জনগণের মধ্যে থাকা কিছু অগভীর (ভুল) ধারণা:
- হাসিনা-খালেদা মহিলা হওয়ায় দেশে সংঘাত ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সুতরাং পুরুষ শাসন এ সংঘাত ও চলাবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- সত্যিকারের গনতন্ত্র চর্চা না হওয়ায় এ সংঘাত। সুতরাং সমাধান হল আরও গনতান্ত্রিক হওয়া।
- মন্দের ভাল হিসেবে বিকল্প না থাকায় এক দলকে ছেড়ে অপর দলকে বেছে নেয়া উচিত।
- গনতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যতিত বৈধ ও গ্রহণযোগ্য পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়।
- ডিজিটাল বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশ বাঁচাও-মানুষ বাঁচাও, নতুন ধারার রাজনীতি… ইত্যাদি
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, সর্বদলীয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার, দু নেত্রীর মধ্যকার সংলাপ ইত্যাদি বর্তমান সংকটের সম্ভাব্য সমাধান।
সংকটের কারণ:
- ওবামা, বুশ ও মনমোহন সিং এর জীবনব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ ও গনতান্ত্রিক কুফর শাসনব্যবস্থায় মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ’র পরিবর্তে মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে রাষ্ট্র থেকে দ্বীনকে পৃথক করা হয়েছে। ইসলামী আক্বীদার সাথে যা সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক। হাসিনা-খালেদা পরিবার নিয়ন্ত্রিত দ্বি-জোটীয় গনতান্ত্রিক রাজনীতিতে নিজ স্বার্থ সংরক্ষণ ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে ক্ষমতাসীন দলগুলো সুবিধামত সংবিধান পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে। আর তা ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর প্রতিকূলে যাওয়ায় সরকার ও বিরোধী জোটের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে।
- স্বাধীনতা পরবর্তী চার দশকেরও বেশী সময় ধরে সাম্য, গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সস্তা শ্লোগানের আড়ালে নব্য ঔপনিবেশবাদের রাজনীতিকে বাস্তবায়িত করার কারণে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, রাজনীতি ও ভূ-কৌশলগত সম্পদের উপর সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন, বৃটিশ ও আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন ভারত বৃটেন নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক মঞ্চে বহিঃশক্তির স্বার্থ রক্ষক দালাল স্বরূপ আবির্ভাব ঘটে মুজিব-জিয়া-এরশাদ-হাসিনা-খালেদার। ব্যর্থ ধর্মনিরপেক্ষ ও গনতান্ত্রিক কুফর শাসনব্যবস্থায় হাসিনা-খালেদা পরিবার নিয়ন্ত্রিত দ্বিজোটীয় গনতান্ত্রিক রাজনীতি এদেশে বিভক্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। স্বীয় স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য আমেরিকা, ভারত, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় এ ধরনের বিভক্তি ও বিশৃংখলা বজায় থাকুক।
- ধর্মনিরপেক্ষ ও গনতান্ত্রিক কুফর শাসনব্যবস্থায় রাজনীতি সবসময় অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সেকারণে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থকেন্দ্রিক এ রাজনীতি ক্ষমতাসীন জোটের (হাসিনা কিংবা খালেদা গংদের) লুন্ঠন, দূর্নীতি ও বিশৃংখলার মহোৎসব ছাড়া আর কিছুই নয়। বিরোধী জোটে থাকা দলগুলো পরবর্তী পাঁচবছরের জন্য লুটপাটের সুযোগ পেতে ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তাকে সুগম করতে চায়। আর সরকারী জোট লুটপাট ও দূর্নীতির এ ধারাকে বজায় রাখতে চায়। সুতরাং হালুয়া রুটির ভাগ পেতে ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা নব্বইয়ের পর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সংঘাতকে অর্ণিবার্য করে তুলছে।
‘তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং জাতিকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তারা দগ্ধ হবে দোযখে এবং যেখানে তারা প্রবেশ করবে সেটা কতই না মন্দ আবাস।’(সূরা ইবরাহিম:২৮-২৯)
সমাধান:
- হাসিনা, খালেদা মহিলা হওয়ায় দেশে এ অস্থিতিশীলতা বা সংকট তৈরি হয়েছে তা সঠিক নয়। বিগত চল্লিশ বছরে মুজিব, জিয়া, এরশাদ বাংলাদেশকে শাসন করলেও আমাদের সমস্যা দূরীভূত হয়নি। তারা সবাই পুরুষ ছিল। সমস্যাটি পুরুষ বা মহিলার নয়, বরং মুজিব, জিয়া, এরশাদও খালেদা হাসিনার মত আমাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দ্বারা শাসন করায় তাদের সময়ে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। উল্টো এসব তথাকথিত শাসক ও তাদের পরিবারের সদস্য ও উচ্ছিষ্টভোগীরা অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছে। সুতরাং সমস্যার কারণ বা সমাধান ব্যক্তি পরিবর্তনের মধ্যে নেই, বরং মানবরচিত ব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্যে নিহিত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘ইন্না দিনা ই’নদাল্লাহিল ইসলাম..’
- ডিজিটাল বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশ বাঁচাও-মানুষ বাঁচাও, নতুন ধারার রাজনীতি…ইত্যাদি সস্তা শ্লোগান অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, সর্বদলীয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার, দু নেত্রীর মধ্যকার সংলাপ, আরও বেশী গনতন্ত্রের চর্চা করা ইত্যাদি বর্তমান সংকটের সমাধান নয়। এসব সস্তা শ্লোগান ও ভুল ধারণা সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার মূল কারণগুলোকে আড়াল করে এবং জনগনকে বেহুদা বিতর্কের মধ্যে ব্যস্ত রাখে। ব্যর্থ ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক কুফরী শাসনব্যবস্থাকে খিলাফত দ্বারা প্রতিস্থাপনই এ অস্থিতিশীলতা, সংঘাত ও অচলাবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।
- বিকল্প না থাকায় একটি জোটকে ছেড়ে অন্য জোটকে মন্দের ভাল হিসেবে বেছে নেয়া সংকট থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখবে না। যেমন: ১৯৯৬ এ খালেদাকে ছেড়ে হাসিনাকে বেছে নেয়ায়, ২০০১ এ আবার হাসিনাকে ছেড়ে খালেদাকে বেছে নেয়ায় এবং ২০০৮ এ খালেদাকে ছেড়ে হাসিনাকে বেছে নেয়ায় দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি, বরং পালাক্রমে এই দুই পরিবার লুটপাট ও দূর্নীতির সুযোগ পেয়েছে। কোন সরকারের সময় বিগত সরকারের চেয়ে একশ খুন কম হলে, পঞ্চাশটি ধর্ষণ কম হলে, পঞ্চাশটি ডাকাতির ঘটনা কম হলে সে সরকার ভাল হয়ে যায় না। বরং পবিত্র কোরআন অনুসারে অন্যায়ভাবে একটি হত্যাও গোটা মানবজাতিকে হত্যার শামিল। মন্দের ভাল কিছু ইসলামে নেই।
‘…নিশ্চয়ই সত্য মিথ্যা থেকে আলাদা হয়ে গেছে…।’ (সূরা আল বাক্বারা:২৫৬)
‘ভাল ও মন্দ কখনওই এক হতে পারে না।…’ (সূরা হামীম সিজদাহ:৩৪)
‘বলুন: সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’ (সূরা বনী ইসরাইল: ৮১)
- গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচন এ জুলুম প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার একটি মাধ্যম। একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাহ অনুসরণ করে ক্ষমতাশীল লোকদের থেকে নুসরাহ(বস্তুগত সাহায্য) লাভ করে নুবয়্যতের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যর্থ কুফরী ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব। আবু হাজিমের বরাত দিয়ে ইমাম মুসলিম বর্ণণা করেন, আমি আবু হুরাইরার সাথে পাঁচ বছর অতিবাহিত করেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি, রাসূল (সা) বলেন,
‘বনী ঈসরাইলকে শাসন করতেন নবীগণ, একজন নবীর মৃত্যুর পরে আসতেন আরেকজন নবী। আমার পরে আর কোন নবী আসেবেন না, আমার পরে আসবে খলিফা এবং তারা হবে সংখ্যায় অনেক।সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দিচ্ছেন (এই ব্যাপারে) ?” তখন তিনি উত্তর দিলেন, “তোমরা তাদের একজনের পর আরেকজনের কাছে আনুগত্যের শপথ (বাইয়াহ) পূরণ করবে, তাদেরকে তাদের অধিকার দেবে এবং আল্লাহ তাদেরকে তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন। “
- নুবয়্যতের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যর্থ কুফরী ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশকি শক্তি(আমেরিকা, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন) ও আধিপত্যবাদী শক্তির(ভারত) রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও আধিপত্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে এবং জনগনের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করা যাবে।
- ধর্মনিরপেক্ষ ও গনতান্ত্রিক কুফর শাসনব্যবস্থায় রাজনীতি সবসময় অর্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কিন্তু ইসলামিক শরী’আহ রাজনীতি থেকে অর্থকে পৃথক করেছে এবং রাজনীতি করার সাথে আখেরাতের সাফল্যকে সর্ম্পকযুক্ত করেছে বলে এ ব্যবস্থায় শাসকের ক্ষমতালিপ্সু, দূর্নীতিবাজ ও জনগনের সম্পদ লুন্ঠনকারী হওয়া সম্ভব নয়।
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসূল(সা) বলেন,
‘শেষ বিচারের দিন সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহ’র আরশের নীচে ছায়া পাবে যেদিন তাঁর (সুওতা) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। তাঁরা হলেন, একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক,…।’
রাফীম আহমেদ