আবদুল্লাহ (রা)-এর আম্মার নাম ছিল উম্মু আব্দ। সেই জন্য আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা)-কে লোকেরা ইবনু মাসউদ (রা)-কে লোকেরা ইবনু উম্মু আব্দ বলে ডাকত।
ছোটবেলায় তিনি উকবা ইবনু আবি মুআইতের ছাগল পাল নিয়ে মক্কার উপত্যকাগুলোতে চরাতেন। তিনি শুনতেন যে মক্কার এক ব্যক্তি নবুয়্যত লাভ করেছেন। তবে তিনি তাঁকে চিনতেন না। সারাদিন তিনি ছাগল নিয়ে মক্কার বাইরেই থাকতেন। সাঁঝে শহরে ফিরতেন।
একদিন তিনি যথারীতি ছাগল চরাচ্ছিলেন। সহসা দেখতে পান, দুইজন লোক তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। তাঁরা খুব পিপাসার্ত ছিলেন। কাছে এসে একজন বলেন, ‘ওহে ছেলে, আমরা খুব পিপাসার্ত। কিছু দুধ দুইয়ে তুমি আমাদেরকে দাও।’ আবদুল্লাহ বললেন, ‘তা আমি পারব না। ছাগলগুলো তো আমার নয়। আমি একজন রাখাল মাত্র’।
আগন্তুকদের একজন বললেন, ‘তাহলে আমাদেরকে একটি ছাগী দেখিয়ে দাও যেটি এখনো পাঁঠার স্পর্শে আসেনি।’ ছেলেটি একটি ছাগীর দিকে ইশারা করলো।
আগন্তুক “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে একটি হাত দিয়ে ছাগীটির ওলান মলতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুধ বের হয়। তিনি গর্ত বিশিষ্ট একটি পাথর টুকরো ওলানের নিচে রাখেন। দুধে তা ভরে যায়। আগন্তুকরা দুধ পান করে পিপাসা মিটালেন। ছেলেটিকেও দুধ পান করালেন। আগন্তুকদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত মুহম্মদুর রাসূলুল্লাহ(সা)। দ্বিতীয় জন আবু বকর আস্ সিদ্দিক (রা)।
এই ঘটনার কিছুদিন পর আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ(রা) নবুয়তপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। একদিন তিনি তাঁর কাছে যান। তাঁকে দেখে চিনতে পারেন। তাঁর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তাঁকে মনিবরূপে গ্রহণ করে তাঁর সাহচর্যে থাকা শুরু করেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে আল-কুরআন শেখেন। ইয়াসরিবে (আল-মদিনায়) হিজরাতের পরও তিনি আল-কুরআন চর্চায় নিবেদিত থাকেন। তিনি সুমধুর কণ্ঠে আল-কুরআন অধ্যয়ন করতেন। মাঝে-মধ্যে মুহম্মদুর রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁকে আল-কুরআন পড়ে শুনাতে বলতেন।
একদিন রাতে আবু বকর আস্ সিদ্দিক (রা) এবং উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ শেষে তাঁর গৃহ থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা দেখলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে সালাতরত অবস্থায় আল-কুরআন তিলাওয়াত করছেন।
আল্লাহ্র রাসূল (সা) কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাঁর তিলাওয়াত শুনলেন। অতঃপর তিনি বললেন,
“আল-কুরআন যেমন অবতীর্ণ হয়েছে তেমন বিশুদ্ধভাবে তা তিলাওয়াত করে কেউ কেউ যদি আনন্দিত হতে চায়, সে যেন ইবনু উম্মু আবদের মতো তিলাওয়াত করে“।
তিনি যে কেবল সুন্দরভাবে আল-কুরআন পাঠ করতে পারতেন, তাই নয়। তিনি ছিলেন আল-কুরআনের গভীর জ্ঞান সমৃদ্ধ একজন ব্যক্তি। আলাপ-আলোচনাকালে তাৎক্ষণিকভাবে আল-কুরআনের ভুরিভুরি আয়াত তিনি উদ্ধৃত করতে পারতেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর সময় একটি ঘটনা। উমর (রা) কোনো একটি সফরে রাতে আরেকটি কাফিলায় রাতের আঁধারে এক কাফিলায় লোক অন্য কাফিলায় লোকদেরকে চিনতে পারছিলেন না। উমর উবনু খাত্তাব (রা) দ্বিতীয় কাফিলার লোকদেরকে কিছু প্রশ্ন করেন। প্রতিটি প্রশ্নে জওয়াবে উচ্চারিত আল-কুরআনের এক একটি আয়াত। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) ভাবলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) ছাড়া আর কারো এমন যোগ্যতা থাকার কথা নয়।
তিনি সবশেষে প্রশ্ন রাখলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) আছেন?’ জওয়াব এলো “হ্যাঁ।”
আল-কুর’আনের মর্মকথা জানার ক্ষেত্রেও আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) ছিলেন প্রথম সারির সাহাবির একজন। তদুপরি আজীবন তিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে আল-কুরআনের জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করে গেছেন।
মূল: সদ্য প্রয়াত এ কে এম নাজির আহমেদ (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) এর ’আসহাবে রাসূলের জীবনধারা’ বই হতে