহর হুকুম মত নিজের ও সমাজের জীবন সাজাতে পারি। এই জন্য রোজা ও রমযান মাস, বৈষয়িক মুনাফা অর্জনের জন্য নয়।

বর্তমানে রমজান মাসে মুসলমানদের জীবনে দু-মুখো নীতির কারণ হল:

১. বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের মূল ভিত্তি হয়ে গিয়েছে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বস্তুগত লাভ-ক্ষতি। যা নগদে পাই তাই লাভ আর না অর্জন করতে পারলে ক্ষতি।

২. যেহেতু পুঁজিপতিদের সম্মানে এই সমাজব্যবস্থা তাই তারা যে কোন উপায়ে পুঁজি বৃদ্ধিতে ব্যস্ত। আর সরকারের একটি বড় অংশ যেহেতু ব্যবসার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আর বাকিরা যেহেতু তাদের দ্বারা কোন না কোনভাবে উপকৃত তাই তাদের টিকে থাকতে হলে পুঁজি বৃদ্ধি বা তাদের স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

সমাধান:

– জনগণের মুষ্টিমেয় অংশের স্বার্থ রক্ষাকারী গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে অপসারণ করে সর্বসাধারণের স্বার্থ রক্ষাকারী মহান আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা তথা খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য হবে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি। আর মানুষের কর্মের ভিত্তি হবে হারাম ও হালালের ভিত্তিতে আল্লাহ্র হুকুম পালন। যা মানুষের মাঝে ইসলামি মানসিকতা তৈরি করবে ও ফলশ্রতিতে তাকওয়া অর্জনের দিকে নিয়ে যাবে। সমাজে তৈরি হবে ঈমানের পরিবেশ।

– খিলাফত ব্যবস্থা মজুদদারি বন্ধ করে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে যা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখবে যা অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যকে নির্মূল করে দিবে। খিলাফত রাষ্ট্রের কাজী উল মুহতাসিব যা সবসময় মনিটর করবে।

– খিলাফত ব্যবস্থার মানদণ্ড যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি তাই খলীফা পণ্যে ভেজাল রোধ ও রমজানকে কেন্দ্র করে অত্যধিক মুনাফা অর্জনের অসুস্থ প্রবনতায় বাধা দিবে ও জনগণকে রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্থাৎ তাকওয়ার পরিবেশ তৈরিতে গণমাধ্যমে ও জনসমাগম স্থলে ও ঘরে ঘরে সচেতনতা তৈরি করবে।

– খিলাফতই পারে একমাত্র এই দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যবস্থা সমূলে ধ্বংস করে সকল প্রকার অনাচার মুক্ত করে একটি নিরাপদ জীবন উপহার দিতে।

তাই রমজানের প্রকৃত কারণ উপলব্ধি করে আমরা এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনি যা রমজানের প্রকৃত শিক্ষা আমাদের শিখিয়ে সেই কাঙ্খিত তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করবে। রমজান ব্যবসায়ের মাস নয়, তাকওয়ার মাস হিসেবে আবার সমাজে ফিরে আসবে। আল্লাহ্‌ আমাদের খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার কর্মী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

Leave a Reply