আমরা যারা দুনিয়াতে দাওয়ার কাজ করছি আমদের মনে হতে পারে যে দুনিয়াতে আমরা সবচেয়ে উত্তম কারণ আমরা আমাদের জীবন সম্পদ সব কিছু দিয়ে দাওয়ার কাজ করছি। কিন্তু আমরা যদি গভীর ভাবে আমাদের কাজ গুলো পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব যে আমরা প্রায়শয় দুনিয়াবি (বস্তুগত মূল্যের দিকে জড়িয়ে পড়া) কাজের মাঝে আল্লাহ্র দেওয়া আমানত এবং তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাথে কৃত ওয়াদা সম্পর্কে ভূলে যাই। এবং যা আমাদের আমানতের খেয়ানত এবং ওয়াদা ভঙ্গের মত গর্হিত কাজের দিকে নিয়ে যায়। তাই আল্লাহ্র আমানত ও তার (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ওয়াদা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি গভীর করার জন্য নিম্নোক্ত আলোচনাটি করা হল।
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে ছিল জালেম-অজ্ঞ। (আল আহযাব: ৭২)
আমানত বলতে সাধারণত বোঝায় গুরুদায়িত্ব অর্থাৎ এমন কাজ যার জন্য কোন ব্যক্তিকে দায়ী থাকতে হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মতে এটি হল আল্লাহ্র আনুগত্য, তাফসীরে মাযহারী তে উল্লেখ করা হয়েছে শরীয়তের যাবতীয় আদেশ নিষেধের সমষ্টি।
আল্লাহ্ তালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,
আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। (আল আরাফ: ১৭২)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহকে রব মানা বলতে আল্লাহ্র আদেশ নিষেধ গুলো বোঝাচ্ছে।
তাই আল্লাহ্র আমানতের হক আদায় এবং তাকে রব মানা তখনই সম্ভব হবে যখন দুনিয়াতে খিলাফত থাকবে কারণ খিলাফত হচ্ছে সেই তরীকাহ যার মাধ্যমে আল্লাহ্র আমানতের হক আদায় করা যায় এবং তাকে (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কে রব হিসেবে যে মানা হচ্ছে তার প্রমাণ দেওয়া যায়। এবং আমাদের ভূলে যাওয়া উচিত নয় আমরা আল্লাহ্র নামে শপথ করেছে যে আমরা খিলাফতকে ফিরিয়ে আনার জন্য যান এবং মাল দিয়ে সর্বাত্নক চেষ্টা করব।
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,
যারা আল্লাহ্ নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (আল ইমরান: ৭৭)
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,
হে ঈমানদারগণ, খেয়ানত করো না আল্লাহ্র সাথে ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে। (আনফাল: ২৭)
রাসুল (সা) বলেছেন, মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য তিনটি ১। আমানতের খেয়ানত করে ২। ওয়াদা ভঙ্গ করে ৩। মিথ্যা বলে।
উপরক্ত আয়াত ও হাদীস গুলো নিশ্চিতভাবে আমাদের দাওয়ার আমানত ও আল্লাহ্র সাথে কৃত ওয়াদার বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে, যাতে এমন না হয়ে যায় গুরাবা (যারা দ্বিতীয়বার খিলাফত প্রতিষ্টার জন্য আল্লাহ্র কাছে থেকে মর্যাদা প্রাপ্ত হবে) হতে যেয়ে মুনাফিক জাহান্নামী না হয়ে যাই।
তাই আমাদের দাওয়াহর ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের প্রতি অধিক যত্নবান হতে হবে। আল্লাহ্ তার প্রতিশ্রুত ওয়াদা “খিলাফত” আমাদের দিবেন কিন্তু আমরা যারা পরিকল্পনা মাফিক কাজ না করে শিথিলতা দিয়ে কাজ করেছি, ইসলামের জ্ঞান অর্জন না করে ওলট পালট বুজাচ্ছি এবং এক দুটি কর্মসূচী সফল হওয়ার কারণে আনন্দ বোধ করছি তাদের ব্যপারে আল্লাহ্ বলছেন,
তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের ওপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুত তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (আল ইমরান: ১৮৮)
অতীতে অনেক জাতি আল্লাহ্র সাথে অঙ্গীকার রক্ষা না করার করার কারণে আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিয়েছেন যদিও বা প্রথমে তারা আল্লাহ্র মনোনীত ছিল। যেমন আল্লাহ্ আমাদের ইয়াহুদি ও নাছারাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন তাদের পরিত্যাগ করেছেন।
আল্লাহ্ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বার জন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ্ বলে দিলেন: আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। যদি তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাদের সাহায্য কর এবং আল্লাহ্কে উত্তম পন্থায় ঋণ দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ্ দূর করে দিব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করাব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। (মায়িদা: ১২-১৩)
যারা বলে: আমরা নাছারা, আমি তাদের কাছ থেকেও তাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। অতঃপর তারাও যে উপদেশ প্রাপ্ত হয়েছিল, তা থেকে উপকার লাভ করা ভুলে গেল। অতঃপর আমি কেয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিয়েছি। অবশেষে আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন। (মায়িদা: ১৪)
তাই আমাদের প্রতিনিয়ত সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমরা ইয়াহুদি ও নাসারাদের মত যেন আমাদের অঙ্গীকার ভূলে না যাই এবং আল্লাহ্র লা’নত প্রাপ্ত না হয়ে যাই।
আমরা যদি রাসূল (সা) এর সেই মহান হাদীসের দিকে তাকাই যেখানে রাসূল (সা) বলেছেন, যার কাঁধে খলীফার বাইয়্যাত নেই, তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু। (মুসলিম)
এই হাদীসে খিলাফতের বিদ্যমান থাকাকে ফারজিইয়্যাত আদায় হওয়ার শর্ত বোঝাচ্ছে, তাই শুধু খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কোন দলে থকলে ফারজিয়াত আদায় হয়ে যাবে মনে করলে তা ভুল হবে। তবে যদি অবিরাম পরিকল্পনা ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করা যায় তাহলে আশা করা যায় যে আল্লাহ্ হয়ত মাফ করতে পারেন। তাই আমরা যারা নিশ্চিন্ত মনে বসে বসে আসা করছি যে আমরা ত আল্লাহ্র দেয়া সব দায়িত্ব পালন করে ফেলেছি তাহলে আমাদের বিষয়টা নিয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করা প্রয়োজন কারণ আমরা আসলে এখন জাহিলিয়্যাতেই আছি।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল যা আমাদের এই অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণে আরও সাবধান করবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আর যদি আমি তাদের নির্দেশ দিতাম যে, নিজেদের প্রাণ ধ্বংস করে দাও কিংবা নিজেদের নগরী ছেড়ে বেরিয়ে যাও, তবে তারা তা করত না; অবশ্য তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন। যদি তারা তাই করে যা তাদের উপদেশ দেয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এবং তাদেরকে নিজের ধর্মের ওপর সুদৃঢ় রাখার জন্য তা উত্তম হবে। (নিসা: ৬৬)
আমাদের প্রতিনিয়ত সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে কারণ দ্বীন প্রতিষ্টার কাজে অতীতে জীবন দিতে হয়েছে, ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে এবং তারা অল্পই ছিল।
আল্লাহ্ বলেন,
আর তোমাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবশ্য বিলম্ব করবে এবং তোমাদের ওপর কোন বিপদ উপস্থিত হলে বলবে, আল্লাহ্ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে যাইনি। (নিসা: ৭২)
আমদের সময়ানুবর্তী হতে হবে, আমাদের অধিকাংশই সময়ের ব্যপারে গাফিল। উপরোক্ত আয়াতটি তাবুকের যুদ্ধে সেই সকল সাহাবীদের ব্যপারে বলা হয়েছে যারা সময় মত প্রস্তুতি না নিতে পারার কারণে তাবুক যুদ্ধে যেতে পারানি এবং তাদের উপর আল্লাহ্ ও তার রাসূল ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাদের মুনাফিক মনে করা হচ্ছিল যদিওবা তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী ছিলেন। তাই আমারা যারা সময় মত সার্কেলে, পাঠচক্রে, মিছিলে, লিফলেটিং এ আসিনা তাদের আসলেই চিন্তা করা উচিত আমরা মুনাফিকের আচরণ করছি কিনা।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
পেছনে থেকে যাওয়া লোকেরা আল্লাহর রাসূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে থাকতে পেরে আনন্দ লাভ করেছে; আর জান ও মালের দ্বারা আল্লাহ্ রাহে জেহাদ করতে অপছন্দ করেছে এবং বলেছে, এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও, উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচণ্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত। (আত তাওবা: ৮১)
আমরা যারা দাওয়ার কঠিন কাজগুলো করতে চাই না তাদের উপরের আয়াতটি ভালভাবে চিন্তা করে দেখা উচিত।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আর যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তারা একে অন্যের দিকে তাকায় যে, কোন মুসলমান তোমাদের দেখছে কি-না- অতঃপর সরে পড়ে। আল্লাহ্ ওদের অন্তরকে সত্য বিমুখ করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা নির্বোধ সম্প্রদায়। (আত তাওবা: ৩৮)
আমরা যারা কোন কাজ আসলে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি এবং তা অন্যের হাতে তুলে দিতে চাই উপরের আয়াতটি আমাদের জন্য সতর্কতা সরূপ।
মাঝে মাঝে আমরা দুনিয়ার মায়ার কারণে দাওয়াতে কম সময় দেই তাই আল্লাহ ত ‘আলা আমাদের বলছেন,
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। (আত তাওবা: ৩৮)
আমারা যারা দীর্ঘকাল ধরে দাওয়াহ করছি আল্লাহ তা’আলা তাদের সতর্ক করে বলছেন,
যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের ওপর সূদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। (হাদীদ: ১৬)
তাই আমাদের প্রতিনিয়ত অন্তরকে জাগ্রত ও শিক্ত রাখতে হবে যাতে আমাদের অন্তর কঠিন হয়ে না যায়, আর এটি সম্ভব যদি আমরা পাঁচটি বিষয় খেয়াল রাখি তা হল,
প্রথমত: প্রতিদিনই আল্লাহ্’র (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে আমাদের সদা সচেষ্ট থাকতে হবে। এর মানে হচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবনে শারী’আহ্’র সমস্ত ফরযগুলো নিষ্ঠার সাথে পালন করা, হারামগুলো পুরোপুরি বর্জন করা এবং যথাসাধ্য নফল ইবাদত করা। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি কাজের সাথে আল্লাহ্র সম্পর্ক অনুধাবনের চেষ্টা করা ।
দ্বিতীয়ত: আমাদের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কুর’আন তেলাওয়াত করতে হবে। এই কুর’আনের বাণী যা অন্যের কাছে বহন করে নিয়ে যাচ্ছি, যাকে আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি, আর আমরা নিজেই যদি কুর’আন পাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি তাহলে কীভাবে হবে? এছাড়াও দাওয়া-বহন করতে গিয়ে সমাজে যে বাধা, অপমান ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হয়, যে মানসিক যাতনা তৈরী হয় কুর’আন পাঠে তা অপসারিত হয়। কুর’আন অন্তরকে প্রশান্ত করে। ব্যাটারির যেমন নির্দিষ্ট সময় পর চার্জের প্রয়োজন হয় তেমনি মুমিনেরও চার্জের প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের উচিত হবে কুরআনকে অর্থসহ পড়া, এর অর্থ নিয়ে চিন্তা করা ও তাফসীর অধ্যয়ন করা।
তৃতীয়তঃ আমাদের দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ থাকবে ইসলামী জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য। কেননা ইসলামী জ্ঞান ছাড়া ইসলামকে নিজের জীবনে প্রয়োগ ও অন্যের কাছে সঠিকভাবে ইসলামকে পৌঁছানো অসম্ভব। আমাদের অবশ্যই দলের সকল গৃহীত বই পরতে হবে এবং ইসলামের বিভিন্ন শাখায় নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করতে হবে এবং এটা দিয়ে আমাদের দাওয়াত ও প্রচারকে সমৃদ্ধ করতে হবে।
চতুর্থতঃ আমাদের অবশ্যই প্রতিদিনকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরাখবর জানতে হবে এবং এর ভিত্তিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ দাঁড় করাতে হবে এবং প্রতিটি ঘটনাকে একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে হবে। এটা এজন্য যে, আমাদের পুরো কাজটাই রাজনৈতিক কাজ যার অংশ হচ্ছে জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের দূর্বল করে ফেলা এবং ইসলামের শত্রুদের মুখোশ উম্মোচন করে দেয়া। এই কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা যদি না আমারা তাদের প্রতিদিনকার নিত্য নতুন অপকর্ম, জুলুম এবং জনগণের ব্যাপারে তাদের ক্ষতিকর পরিকল্পনা সমূহের ব্যাপারে সর্বশেষে সংবাদের খোঁজ না রাখি। ফলশ্রুতিতে, আমরা জনগণের সাথে ঐভাবে জনসংযোগ করতে পারবোনা যা দিয়ে আমরা জনগণকে শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারি এবং তাদেরকে দ্রুত আন্দোলনে নামাতে পারি। উপরন্তু, এর ফলে আমরা যথা সময়ে যথোচিত কাজ সমাধা করতেও ব্যর্থ হব এবং এমন সব সুযোগ হারিয়ে ফেলব যার সদ্ব্যবহার করতে পারলে অল্প সময়েই আমরা তার দাওয়াত ও আন্দোলনকে এক ধাপে অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারতাম। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, রাজনীতিতে একটা মাত্র দিনও অনেক লম্বা সময় যাতে পিছিয়ে পড়া যাবেনা কখনোই।
পঞ্চমতঃ এবং সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অবশ্যই আমাদের দৈনন্দিন কাজের অন্যতম অংশ হবে বাস্তবে এই দাওয়াতকে আরেকজনের কাছে পৌঁছে দেয়া, আরো কার কাছে নেয়া যায় তার সুযোগ অনুসন্ধান করা। পরিচিত-অপরিচিত, বন্ধু, আত্মীয়, কর্মস্থলের সহকর্মী প্রত্যেকের কাছে কীভাবে এই দাওয়াত নিয়ে যাওয়া যায় এ সুযোগ খুঁজে বের করতে আমাদের সদা সচেষ্ট থাকতে হবে। ইসলামের আহ্বানকে সমাজের কাছে নানা উপায়ে পৌঁছে দেয়ার চিন্তাই আমাদের সারাদিনের প্রধান চিন্তা হওয়া উচিত। আমাদের একটা বিষয় মাথায় গেথে ফেলতে হবে “হয় আমি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে কারো কাছে যাব অথবা মানুষ আমার কাছে আসবে”।
উপরোক্ত কাজগুলো আমাদের সর্বদা ইসলামের ভিতর নিমজ্জিত রাখবে তাই শয়তান আর আমাদের আর তার কু মন্ত্রনা দিতে পারবে না এবং আমাদের অন্তর জাগ্রত ও শিক্ত থাকবে। আর যদি আমারা তা না করি তাহলে আমাদের পরিণতি হবে তার মত যার ব্যপারে আল্লাহ্ বলেন,
তাদের অবস্থা সে ব্যক্তির মত, যে লোক কোথাও আগুন জ্বালালো এবং তার চার দিকের সবকিছুকে যখন আগুন স্পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময় আল্লাহ্ তার চারদিকের আলোকে উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দিলেন। ফলে তারা কিছুই দেখতে পায় না। (বাকারা: ১৭)
এবং ফলশ্রুতিতে আমরা বিছিন্ন হয়ে পড়ব ইসলাম থেকে আল্লাহ্র রহমত থেকে এবং ভঙ্গ হয়ে যাবে সে অঙ্গীকার যা আল্লাহ্র সাথে আমরা করেছিলাম, আল্লাহ তা’আলা বলেন,
অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (আল আহযাব: ১৫)
আমারা যারা এই অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন দাওয়া হতে ছিটকে পড়ব তাদের মনে রাখা উচিত এতে এই দাওয়ার কোন ক্ষতি হবে না আল্লাহ্ অন্যদের এর জন্য মনোনীত করবেন কিন্তু আমরা হয়ে যাব ধ্বংস। আল্লাহ্ বলেন,
যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না। (মুহাম্মাদ: ৩৮)
অতএব আমরা নিজেদের সংশধন করে নেই কারণ আল্লাহ্র রাস্তা যারা তওবা কারী তাদের জন্য সব সময় খোলা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
তবে যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবূলকারী পরম দয়ালু। (বাকারা: ১৬০)
আমরা এখন থেকে প্রতিজ্ঞা করি আমরা তাদের মত হব যারা এই আমানত রক্ষায় সর্বচ্চ চেষ্টা করেছেন। এজন্য আমাদের দয়াওয়ার অগ্রবর্তীদের সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাদের অনুসরণ করতে হবে। সর্ব প্রথম আমরা যদি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবনের দিকে তাকাই, তিনি যখন প্রথম ওহী পেলেন তখন বলেছিলেন “আজ হতে আমার আর বিশ্রাম নেই” আসলেও তিনি (সা) আর কোন বিশ্রাম নেননি তার ওফাতের আগপর্যন্ত।
সাহাবাদের ত্যাগের ব্যপার আমাদের সবার জানা তাই আমরা যদি বর্তমানে যারা ইসলামকে পুনরায় প্রতিষ্টাকারী নিষ্টাবান ব্যক্তিদের দিকে তাকাই যারা সর্ব প্রথম এই দাওয়াহকে শুরু করেছিলেন ফিলিস্তিন হতে আজ যা মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পরেছে তাহলে দেখব তারা কত কষ্ট করেছেন এর জন্য। ইন-শা-আল্লাহ তাদের ব্যপারেই আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। (আল আহযাব: ২৩)
হে আল্লাহ্ আপনি আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা প্রতীক্ষা করছে ওয়াদা পূরণ করে মৃত্যুবরণ করার জন্য।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন। (হা মিম আস সাজদা: ৩০)
হে আল্লাহ্ আপনি আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা আপনাকে রব মেনে দৃঢ় থকবে এবং আমাদের মৃত্যুর পূর্বে ফেরেস্তাহ দিয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দান করুন। আমীন।