অনেক কষ্ট করে একটি সন্তানকে ছোট থেকে বড় করার পর তার কাছ থেকে পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণ অন্তত: এতোটুকু অবশ্যই আশা করেন যে, তারা যেন তাদেরকে মান্য করে, শ্রদ্ধা করে এবং কখনো তাদের অবাদ্ধাচারণ না করে। কিন্তু আমাদের আজকের সমাজের সম্মানিত অভিভাবকগণ কি তাদের আদরের সন্তানদের কাছ থেকে এমন ন্যুনতম শালীন ও উত্তম ব্যবহার পাচ্ছেন?
বাস্তবতার আলোকে সত্য কথা বলতে গেলে অধিকাংশ অভিভাবকগণই দু’চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না। আজকাল অনেককে খুবই দুঃখ ও আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায় যে, ‘সন্তান কথা শুনে না। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে।’ সাম্প্রতিক সময়ে তো অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সন্তান কর্তৃক আপন পিতাকে হত্যার সংবাদও আসছে। মা’কে মারধরের ঘটনা তো অনুল্লেখ্য !
কী ভয়াবহ ব্যাপার! একবারও কি আমরা চিন্তা করেছি? যে মা’ এতো কষ্ট করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন। মৃত্যুর চেয়েও কঠিন যন্ত্রণা সহ্য করে প্রসব করেছেন ও লালন-পালন করেছেন। যে বাবা বছরের পর বছর আপন সন্তানের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য তিলে তিলে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। সেই পিতা-মাতা তাদের বার্ধক্যে আপন সন্তান থেকে ন্যুনতম উত্তম ব্যবহারও পাবেন না! একটি সভ্য সমাজ এটা কিভাবে মেনে নিতে পারে? কেন এমনটি হচ্ছে? এতো আদর-যত্নে লালিত সন্তান নিজ বাবা-মা’র সাথে কেন এমন দুর্ব্যবহার করছে? তা কি আমরা একবারও ভেবে দেখার চেষ্টা করেছি?
এর মূল কারণ আমরা আমাদের সন্তানের শারীরিক সুস্বাস্থ্য আর ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য সব কিছু করলেও তাদের নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন। একজন মানব সন্তান হিসেবে তার জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য্য বিষয় ছিলো সবার আগে তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা এবং কুরআন-হাদীসের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করা। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারেও অমনোযোগী। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম দৈহিক ও শারীরিকভাবে খুবই সুন্দর অবয়ব নিয়ে গড়ে উঠলেও নৈতিক ও মানবিক ক্ষেত্রে থেকে যাচ্ছে অপূর্ণতা। স্রষ্টার সাথে সম্পর্কহীন থাকার কারণে কেবলমাত্র পার্থিব স্বার্থ আর ভোগ-বিলাসই তাদের জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে। ফলে এক সময় তারা আর নিজ পিতা-মাতাকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান করছে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পার্থিব স্বার্থ ও পুঁজিবাদী চিন্তার বাইরে নৈতিক ও আদর্শিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার মতো ঈমান ও তাওহীদের শিক্ষা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে কি ভয়াবহ বিপর্যয় যে অপেক্ষা করছে তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আজ এ অবস্থার পরিবর্তন চাইলে সন্তানদের জন্য সবার আগে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যকাল থেকেই প্রতিটি মুসলিম শিশু-কিশোরকে ঈমান ও তাওহীদ শিক্ষা দিতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের সিলেবাসে ঈমান-আকীদা বিনির্মাণকারী পাঠ্য এবং কুরআন-হাদীসের মৌলিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এ ব্যাপারে সময় থাকতেই কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার তাওফীক দিন। আমীন।
ইসহাক খান