এটা সবার কাছে পরিষ্কার যে বর্তমানে মুসলিম নারীরা ইসলামের প্রতি আক্রমণের ফল ভোগ করছে। পশ্চিমা পুঁজিবাদীরা ইসলামে নারী সংক্রান্ত নীতির প্রতি নগ্ন আক্রমণ ও হেয় প্রতিপন্ন করার কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নির্যাতিত মুসলিম নারীদের স্বাধীনতার নামে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদে বাধা দেয়া হচ্ছে। জনসমক্ষে অর্ধ-নগ্ন থাকতে পারাই হচ্ছে পশ্চিমাদের নির্ধারিত নারী মুক্তির সংজ্ঞা। তাই পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখা যায় নারী স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের আহবান বলতে আসলে কী বোঝায়, এ আহ্বান নারীদের শোষণ করার আহ্বান ব্যতীত আর কিছু নয়। সকলের কাছেই স্পষ্ট নগ্নতা বিষয়টি শুধুই নারীকেন্দ্রিক আর শুধু নারীরাই এই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে। এই আহ্বান নারীকে যৌন লালসার বস্তুর পর্যায়ে নামিয়ে আনে ও তাকে পুরুষের চোখের খোরাক ও ভোগের সামগ্রীতে পরিণত করে।
বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি এই সস্তা আহ্বানের নেপথ্য কারণ স্পষ্ট যখন আমরা দেখি আমাদের বোনদের শ্রম শোষিত হচ্ছে পুঁজিপতিদের স্বার্থে, যেখানে তাদের পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা সন্তানরা হচ্ছে বঞ্চিত।
জাকার্তার (ইন্দোনেশিয়া) কারখানাগুলোতে ৯০% এর বেশি শ্রমিক নারী, যাদের ৯০% তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানোর অধিকার পায় না। ফলে তাদের সন্তানরা অপুষ্টিতে ভোগে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাতে কর্মজীবীদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী; এই খাতে বাংলাদেশের আয় বার্ষিক ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জীবন ধারণের লক্ষ্যে ন্যুনতম চাহিদা পূরণের জন্যে এই নারীরা মানবেতর পরিবেশে কাজ করে। অনিরাপদ কর্মস্থলের বিষয়টি জনসমক্ষে আসে সম্প্রতি যখন রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১০০০ এর বেশি শ্রমিক মারা যায়। এটাই কি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন যা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র আমাদের বোনদের উপহার দিচ্ছে? তারা কি শুধু শালীনতা থেকে মুক্তি দেয়, অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকে নয়?
চরম হতাশাজনক এই পরিস্থিতি চলছে আমাদের মুসলিম শাসকদের আশীর্বাদে ও পূর্ণ সহযোগিতায়। এই শাসকরা পশ্চিমা প্রভুদের কথায় নৃত্য করে এবং উম্মাহ্’কে বিক্রি করে তাদের কাছে যারা সর্বোচ্চ দর হাকায়। যদিও এই ব্যবস্থার পেছনে রয়েছে পুঁজিপতি শ্রেণী, তারপরও এটা বলতেই হয় যে মুসলিম শাসকরা সামান্য কমিশনের বিনিময়ে আমাদের ভাই-বোনদের উপর বিদেশী কোম্পানী কর্তৃক নির্লজ্জ দাসত্ব ও শোষণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুক্তবাজার অর্থনীতি আধুনিক সময়ের মুসলিম ভূ-খন্ডে নারীদের দাসত্ব-বাজার তৈরি করেছে যেখানে ভয়াবহ অবস্থায় আমাদের বোনেরা প্রায় বিনা মূল্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
এই ট্র্যাজেডির অবসান সম্ভব শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, যা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের সাথে অর্থনৈতিক চুক্তি ছিন্ন করবে। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা নারীদের প্রকৃতিগত ও বাস্তব দায়িত্ব ফিরিয়ে দেবে। ইসলামী সমাজের ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নারীরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে, শাসককে জবাবদিহি করবে ও ইসলাম প্রচারে অংশ নিবে। উম্মাহ্’র প্রতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করা নারীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে ইসলামের ইতিহাস সমৃদ্ধ। যেমন:
- ·নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.) ও আসমা বিনতে আমর (রা.) আকাবার দ্বিতীয় শপথ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন। এই শপথ অনুষ্ঠানটি রাসূল (সাঃ) এর মদিনা রাষ্ট্র বাস্তবায়নের পথে ছিল মাইলফলক।
- এক সাধারণ নারী, যিনি হযরত ওমর (রা.) কে মাহর নির্ধারিত করে দেয়ার কারণে জনসম্মুখে জবাবদিহি করেছিলেন।
- ফাতেমা বিনতে কায়স (রা.) একজন সাহাবী ও বিখ্যাত আলেম, যার সাথে ওমর (রা.) এর পরবর্তী খলীফা নিয়োগের ক্ষেত্রে পরামর্শ করা হয়েছিল।
- নাফিসা বিনতে হাসান (রহ.) যিনি ইমাম শাফ’ঈর শিক্ষিকা ছিলেন এবং রাজনীতিতে ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। মিশরের জনগণ শাসকের সাথে উদ্ভূত কোন বিবাদের ক্ষেত্রে তাদের অধিকার ফিরে পাবার আশায় বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তাঁর কাছে যেত।
হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা! এ রকম অসংখ্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আপনারা নিশ্চয়ই মুসলিম ভূখন্ডে খিলাফত রাষ্ট্র বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসবেন। শুধুমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মনোনীত ইসলামী ব্যবস্থাই আমাদের মূল্যবোধ ও মর্যাদাকে রক্ষা করবে।খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুলোৎপাটন করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রদত্ত ব্যবস্থার বাস্তবায়ন সম্ভব। ইসলামী ব্যবস্থা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে জবাবদিহিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, অর্থ বা স্বার্থের ভিত্তিতে নয়। তাই এই ব্যবস্থা কুর’আন ও সুন্নাহ’র বাস্তবায়ন করবে, পুরুষ ও নারীর শোষণের হাত থেকে নারীর দেহকে রক্ষা করবে।
রাফি বিন রিফা (রা.) থেকে বর্ণিত,
“রাসূল (সাঃ) দাসী নারীর দু’হাতের উপার্জন ব্যতীত অন্য কোন উপার্জনকে আমাদের জন্য নিষেধ করেছেন।” (আবু দাউদ)
“রাসূল (সাঃ) দাসী নারীর দু’হাতের উপার্জন ব্যতীত অন্য কোন উপার্জনকে আমাদের জন্য নিষেধ করেছেন।” (আবু দাউদ)
হে মহান উম্মাহ্! ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদা ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে পরিহার করুন, যা শুধু সমতার নামে দাসত্বের জন্ম দেয়। খিলাফতে রাশিদা বাস্তবায়নের কাজে আমাদের সাথে যোগদান করুন যা দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে; যার পরেই আমরা সকল নারী, পুরুষ ও শিশু মুক্তি পাবো মানব রচিত আইন ও ব্যবস্থার শোষণ থেকে।