ইসলামী সভ্যতা (আল হাদারাহ আল ইসলামিয়্যাহ)

নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ তাকী উদ্দীন আন-নাবহানি (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক লিখিত ‘নিযামুল ইসলাম’ বইটির খসড়া অনুবাদ-এর একাংশ হতে গৃহীত

হাদারাহ (সভ্যতা) ও মাদানিয়্যাহ (বস্তুগত অগ্রসরমানতা) এর মাঝে একটি পার্থক্য রয়েছে। হাদারাহ বলতে জীবন সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা এবং মাদানিয়্যাহ বলতে জীবন যাপনের উপকরণের বস্তুগত অবস্থা কে বোঝায়। হাদারাহ অনেকবেশী নির্দিষ্ট এবং তা জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর উপর নির্ভর করে, পক্ষান্তরে মাদানিয়্যাহ সুনির্দিষ্ট হতে পারে কিংবা সার্বজনীন হতে পারে। কাজেই হাদারাহ হতে উদ্ভূত বস্তুসমূহ অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট, যেমন মূর্তি। আবার বিজ্ঞান ও তার অগ্রযাত্রা, শিল্প ও তার বিবর্তন ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত বস্তু সমূহ অনেকবেশী সার্বজনীন এবং তা কোন নির্দিষ্ট জাতির জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং তারা অনেক বেশি সার্বজনীন, যেমন শিল্প ও বিজ্ঞান।

হাদারাহ ও মাদানিয়্যাহের মধ্যবর্তী এ পার্থক্যটির প্রতি সর্বদা লক্ষ্য রাখা উচিৎ। একই সাথে হাদারাহ থেকে উদ্ভূত মাদানিয়্যাহ (বস্তু) এবং শিল্প ও বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত মাদানিয়্যাহ (বস্তু) এর মধ্যকার ভিন্নতা সম্পর্কেও পার্থক্য করা প্রয়োজন। এটি এজন্য প্রয়োজন যাতে মাদানিয়্যাহ গ্রহণ কালে এর বস্তুগত রূপ ও এর সভ্যতার মধ্যবর্তী পার্থক্য স্পষ্ট হয়। পশ্চিমা শিল্প ও বিজ্ঞান হতে উদ্ভূত পশ্চিমা মাদানিয়্যাহ গ্রহণে কোনরূপ বাধা নেই। কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতা থেকে উদ্ভূত পশ্চিমা মাদানিয়্যাহ কোন ভাবেই গ্রহণ করা যাবেনা। কারণ আমরা কখনোই পশ্চিমা হাদারাহ গ্রহণ করতে পারিনা, কারণ তা প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী ও মানব জীবনের সুখ (happiness) সম্পর্কিত ধারণাটিই ইসলামী হাদারাহ এর সাথে সাংঘর্ষিক।

পশ্চিমা হাদারাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দ্বীন থেকে জীবনের পৃথকীকরণের উপর ভিত্তি করে, এবং এটি জীবনের যে কোন কাজেই দ্বীনের ভূমিকাকে অস্বীকার করে, ফলত: এটি দ্বীন কে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। যারা জীবনে দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে তাদের জন্য এরূপ পৃথকীকরণই স্বাভাবিক। এই ভিত্তির উপরই জীবন ও জীবনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এই হাদারাহ’র দৃষ্টিতে মুনাফার অন্বেষণ করাই হচ্ছে সমগ্র জীবনের মূল উদ্দেশ্য। এ ধারণা ও হাদারাহতে লাভ বা মুনাফাই হচ্ছে সবচেয়ে প্রভাববিস্তার কারী ধারণা। কাজেই এ জীবন পরিচালনার মূল মাপকাঠি হচ্ছে মুনাফা। কারণ তারা জীবনকে মুনাফা হিসাবে চিত্রিত করে। তাদের দৃষ্টিতে সুখ (happiness) হচ্ছে মানুষকে সর্বোচ্চ ঈন্দ্রিয়গত সুখ প্রদান এবং এ লক্ষ্যে মানুষকে প্রয়োজনীয় উপকরণে তারা সজ্জিত করে। পশ্চিমা হাদারাহতে মুনাফা অর্জনের তীব্র আকংখাই মূল উপজীব্য বিষয় এবং মুনাফা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ের উপরই তারা মনোযোগ দিতে আগ্রহী নয় এমনকি অন্য কোন বিষয়কে তারা স্বীকৃতি দিতেও প্রস্তুত নয়। ফলে এর উপর ভিত্তি করেই সকল কাজ নির্ধারিত হয়। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো শুধুমাত্র ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ করা হয় এবং তা সামাজিক ব্যবস্থার অংশ নয়। মানুষের আধ্যাত্মিক বিষয়াদিকে শুধুমাত্র গীর্জা ও পুরোহিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলত পশ্চিমা হাদারাহতে বস্তুগত মূল্যবোধ ছাড়া কোনরূপ নৈতিক, আধ্যাত্মিক কিংবা মানবতাবাদী মূল্যবোধের স্থান নেই। এর ফলে, মানবতাবাদী কাজ গুলো রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন রেডক্রস ও মিশনারী গুলোর সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়েছে। বস্তুগত মূল্যের বাইরে অন্য যেকোন মূল্যবোধই জীবন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পশ্চিমা হাদারাহ গঠিত হয়েছে জীবন সম্পর্কিত এরূপ ধারণা সমূহের উপর ভিত্তি করে।

ইসলামি হাদারাহ মৌলিক দিক থেকেই পশ্চিমা হাদারাহ এর সাথে সাংঘর্ষিক। এর জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী ও সুখের (happiness) অর্থ সম্পর্কিত ধারণাই পশ্চিমা হাদারাহ হতে সম্পূর্ণ পৃথক। ইসলামী হাদারাহ গড়ে উঠেছে এ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে আল্লাহ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি মানুষ, জীবন এবং মহাবিশ্বের জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) মুহাম্মদ (সা) কে প্রেরণ করেছেন ইসলাম সহ যা সমগ্র মানব জাতির জন্য একমাত্র দ্বীন। এর অর্থ হচ্ছে ইসলামি হাদারাহ প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী আকীদার উপর ভিত্তি করে, যা গঠিত হয় আল্লাহ, আল্লাহর ফিরিশতা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূলগণ, আখিরাত, ক্বাদা ও ক্বদর এর উপর পরিপূর্ণ ও দৃঢ় বিশ্বাস থেকে। কাজেই আকীদাই হচ্ছে হাদারাহ এর মূল ভিত্তি এবং ফলত এ হাদারাহ আধ্যাত্মিকতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।

ইসলামী হাদারাহতে জীবন গড়ে উঠে ইসলামী দর্শনের উপর ভিত্তি করে যা উদ্ভুত হয়েছে ইসলামী মতাদর্শ বা আকীদা থেকে। এবং এর উপর ভিত্তি করেই জীবন ও কর্মসমূহ প্রতিষ্ঠিত। এই দর্শনে আধ্যাত্মিকতার সাথে বস্তু জীবনের মিশ্রন সংগঠিত হয় অর্থাৎ মানুষের কার্যাবলী আহকাম শরীয়াহ কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং এটিই জীবনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। এ দর্শন মতে মানুষের কার্যাবলী হচ্ছে বস্তু (পদার্থ) আর ঐ কাজ করার সময়ে আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক তৈরী করা, অর্থাৎ হালাল ও হারাম অনুযায়ী কাজ করার বিষয়টিতে থাকে আধ্যাত্মিকতা। অর্থাৎ এখানে বস্তু ও আধ্যাত্মিকতার একটি সংমিশ্রন ঘটছে। এভাবে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ অনুযায়ী একজন মুসলিমের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন মুসলিমের কাজের পিছনে চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, অন্য কোনধরণের লাভ বা মুনাফা নয়। অবশ্য গৃহীত কাজের একটি তাৎক্ষণিক লক্ষ্য থাকে এবং কাজ ভেদে এর মূল্যবোধ ও বিভিন্ন হয়। ব্যবসা বানিজ্যে নিয়োজিত এক ব্যক্তির ব্যবসায়িক লাভের মাধ্যমে তার বস্তুগত মুনাফা অর্জন হতে পারে। ব্যবসা বানিজ্য একটি বস্তুগত কাজ, কিন্তু তা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি তার সাথে আল্লাহর সম্পর্ককে অনুধাবন করে এবং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তার আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে। এ কাজটি করতে গিয়ে তার যে তাৎক্ষণিক লক্ষ্য থাকে তা হচ্ছে ব্যবসায়িক লাভ, এটি কাজটির একধরণের বস্তুগত মূল্যবোধ।

এছাড়া মূল্যবোধ হতে পারে আধ্যাত্মিক, যেমন সালাত, যাকাত, রোজা ও হজ্জ্ব। কিংবা এ মূল্যবোধ হতে পারে নৈতিক, যেমন সত্য বলা, সততা কিংবা আনুগত্য প্রদর্শন ইত্যাদি। অথবা এ মূল্যবোধ হতে পারে মানবিক, যেমন ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার কিংবা দরিদ্রদের সাহায্য করা। এ কাজগুলো করতে গিয়ে কোন ব্যক্তি এ মূল্য গুলো অর্জনের প্রতি মনোযোগী হয় ও তা অর্জনের চেষ্টা করে। অবশ্য এ মূল্যবোধ গুলো কাজগুলোর পিছনের মূল চালিকাশক্তি, কিংবা মানুষের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। এগুলো শুধুমাত্র বিভিন্ন কাজের মূল্যবোধ মাত্র যা কাজের ধরণ ভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে।

সুখ (happiness) হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, মানুষের নিজের চাহিদা পূরণ নয়। এরূপ চাহিদা পুরণ যেমন, জৈবিক চাহিদা, প্রবৃত্তিগত আকাংখা পূরণ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মাধ্যম কিন্তু এগুলোর পূরণ সুখ নিশ্চিত করেনা। সংক্ষেপে এটিই হচ্ছে জীবন সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী এবং এই ভিত্তির উপরই গড়ে উঠে একজনের দৃষ্টিভঙ্গী। এ দৃষ্টিভঙ্গীই ইসলামী হাদারাহর মূল ভিত্তি। স্পষ্টত যেকোন বিবেচনায়ই ইসলামী হাদারাহ পশ্চিমা হাদারাহ’র সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলামী হাদারাহ হতে উদ্ভূত মাদানিয়্যাহ (বস্তু) পশ্চিমা হাদারাহ হতে উদ্ভুত বস্তুর সাথে সাংঘর্ষিক। উদাহরণ স্বরূপ, একটি ফটোগ্রাফ (ছবি) হচ্ছে একধরণের মাদানিয়্যাহ। পশ্চিমা হাদারাহ অনুযায়ী নারীর সকল সৌন্দর্য্য উন্মোচক কোন নগ্ন ছবি একটি গ্রহণযোগ্য মাদানিয়্যাহ বস্তু যা নারী সম্পর্কে পশ্চিমা ধারণা’র সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কাজেই পশ্চিমের কোন ব্যক্তির নিকট এ ধরণের ছবি একটি শিল্প কর্ম এবং শৈল্পিক মান বিদ্যমান থাকলে এধরণের ছবি তার নিকট গর্বের বিষয়। অবশ্য এধরণের মাদানিয়্যাহ বস্তু ইসলামী হাদারাহ ও নারীর সম্পর্কে ইসলামী ধারণা’র সাথে সাংঘর্ষিক, যেখানে নারী হচ্ছে মর্যাদার বিষয় এবং তার মর্যাদা রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। একই সাথে এধরণের ছবিকে প্রতিহত করা প্রয়োজন কারণ তা যৌনাকাংখাকে উস্কে দেয় এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা করে। অনুরূপভাবে যখন কোন মুসলিম একটি মাদানিয়্যাহ বস্তু যেমন বাড়ী নির্মাণ করতে যায়, তখন সে লক্ষ্য রাখে যেন কোন অবস্থাতেই বহিরাগতদের নিকট অন্তঃপূরের নারীরা দৃশ্যমান না হয়। ফলে একজন মুসলিম গৃহাভ্যন্তরে দেয়াল তৈরী করে কিন্তু পশ্চিমারা এর প্রতি কোন গুরুত্ব দেয়না। পশ্চিমা হাদারাহ থেকে উদ্ভূত যেকোন মাদানিয়্যাহ বস্তুর জন্য এটি প্রযোজ্য, যেমন মূর্তি এবং অনুরূপ বস্তু সমূহ। অনুরূপভাবে যদি কোন বিশেষ পোষাক অবিশ্বাসীদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে থাকে, তবে মুসলিমদের জন্য তা নিষিদ্ধ, কারণ এটি জীবন সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী বহন করে। অবশ্য যদি অন্য কোন পোষাক যা প্রয়োজনে বা সাজ সজ্জার তাগিদে পরা হয় এবং যা কুফরের সাথে সম্পর্কিত নয়, তখন তা সার্বজনীন মাদানিয়্যাহ হিসাবে পরিগণিত হয়, এবং তা মুসলিমদের ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত মাদানিয়্যাহ বস্তু যেমন, গবেষণাগারের উপকরণ (ল্যবোরেটরী ইক্যূইপমেন্ট), চিকিৎসা ও শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, গালিচা (কার্পেট), ইত্যাদি সার্বজনীন মাদানিয়্যাহ’র অন্তর্গত। এরূপ বস্তু সমূহ যা হাদারাহ থেকে উদ্ভূত নয়, কিংবা হাদারাহ’র সাথে সম্পর্কিত নয়, তা ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে।

বর্তমান বিশ্ব নিয়ন্ত্রনকারী পশ্চিমা সভ্যতার প্রতি এক পলক দৃষ্টি দিলেই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে তা মানুষকে শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। বরং পশ্চিমা সভ্যতাই বর্তমান মানুষের জীবনের গভীরে প্রোথিত দুর্দশা ও ভোগান্তির মূল কারণ। এই হাদারাহ, যা’র মূলে মানব জীবনের বিষয়গুলো থেকে দ্বীন কে পৃথক করা হয়েছে তা মানুষের ফিতরাহ’র পরিপন্থী। এবং এ সমাজে মানুষের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর কোন মূল্য নেই। উপরন্তু জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী হিসাবে মুনাফা এবং মুনাফা অর্জনই মানুষের মধ্যবর্তী সম্পর্কগুলোর মূল ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। ফলত: অবধারিত ভাবে এটি চিরস্থায়ী দুর্ভোগ ও অশান্তি ছাড়া আর কিছুই সৃষ্টি করতে পারেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত মুনাফা হচ্ছে মূলভিত্তি, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই এতে সংঘর্ষ এবং মানুষের মাঝে সম্পর্কগুলো প্রতিষ্ঠা করতে শক্তি প্রয়োগের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ হাদারাহ’র অনুসারীদের জন্য উপনিবেশবাদ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কারণ এখানে মুনাফাই জীবনের মূল ভিত্তি এবং নৈতিকতার কোন তোয়াক্কা করা হয়না। কাজেই, স্বাভাবিক ভাবেই আধ্যাত্মিকতার মূল্যবোধ যেমন উপেক্ষিত হয় ঠিক তেমনি অন্য যে কোন ভালো নৈতিকতার বিকাশও রুদ্ধ হয়ে যায় এবং জীবন প্রতিষ্ঠিত হয়, প্রতিযোগিতা, সংগ্রাম, আগ্রাসন ও উপনিবেশের উপর। বর্তমান বিশ্বে মানুষের মাঝে আধ্যাত্মিকতার সঙ্কট, চিরস্থায়ী উদ্বেগ, সর্বত্র মন্দের ব্যপক বিস্তৃতি পরিলক্ষিত হচ্ছে যা স্পষ্টতই পশ্চিমা হাদারাহ’র ফলাফল। এটি সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এর মাধ্যমে এরূপ ভয়াবহ পরিণতির দিকে বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে, এবং ফলশ্রুতিতে বিশ্ব মানবতার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে।

ইসলামী হাদারাহ যা ৭ম শতাব্দী থেকে ১৮শ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, তার একটি তথ্যচিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এতে কখনোই উপনিবেশবাদী নীতি ছিলনা। অবশ্যই উপনিবেশবাদ ধারণাটি ইসলামী প্রকৃতি বিরোধী, কারণ এতে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মাঝে বৈষম্য করা হয়নি। ফলত উক্ত শাসনামলে, এর অন্তর্গত সকল মানুষের জন্যই এটি ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করেছিল। কারণ এটি এমন এক হাদারাহ যা আধ্যাত্মিকতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা বস্তুগত, আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানবিক সকল মূল্যবোধ কেই পরিপূর্ণ করে। আকীদা জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়, যা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিয়ন্ত্রিত হয় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের সীমারেখার মাধ্যমে। এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকেই সুখ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যখন ইসলামী হাদারাহ পূর্বের মত বিশ্বে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, তখন এটি সুনিশ্চিত ভাবেই বিশ্বের সঙ্কটের সমাধান করবে ও সমগ্র মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

Leave a Reply