রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: জাগরণ নাকি চক্রান্তের বেড়াজালে বাংলাদেশ?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের কিছু উল্লেখযোগ্য ইস্যুর মধ্যে একটি হল যুদ্ধপরাধ ইস্যু। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে; যদিও বিচার রায় কার্যক্রম শুরু করে ক্ষমতার মেয়াদ যখন শেষ পর্যায়ে।

নানা জল্পনা-কল্পনা, ধ্যান-ধারণা শেষে সর্বপ্রথম আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায় দেওয়া হয় এবং কয়দিন পূর্বে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন। এই রায়ের মধ্যে চমকপ্রদ অংশ হল এই জায়গায় যে, যার (আবুল কালাম আযাদ) ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে তিনি পলাতক আর যিনি হাতের নাগালে অর্থ্যাৎ রায় বাস্তবায়নে সুবিধাজনক স্থানে যিনি তাকে দেওয়া হল যাবজ্জীবন। আর এই সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড রায় দেয়ার পর ফাঁসির দাবিতে তথাকথিত বেনামী জাগরণ দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মিসরের তাহরীর স্কয়ারের নামানুসারে শাহবাগ স্কয়ারের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে; যদিও তাহরীর স্কয়ারের আন্দোলন আর এই নৃত্য-গীতের মধ্যে দূর দূর পর্যন্ত কোন মিল নেই। কারণ, তাহরীর স্কয়ারের আন্দোলন ছিল অত্যাচারী শাসকের পতনের দাবিতে, বাংলাদেশের শাহবাগের মত কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়।

সকল প্রেক্ষাপটসমূহ বিবেচনা করলে দেখা যায়, এটি কোন বিচারের দাবিতে গড়ে তোলা আন্দোলন নয়; বরং, একটি সুবিশাল চক্রান্তের স্বরূপ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা। আর অনুধাবনের লক্ষ্যে আমাদের বেশ কিছু সময় পেছনে ফিরে যেতে হবে।

২০০৯ সালে হাসিনা সরকার যখন ক্ষমতায় আসীন হয়, তখন থেকে তার আমেরিকা-ভারত প্রীতির প্রেক্ষিতে কার্যক্রম শুরু হয়। নির্বাচনে জয়লাভের শর্তস্বরূপ আমেরিকার সাথে কৃত ওয়াদাসমূহ বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়। একে একে ACSA/TICFA থেকে শুরু করে সামরিক মহড়া যেমনঃ টাইগার শার্ক- ১,২,৩,৪ ইত্যাদির মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে আমেরিকার দালাল সৃষ্টির চেষ্টা বজায় রাখে।

অপরদিকে, ভারতের সাথে তার চুক্তিসমূহের মধ্যে TIFA, TRANSIT ইত্যাদি বাস্তবায়ন করতে থাকে। চুক্তির ধারাবাহিকতায় চক্রান্ত বাস্তবায়নে হত্যা করে নিষ্ঠাবান সেনা অফিসারদের, আলেমদের দেওয়া হয় কুফর সমর্থনের প্রশিক্ষণ এবং তাবেদারীতে বাধ্য করা হয়।

আর অভ্যন্তরীণ স্বার্থসিদ্ধিতে যুদ্ধপরাধের বিচারের নাটক শুরু করে। জনগণের আবেগ পুঁজি করে গড়ে তোলা এই মঞ্চ নাটক বিচারের নামে জনগণের সামনে মূলা উচিয়ে ধরে রাখা ছাড়া আর কিছুই নয়। নির্বাচনপূর্ব জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধপরাধের বিচার শুরু করলেও তা মূলত রাজনৈতিক দ্বন্দের এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বাস্তবায়ন।

কিন্তু মূল সমস্যা এখানে নয়, বরং অন্যদিকে। আওয়ামী লীগ আমেরিকার ছত্রছায়ায় নির্বাচনে জয় লাভ করলেও এটি কোন ভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত হবেনা যে, আওয়ামী লীগ কংগ্রেস তথা ভারত-বৃটেন পন্থী একটি দল। অপরদিকে, বিএনপি আমেরিকাপন্থী। বলা যেতে পারে, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলসমূহে ভেদে প্রভুরা আমেরিকা-বৃটেন।

ক্ষমতায় আসীনের পর থেকে আওয়ামী সরকারের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ভালোই চলছিল। কিন্তু এই সম্পর্কের ওজন যখন ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের তুলনায় ভারী হয়ে উঠলে বিষয়টি আওয়ামীলীগের মূল প্রভু বৃটেনের ভয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, আমেরিকার এই অঞ্চলে আনাগোনা ও বাংলাদেশে তাদের অবস্থানের পাঁয়তারা বৃটেনের স্বার্থসিদ্ধি এবং তার দোসর ভারতের লক্ষ্য আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। কারণ, আমেরিকা–ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থভিত্তিক।

প্রতিবছর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপে ভারত সম্পর্কে আমেরিকা বক্তব্য থাকে এইরূপ: “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত। এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার মূল ভিত।” অর্থ্যাৎ তাদের সম্পর্কের ভিত্তি সুস্পষ্টভাবে স্বার্থের উপর ভিত্তি করে এবং যখন কারো স্বার্থের ওপর আঘাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় তখন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়।

যাই হোক, আমেরিকার এই অঞ্চলের উপস্থিতি যখন ভারত-বৃটেনের স্বার্থবিরোধী অবস্থানে পৌঁছায়, তখন বৃটেন তার সরকার নিয়ন্ত্রণ কলকাঠি নাড়তে শুরু করে এবং হাসিনা সরকারের নাড়ির দড়ি টেনে ধরে; এবং আমরা এর স্বরূপ দেখতে পায় যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিস্ট পত্রিকায় আওয়ামী সরকারের একের পর এক কঠোর সমলোচনার মাধ্যমে। যার মধ্যে আমেরিকা তোষামোদের বিষয়টিও উঠে আসে।

এবং পরবর্তীতে হাসিনার অবস্থান পরিবর্তন হতে থাকে। বিভিন্ন বিষয়ে সে আমেরিকাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। আমেরিকার সাথে একের পর এক রাষ্ট্রীয় বৈঠক থেকে ব্যস্ততার অজুহাতে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করে। আর বিষয়টি সুস্পষ্ট হতেই আমেরিকা তার ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে। আই.এম.এফ-এর মাধ্যমে পদ্মা দুর্নীতি ইস্যু উঠায় এবং বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়; যা ছিল মূলত হাসিনা সরকারের মুখে চপেটাঘাত।

কিন্তু হাসিনা সরকার প্রমাণ করল যে, এই দ্বন্দে সে একাকী খেলোয়ার নয়; বরং সে তার জন্মগত প্রভু অর্থ্যাৎ বৃটেন এবং আমেরিকার অপর স্বার্থভিত্তিক শত্রু রাশিয়ার ছত্রছায়ায় রয়েছে, আই.এম.এফ-এর ঋণ প্রত্যাখান এবং EU–এর সাথে সম্পর্কন্নোয়নের দ্বারা। এটি শুধুমাত্র ঋণ প্রত্যাখান ছিল না, বরং আমেরিকাকেই প্রত্যাখান করা।

এমতাবস্থায় আমেরিকা ঠিক একই প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যেমনটি সে সর্বদা প্রস্তুত রাখে তার সাথে বিরুদ্ধাচরণকারীদের জন্য। পূর্বকৃত চুক্তি অনুযায়ী ACSA চুক্তির ভিত্তিতে সে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে তার সেনা, গোয়েন্দা উপস্থিতি সক্রিয় করার পাশাপাশি বিমান, নৌ ঘাটি স্থাপন আর সেনাবাহিনী-নৌবাহিনীতে তাদের প্রভাব বিস্তারের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে এবং রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের নির্যাতন, গুম, হত্যা করে চলেছে।

আর এই পরিস্থিতিতে যখন আওয়ামী লীগ সরকার তার মেয়াদের শেষ প্রান্তে, তখন নির্বাচন ইস্যু হিসেবে পুনরায় যুদ্ধপরাধ ইস্যুটি প্রদর্শনের জন্য তড়িঘড়ি কজরে কিছু বিচারের নাটক দেখাচ্ছে এবং বাকি বিচার পরবর্তীতে নির্বাচিত হলে পরিপূর্ণ করবে, এই ধরণের ইশতেহার জারিই তাদের চক্রান্তের অংশ। হয়ত, পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারো এইসকল মিথ্যা ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত হবে।

কিন্তু বিষয়টি শুধুমাত্র আভ্যন্তরীণভাবে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এই বিচারকে পুঁজি করে মূলত আমেরিকা বৃটেনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়েছে। এবং হাসিনা-খালেদা-জামায়াত-বামদলগুলো এখানে শুধুমাত্র দাবার গুটির ভূমিকা পালন করছে।

আগেই বলা হয়েছে যে, তাদের ঐক্যের মূল হল তাদের স্বার্থ। যখন কোন অবস্থা বা কার্যক্রম স্বার্থবিরোধী হয়, তারা যে কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

আরব জাগরণের পর আরব পেনিনসুলা থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমেরিকা-বৃটেন এখন এশিয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। কারণ এই অঞ্চলের উপর শীঘ্রই নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলে তা যেকোন সময় হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতদিন যাবৎ আরবের মত এই অঞ্চলসমূহ তাদের দালাল শাসক দ্ব্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আরবের মত এই অঞ্চলেও উম্মাহ’র জাগরণের সম্ভাবনা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে এবং এই কারণে এই অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় অধিক হার বিস্তৃত করতে উদ্যত হয়েছে। নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কর্মসূচির নামে সেনাবাহিনীর সাথে একের পর এক সামরিক মহড়া, জঙ্গি দমনের নামে শারীরিক উপস্থিতি, অঞ্চলসমূহ অস্থিতিশীল করে রাখা ইত্যাদি অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই সবের কারণ হল; আরবের মত এই অঞ্চলেও খিলাফতের জন্য দিন দিন যে আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তা রুখে দেওয়া এবং চীনের অর্থনৈতিক উন্নতি, যা যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন উভয়ের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ। কারন চীন ইতোমধ্যে তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত হিসেবে স্বর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চীনকে নিয়ন্ত্রন এবং অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলে উভয়েই (আমেরিকা-বৃটেন) উঠে পড়ে লেগেছে।

আর বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্মগত দালাল হাসিনা-খালেদা। হাসিনা বৃটেন-ভারতের স্বার্থপন্থী কাজ করে যাচ্ছে অবিরতভাবে। আর খালেদা নিজের রাজনৈতিক দুর্বল অবস্থানের কারণে এখন সরাসরি আমেরিকাকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আহবান করে যাচ্ছে নির্লজ্জভাবে।

আপনি তাদের অনেককে দেখবেন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত আছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে” [আল মায়িদাহ: ৮০]

যদি তারা আল্লাহ’র প্রতি ও রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না” [আল মায়িদাহ: ৮২]

আর এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধপরাধের বিচারের রায় নিয়ে এই জাগরণে শাসক নাটকের সূত্রপাত ।

একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে অনুধাবন করা যাবে সম্পূর্ণ বিষয়টি । এই মুহূর্তে শাহাবাগ চত্বরে নাটকটির মূল ভূমিকায় রয়েছে বামদলগুলো। কিন্তু আসল ব্যাপার হল বামদলগুলো ১৪ দল অর্থাৎ আওয়ামী মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত ।

বিগত ৪ বছর যাবৎ আওয়ামীলীগ তার অন্যায়, জুলুমের কারণে এমনিতেই জনসমর্থন হারিয়েছে এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভের পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে । অপরদিকে, বি এন পি তার রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার কারণে দুর্বল, ভঙ্গুর অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে । তাই, শেষ সময়ে নিজ প্রভু আমেরিকার হস্তক্ষেপ কামনায় তার শেষ ভরসা ।

আওয়ামীলীগ যখন বুঝতে পারলো, জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি সমর্থন শূন্যের কোঠায় এবং পরবর্তী নির্বাচনে এই যুদ্ধপরাধীর ইস্যুও কাজে দিবে না । ঠিক এইসময় বিচারের নামে নাটকের সূত্রপাত ঘটায় । এবং এর নেতৃত্ব নিয়ে নেয় বামদলগুলো ।

যাদের কিছুদিন আগে হরতালের ঘোষণা দিয়ে গান-বাজনার মাধ্যমে অহিংস বা দেশপ্রেমিক প্রমাণে উদ্যত হয়েছিল সরকার । এই বামদলগুলো আওয়ামী বিচ্ছিন্ন কোন সংঘটন না; বরং আওয়ামীলীগের সাথেই জোট বাঁধা দল ।

অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে কুফর এই জাগরণ দিয়ে একসাথে দুটি কাজ সারছে। ক. তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন খ. পুনরায় আওয়ামীলীগের আঁচলেই জাগরণের ভোট ।

এই তথাকথিত জাগরণের মূল উদ্দেশ্য:-

তথাকথিত এই জাগরণের প্রেক্ষিতে শাহবাগ চত্বরকে আজ শাহবাগ স্কয়ার বলা হয়েছে যা মূলত মিসরের ‘তাহরীর স্কয়ার’ অনুকরণে ।

স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মিসরের আন্দোলন ছিল অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে, কোন কুফরের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নয়। যদিও সে জাগরণও ছিনতাই করা হয়েছে ইসলামী লেবাসধারীদের মাধ্যমে এবং সে পুনরায় জাগরণ জেগে উঠেছে ।

বাংলাদেশের এই মঞ্চনাটকে শুক্রবারের সমাবেশে বক্তৃতায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এর উদ্দেশ্য ।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন এভাবে, “আমরা যুদ্ধ করিনি বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায়, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়” ।

মূলত, এটি একটি মিথ্যাচার । তৎকালীন মানুষ যুদ্ধে যাওয়ার আগে শপথ নিয়েছিল অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নয় । কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদল হয় এক দালাল থেকে আরেক দালালের হাতে ।

এই বক্তব্যসমূহ সুস্পষ্টভাবে ধারণা দেয় তাদের ঘৃণ্য চিন্তার, জঘন্য ষড়যন্ত্রের ।

কাফেররাই কেবল আল্লাহ’র আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে। কাজেই নগরীসমূহে তাদের বিচরণ যেন আপনাকে বিভ্রান্তিতে না ফেলে” [আল মু’মিন: ৪]

আর তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বেরিয়ে পড়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে গর্বিতভাবে এবং লোকদেরকে দেখাবার উদ্দেশ্যে। আর আল্লাহ’র পথে তারা বাঁধা দান করত। বস্তুত আল্লাহ’র আয়ত্তে রয়েছে সে সমস্ত বিষয় যা তারা করে” [আল আনফাল: ৪৭]

তারা জনগণের মাঝে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা, আবেগ মুছে দিতে চায়। কারণ দিন দিন জনমত ইসলামের দিকেই ধাবিত হচ্ছে । ইসলামের প্রতি জনসচেতনতা তাদের ভাবিয়ে তুলছে এবং এই কারণে তারা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে লিপ্ত এবং বামদল! আওয়ামী-বি.এন.পি প্রত্যেকেই এখানে ননীর পুতুল; যা ইতোপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ।

এবং পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রকারীরা মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে যেমনটি করা হয়েছিল পূর্বে। অতঃপর সংঘাতের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে নিজেদের শারীরিক অবস্থার জানান দিবে কুফর শক্তিসমূহ ; যা আমরা বর্তমানে পাকিস্তানে দেখছি ।

অথচ এরা যদি তোমাদের কাবু করতে পারে, তাহলে এরা শত্রুতে পরিণত হবে, এরা নিজেদের হাত ও কথা দিয়ে তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে, এরা তো এটাই চায় যে, তোমরাও তাদের মত কাফের হয়ে যাও” [আল মুমতাহিনা: ২]

সুতরাং আমাদের মুসলিমদের জন্য এটি কোনভাবেই সমীচীন হবে না যে, আমরা এই সকল চক্রান্তে পা দিয়ে কুফরের চক্রান্ত বাস্তবায়নে তাদের সাহায্য করব ।

বরং, ধর্মনিরপেক্ষতার মত অসুস্থ মতবাদ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এই সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কর্তব্য এবং কুফরের চক্রান্তের সমুচিত জবাব দেওয়া আমাদের দায়িত্ব আর এটি সম্ভব শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা উম্মাহর সাথে প্রতারণাকারী প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির নিশ্চয়তা দেয়। (ইসলামী রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান, ধারা-৬৮)

ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা মুসলিমদের উপর অপর রাষ্ট্রের খবরদারিতা খর্ব করবে। (ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান, পররাষ্ট্রনীতি, ধারা-১৭৬)

ইসলামী রাষ্ট্র এর সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখে বিদেশী শক্তির প্রভাব থেকে ।

ইসলামী রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হল ইসলামের আক্বীদা । সুতরাং, ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল বিষয়সমূহ ইসলামের আদলেই পরিচালিত হয়; যাতে ব্যক্তি বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মত ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ নেই ।

আজকে বাংলাদেশসহ সারা মুসলিম বিশ্ব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা মুসলিমদের কাফিরদের অধীনস্থ করে রেখেছে। আর এই কাফিরদের হাতে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে মুসলিমদের বিশ্বাস ও জীবন। পরিবর্তনের রাজনীতির মিথ্যা আশ্বাসে কোন পরিবর্তন আসেনা। বিভিন্ন মতবাদ-দলের ছদ্মাবরনে এরা সবাই ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের আনুগত্যকারী দালাল। এরা কখনো একটি অপরটির বিকল্প হতে পারেনা।

মুসলিমদের জন্য একমাত্র বিকল্প, বৈধ, গ্রহণযোগ্য ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কতৃক মনোনীত ব্যবস্থা খিলাফত শাসন ব্যবস্থা। যা রাসূল (সা) মদীনাতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খিলাফত সরকারই মুসলিমদের একমাত্র মুক্তির উপায়। এটা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয দায়িত্ব। খালেদা-হাসিনা বা অন্য কোন গণতান্ত্রিক বা মানবরচিত শাসন ব্যবস্থার শাসকের সাথে মুসলিমদের খলীফার কোন তুলনায় হয়না। সারা বিশ্বে মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অচিরেই আসবে খিলাফাহ . . . . . . . ইন-শা-আল্লাহ।

“. . . অতঃপর আবারো আসবে নব্যুয়তের আদলের খিলাফত . . . . .” [মুসনাদে আহমদ]

তথ্যসূত্র:

http://www.globalsecurity.org/military/facility/acsa.htmhttp://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-02/news/325986
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=e4cb439c73e474cd2ee23a9455ada295&nttl=20130115090233166321
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-01-30/news/325297
http://m.washingtontimes.com/news/2013/jan/30/the-thankless-role-in-saving-democracy-in-banglade/

Leave a Reply