ইয়েমেন: খায়রা উম্মাহ’র রক্তক্ষরণ ও মুসলিম শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত

১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংসের পর থেকে মুসলিম বিশ্ব অভিভাবকহীন। তখন থেকে খাইরা উম্মাহ’র জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত কাফেরদের কাছ থেকে নিরাপদ নয়। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়া, বসনিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া এবং সর্বশেষ সংযোজন ইয়েমেন।

 পুঁজিবাদ ও গনতন্ত্রের ধ্বজাধারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তির দিক থেকে এখন ক্ষয়িষ্ণু। সেকারণে সে এখন আগের মত পৃথিবীর সব জায়গায় নিজে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু এজেন্টদের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামরিক জোট গঠন করে স্বীয় স্বার্থরক্ষা করার হীন কৌশল প্রয়োগ করার সক্ষমতা তার রয়েছে। ইয়েমেনের সংকট মূলত: সে অঞ্চলে আমেরিকা ও ব্রিটেনের মধ্যকার প্রতিযোগিতার ফসল। দুঃখজনক হলেও সত্য মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শাসকগণ আজকে আমেরিকা ও ব্রিটেনের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করছে, মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ১০ টি দেশের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সামরিক জোট মুসলিম কিবলা রক্ষার নামে মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আজকে ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে-যদিও মুসলিমদের কিবলা কা’বা আক্রান্ত নয়। বরং মুসলিমদের প্রথম কিবলা বায়তুল মাকদিস গত ষাট বছর ধরে মুসলিমদের চিরশত্রু ইহুদীদের দখলে থাকা সত্ত্বেও এ শাসকগণ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, মজলুম ফিলিস্তিনিদের উদ্ধার করতে ও পশ্চিমাদের জারজ সন্তান ঈসরাইলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মিলিয়ে দিতে তাদের ট্যাঙ্ক, বোমারু বিমান, মিসাইলগুলো একবারের জন্য গর্জন করেনি। পবিত্র হিজাজ অঞ্চলে কাফেরদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও সেখানে মুসলিমদের রক্তপিপাসু মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঘাঁটি করার অনুমতি দিয়েছে। এ শাসকেরা কখনোই মুসলিম উম্মাহ’র প্রতিনিধিত্ব করেনি, বরং মুসলিম উম্মাহ, ইসলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) এর সাথে ক্রমাগত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বাংলাদেশের শাসকবর্গ সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এ জোটের আগ্রাসনে সমর্থন দিয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের পেছনেও রয়েছে এ অঞ্চলকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতিযোগিতা। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মূলত: তাদের প্রভূ ব্রিটেন ও আমেরিকার মদদপুষ্ট। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণও হল ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যে সমঝোতা না হওয়া। অর্থাৎ অন্যান্য মুসলিম দেশের মত বাংলাদেশে আওয়ামী বিএনপি জোটের রাজনীতিও উপনিবেশবাদীদের অনুকূলে ও খাইরা উম্মাহ’র স্বার্থ পরিপন্থী।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের হারার পেছনে ভারতের ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনায় এ দেশের মুসলিমদের জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখি। পিতার পুরুষাঙ্গ কামড়ানোর মত জঘন্য এ জাতীয়তাবাদী সুরসুরি পশ্চিমা ও ভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে আরও উস্কে দেয়া হয়। কিন্তু যখন সীমান্তে বিএসএফ কতৃক নির্মমভাবে খায়রা উম্মাহ’র সন্তানদের হত্যা করা হয় তখন মুসলিমদের সেভাবে সরব হতে দেখি না। বাংলাদেশের মুসলিমদের মনে রাখতে হবে যে, ক্রিকেট নিয়ে সরব হলে ঔপনিবেশবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয় ও খায়রা উম্মাহ’র জাতীয়তাবাদী পরিচয় সংকট তীব্রতর হয়। বরং এদেশের মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিশর, সুদান, ইরাক, ইরান, তুরষ্ক, ইয়েমেনসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে কা’বা’র চেয়ে পবিত্র খায়রা উম্মাহ’র রক্তক্ষরণের কারণ বিশ্বাসঘাতক শাসকদের বিরুদ্ধে এবং এটাই মুসলিম উম্মাহ’র প্রধান ইস্যু। কেননা গোটা মুসলিম উম্মাহ হল একটি দেহের মত এবং এ দেহের কোথাও ব্যাথা পেলে গোটা দেহ তা অনুভব করে। আর এ উম্মাহ’র প্রভূ এক, রাসূল (সা) এক, কিতাব এক, শান্তি এক, যুদ্ধ এক, কালেমা এক, লক্ষ্য এক- এবং তা হল জান্নাত।

বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের শাসকেরা আজকে উম্মাহ’র উপর দূর্যোগের মত। সেকারণে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশসহ সব মুসলিম দেশের বিশ্বাসঘাতক শাসকদের অপসারণ করে নব্যুয়তের আদলের খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার জন্য সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সাথে যোগাযোগ ও তাদের সংঘটিত করতে এর জন্য আন্দোলনকারীদের সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা সাধারণ মুসলিমদের প্রধান কর্তব্য। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

‘যখন লোকেরা কাউকে জুলুম করতে দেখে এবং তাকে প্রতিহত করে না, তখন আল্লাহ দ্রুতই তাদের সবাইকে (জালিম ও জুলুম প্রত্যক্ষকারী) আযাবের মধ্যে নিমজ্জিত করেন।’ (তিরমিযী)

রাফীম আহমেদ

Leave a Reply