পত্রিকাগুলোতে মে মাসে মানবপাচার বিষয়ে যেসব খবর আসে:
১. থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গলা-পচা ২৬টি লাশরে মধ্যে ১০টি বাংলাদশির, ১৬টি রোহিঙ্গাদের। ওই বন্দশিবিরে দুজন জীবিত থাকাতইে হয়েছে সমস্যা। তাঁরাই জানিয়েছেনে, লাশগুলোর অন্তত ১০টি বাংলাদশির।সেখানকার আরকেটি গণকবরে মেলে ৫০ জনের লাশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই জঙ্গল থেকেই ৩৭ জন বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। (প্রথম আলো, ৫মে, ২০১৫)
২.গত মাসে ভূমধ্যসাগরে ৯০০ জন যাত্রী নিয়ে শরণার্থীদের একটি জাহাজ ডুবে যায়। জীবিত উদ্ধার পায় মাত্র ২৮ জন, যাদের একজন বাংলাদেশি; বেশির ভাগই আরব ও আফ্রিকার যুদ্ধবধ্বিস্ত দেশের মানুষ। বাংলাদেশেও কি যুদ্ধ চলছে? তাহলে এ দেশের উদ্বাস্তু মানুষের লাশ কেন সীমান্তে, থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার জঙ্গলে, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে, গ্রিক ও তুরস্কের র্পবত ও বরফের প্রান্তরে আর মহাসমুদ্রের পানিতে? জাতিসংঘের হিসাবে অভিবাসী শ্রমিক বাদেই গত ৩০ বছরে এ দেশের ১০ লাখের বেশী পুরুষ-নারী-শিশু পাচার হয়ে গেছে বিভিন্ন দেশে।( প্রথম আলো, ৫মে, ২০১৫)
৩. আট বছরে সমুদ্রপথে কমপক্ষে আড়াই লাখ লোক পাচার হয়ে গেছে, এদের মধ্যে কত শত নির্যাতিত ও নিহত হয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। (ডেইলি স্টার)
৪. উপকূল থেকে অবৈধ অভিবাসী নৌকা তাড়িয়ে দেয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া যুদ্ধ জাহাজ ও যুদ্ধ বিমান মোতায়েন করেছে।(মানবজমিন, ১৯ মে, ২০১৫)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
“অচিরেই তোমাদের আক্রমণ করতে লোকেরা একে অপরকে আহ্বান করবে যেভাবে শিকারী প্রাণী শিকারের দিকে অন্য শিকারীদের আহ্বান করে”। কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো, সে সময়ে আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এরূপহবে কি? তিনি (সা) বললেন, “না, সেসময় তোমরা সংখ্যায় হবে অনেক, কিন্তু তোমরা হবে সমুদ্রে ভেসে চলা ফেনার মত…”। (আহমাদ)
সংকটের কারণ:
১. ১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংসের পর পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা মুসলিম বিশ্বকে পঞ্চাশের অধিক অপ্রয়োজনীয় ও দূর্বল ছোট ছোট জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত করেছে। জাতিরাষ্ট্রসমূহের রয়েছে স্বতন্ত্র পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতির পিতা, পাসপোর্ট, জাতীয়তা, সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশিকদের বেধে দেয়া রাষ্ট্রীয় সীমানা। যেমন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া। খাইরা উম্মাহ’র বিপদে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এ স্বতন্ত্র পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতির পিতা, পাসপোর্ট, জাতীয়তা, সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশিকদের বেধে দেয়া রাষ্ট্রীয় সীমানা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।
২. এসব জাতিরাষ্ট্রের মুসলিম শাসকগণ উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের দালাল বা এজেন্ট। তাদের জবাবদিহিতা যেমনি মহাবিশ্বের প্রভূ আল্লাহ সুওতার কাছে নয়, তেমনি উম্মাহ’র কাছেও নয়, বরং তাদের জবাবদিহিতা রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী প্রভূ-আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স কিংবা আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের কাছে। সেকারণে এ শাসকগণ জনগনের মৌলিক চাহিদা(অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা) পূরণের জন্য জনগনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে মোটেও সচেষ্ট এবং আন্তরিক নয়। এসব শাসকেরা শাসনকার্যকে ইবাদত মনে করে না, বরং দুনিয়ার ভোগ বিলাস, প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনের উপায় মনে করে। তাদের কারণে মুসলিম সেনাবাহিনী মজলুম উম্মাহ’র ডাকে সাড়া দিতে পারে না।
মুসলমিদের সাহায্যের ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেন,
“এক মুসলমান অপর মুসলমানরে ভাই। সে না তার উপর জুলুম করতে পারে, না তাকে বিপদে পরিত্যাগ করে । আর না তাকে শত্রুর কাছে সোর্পদ করতে পারে”
আর গণ-তান্ত্রিক জালিম শাসক শেখ হাসিনা আল-জাজিরাকে রোহিংগা মুসলিমদের ব্যাপারে বলে,
“এটা আমাদের র্কতব্য নয়, আমরা এসব বোঝা বহন করতে পারব না”
সমাধান:
যা কিছু খাইরা উম্মাহ’র(সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত-যে নবীর উম্মত হওয়ার জন্য অন্য নবীগণ আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’লার কাছে ফরিয়াদ করত। যাদেরকে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কোরআনে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন) দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে মুসলিমদের সেসব কিছুর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং এগুলোর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে ও উম্মাহকে শরী’আহ’র দলিলের ভিত্তিতে সচেতন করতে হবে। যেমন:
জাতিরাষ্ট্র:
যার রয়েছে স্বতন্ত্র পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতির পিতা, পাসপোর্ট, জাতীয়তা, সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশিকদের বেধে দেয়া রাষ্ট্রীয় সীমানা। ইসলামিক শরী’আহ অনুসারে এসবই হারাম।
আবু দাউদ শরীফে র্বণতি আছে, রাসূল(সা) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের দিকে ডাকে, এর সর্মথনে যুদ্ধ করে এবং এর জন্য মৃত্যুবরণ করে; সে আমাদের অর্ন্তভুক্ত নয়।”
রাসুল(সা) আরো বলেছেন,
“যে ব্যক্তি একটি অন্ধ পতাকার অধীনে যুদ্ধ করে, তার স্বজাতির সঙ্গে ক্ষুদ্ধ হয় অথবা স্বজাতিকে আহ্বান সাহায্য করে এবং সে কারণইে নিহত হয়, তাহলে সে নিহত হল জাহিলিয়্যাতের মধ্যে” । [মুসলিম]
জাতিরাষ্ট্র সমূহের সীমানা ভেঙ্গে একজন খলিফার অধীনে একটি অভিন্ন খিলাফত রাষ্ট্রে বসবাস করা মুসলিমদের উপর ফরয। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “খলিফা হচ্ছেন ঢালস্বরূপ”।
বিশ্বাস ঘাতক দালাল শাসক: আক্বীদা ও ইসলামিক আবেগের দিক থেকে মুসলিম উম্মাহ এখনও এক। একারণেই পৃথিবীর যে কোন জায়গায় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর উম্মত আক্রান্ত হলে উম্মাহ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কিন্তু এইসব দালাল শাসকেরা স্বতন্ত্র পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতির পিতা, পাসপোর্ট, জাতীয়তা, সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশিকদের বেধে দেয়া রাষ্ট্রীয় সীমানার সংরক্ষক এবং মুসলিম উম্মাহ’র আক্বীদা ও ইসলামিক আবেগের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
‘হাশরের ময়দানে প্রতিটি বিশ্বাস ঘাতক শাসকেরই তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী একটি পতাকা থাকবে, শাসকের চেয়ে ভয়াবহ প্রতারণার বিশ্বাসঘাতক আর কেউ নেই।’ (মুসলিম/বুখারী)
রাসূলুল্লাহ (সা) ত্বরীকা অনুযায়ী সাধারণ মুসলিম ও সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সহায়তা নিয়ে মুসলিম ভূমিসমূহ থেকে এসব জালিম ও বিশ্বাস ঘাতক শাসকদের মূলোৎপাটন করতে হবে। কারণ এসব মুসলিম শাসক মজলুম রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইলে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, কিন্তু পাঁচহাজার মুসলিম হত্যাকারী নরপশু নরেন্দ্র মোদীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এসব শাসক বাঘ রক্ষার জন্য চুক্তি করে, বাঘ সম্মেলন করে, হরিণ রক্ষা করে, ডলফিন রক্ষা করে কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ’র ব্যাপারে দায়িত্বজ্ঞানহীন।
রাফীম আহমেদ