“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমাদের অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সুরা মায়েদা-০৩)
ইসলাম একটা সম্পূর্ণ ও সত্য জীবন ব্যবস্থা যা অন্যান্য সকল বিশ্বাস ব্যবস্থা বা মতবাদ থেকে পৃথক একজন ব্যক্তি যখনই লা-ইলাহা ইল্লালাহ সাক্ষ্য দেয় তখনই মৌখিকভাবে অন্যান্য সকল ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে একজন ব্যাক্তি নামাযের জন্য কিভাবে পবিত্র হবে সেটি যেমন ইসলাম বলে তেমনি তার আকীদাকে ভ্রান্ত আকিদা থেকে কি ভাবে রিক্ষা করবে সেটা ইসলাম বলে দেয় তেমনি একটা রাষ্ট্রের অর্থনীতি কিভাবে পরিলক্ষিত হয় তাও বলে দেয়। তেমনি কোন শাসক সমাজ পরিচালনা করবে বা শাসকের জবাবদীহিতা কি রকম হবে বা জনগণের সাথে শাসকের সম্পর্ক কি হবে বা ইসলামের প্রচারকার্য কিভাবে হবে সবই ইসলামে বলা রয়েছে। তাই কোন ব্যক্তি যখন নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে তখন তাকে ইসলামের সব হুকুম আহাকাম মেনে চলতে হবে এখানে কিছু মানব,কিছু মানব না বা সহজগুলো নিব কঠিনগুলো নিব না, এরকমটা ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
“হে ঈমানদারগণ তোমরা পুর্নাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ কর” (সুরা বাকারা-২০৮)
অর্থাৎ তোমরা পরিপূর্ণভাবে মুহাম্মাদ (সা) এর দ্বীনের সমস্ত আইনের আনুগত্য কর এবং সেখান থেকে কোন কিছু পরিত্যাগ কর না।
ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্রবিহীন একজন মুসলিম চাইলেও সম্পূর্ণ ইসলাম পালন করতে পারবে না কারন ইসলাম শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু বিশ্বাস বা বৈশিষ্ট্যের নাম নয়। বরঞ্চ ইসলামের ইসলামের হুকুম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিব্যপ্ত। তাই একজন মুসলিম আন্তরিকভাবে চাইলেও অর্থনিতি, সামাজিকনীতি, পররাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষানীতি ইসলাম হুকুম অনুযায়ী পালন করতে পারে না।
“যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে তার কাঁধে কোন খলীফার বায়আত নেই তার মৃত্যু হচ্ছে জাহেলিয়াতের মৃত্যু” (মুসলিম)
একজন মুসলিমকে অবশ্যই খিলাফত ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হবে কারণ খিলাফত না থাকলে খলিফা থাকে না খলিফা না থাকলে বায়আতের প্রশ্নও আসে না।
কিন্তু বায়আতবিহীন মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু, অর্থ্যাৎ ইসলাম পূর্ববর্তী সময়ের মৃত্যু যা কোন মুসলিমের কাম্য নয়। এমতাবস্থায় একজন মুসলিমের একমাত্র কাজ হল সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা। যে ব্যবস্থা মুসলিমদের জীবন, সম্পদ ও বিশ্বাসের নিরাপত্তা দিবে।
একজন মুসলিম যখন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রত্যাখান করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কজ করবে, তখন তার উপর নেমে আসবে সীমাহীন নির্যাতন। তাকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ কাঁটাযুক্ত পথ, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা। এটাই ছিল পূর্ববর্তীদের সুন্নাহ যার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা হক থেকে বাতিলকে পৃথক করে দেন। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা ও একনষ্ঠভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
“ঐসব লোকেরা কি ধারণা করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি, একথা বললেই তারা অব্যাহতি পাবে আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আর আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম যারা পূর্বে অতীত হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ সেই লোকদেরকে জেনে নিবেন যারা সত্যবাদী ছিল এবং জেনে নিবেন মিথ্যাবাদীদেরও।” (সূরা আনকাবুত: ২-৩)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরো বলেন:
“তোমরা কি মনে কর যে, (বিনাশ্রমে) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনি যা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। তাদের উপর এমন এমন অভাব ও বিপদ-আপদ এসেছিল এবং তারা এমন প্রকম্পিত হয়েছিল যে, স্বয়ং রাসূল ও তার মুমিন সাথীরাও বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? স্মরণ রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ’র সাহায্য নিকটেই।” (আল বাকারা: ১৪০)
পূর্ববর্তীদের সকল নবী রাসূল অ তাদের অনুসারীরা ও এই পরীক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রত্যেক মুসলমানকেই এই পরীক্ষা করেন এবং সত্য থেকে মিথ্যা আলাদা করে দেন।
হযরত আবু হুরাইরা(রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সা) বলেছেন, আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যান চান তাকে বিপদে (পরীক্ষায়) ফেলেন, হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন ইমানদার নর-নারীর জান মাল ও সন্তানাদির উপর বিপদ আপদ আস্তেই থাকে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সমীপে উপস্থীত হয় এমন অবস্থায় যে তার আর কোন গুনাহ থাকে না।
বিশ্বাস বা কার্যের দৃঢ়তার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা করা হয় যুগে যুগে নবী রাসূলদের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে দাউদ, ইউসুফ, ইউনুস, ইব্রাহীম (আ) প্রত্যককে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
“আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয় কিছুটা ক্ষুধা কিছুটা জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনাস্টের মাধ্যমে আপনি ধর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন” (বাকারা-১৫৫)
“যদি তোমাদের পিতারা, তোমাদের পুত্ররা, তোমাদের ভাইরা, তোমাদের স্ত্রীরা, তোমাদের আর ঐসব সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছো আর ঐ ব্যবসায় যাতে তোমরা মন্দা পড়ার আশংকা করছো অথবা ঐ গৃহসমুহ যেখানে অতি আনন্দে বসবাস করছো, (এসব কিছু যদি) আল্লাহ ও তার রাসুলের চেয়ে এবং তার পথে সংগ্রাম করার চেয়ে তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ তার (শাস্তির) নির্দেশ পাথিয়ে দেন”। (সুরা তাওবা-২৪)
আল্লাহ সুবানাহু ওয়া তাআলা তার দাসদের পরিশুদ্ধ করার জন্য পরীক্ষা নিবেন এবং পরীক্ষার বিষয়বস্তু কি হবে সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন যতে তের দাসের পরীক্ষা কৃতকার্য হতে পারে।
বর্তমানে আমাদের জন্য কুরআন-সুন্নাহ তো আছেই সেই সাথে আরো আছে হক পন্থী ব্যক্তিদের জীবন ইতিহাস যা থেকে আমরা জানতে পারি কি রকমের পরীক্ষা তাদের উপর আপতিত হয়েছে। মৌলিকতার দিক থেকে পরীক্ষাসমমূহ একই, যা অপরিবর্তনীয় কিন্তু যুগের ব্যবধানে পরীক্ষার উপায় উপকরনে শুধু পরিবর্তন আসছে।
একজন মুসলিম যখন ইসলাম পালন করবে এবং সেই দাওয়াত সমাজে নিয়ে যাবে সর্বপ্রথম তার বাধা আস্তে পারে পরিবার পরিজন নিকট আত্মীয় থেকে সাহাবীদের ক্ষেত্রে ও ঠিক এমনটা ঘটেছিলো উসায়েত বিন উমায়ের এর মা তাকে বাধে রেখেছিলেন,যাদের মা মাতৃত্বের দোহাই দিয়ে তাকে দ্বীন ত্যাগ করতে বলেছিলেন, ইসলাম পালন ও প্রচারে আমাদের পরিবারও বাধার প্রাচীর হিসেবে দাড়াতে পারে। দাওয়ার কাজের জন্য হয়ত তার পার্থিব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষতি হতে পারে। তার চাকুরি চলে যেতে পারে বা হারাম চাকুরির সুজগ আস্তে পারে, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইসলামের ডাকে হিজরতের কারনে সাহাবীরদের ব্যবসা, বাড়ীঘর, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে, মক্কা থেকে মদীনায় চলে যেতে হয়েছিল। দা’ওয়ার কারণে সামাজিক কিছু বাধার মুখে তাকে পড়তে হবে। তাকে সমাজে জঙ্গী, মৌলবাদী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হতে পারে।
দা’ওয়াকারীকে রাস্ট্রীয় কিছু বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। দা’ওয়াহে প্রচার যাতে প্রসারিত না হয় তাই পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে পারে। পুলিশি হয়রানী, মামলা, হামলা ইত্যাদির মোকাবেলা করতে পারে। মানসিকভাবে দা’ওয়াহকারীর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে। তার পরিবারের ক্ষতি, তার ক্ষতি, ক্যারিয়ার নষ্ট ইত্যাদি আসতে পারে।
দা’ওয়াহকারীর কাছে প্রলোভনও আসতে পারে। এতা সাধারণত হতে পারে পরিবার ও সমাজ থেকে।দা’ওয়াহ ছেড়ে দিলে ভালো চাকরি অথবা পছন্দ অনুযায়ী মেয়ের সাথে বিয়ে অথবা দেশের বাইরে পাঠানোর স্বপ্ন। সবকিছুর পিছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে দা’ওয়াহকারী যেন দা’ওয়াহর পথ থেকে ফিরে আসে।
দা’ওয়াহকারীর উপর আসতে পারে হামলা, রিমান্ড, জেল, হাজতবাস, নির্যাতন ইত্যাদি। তাকে ভিতিকরভাবে মিডিয়াতে উপস্থাপন, মিথ্যা সিংবাদ পরিবেশন ও এলাকায় নিয়ে আসার মাধ্যমেওন্যান্য দা’ওয়াহকারীদের ওপরও মানসিক নির্যাতন আসতে পারে। এইসবকিছুই রাসূল (সা) ও সাহাবা (রা)-দের উপরও এসেছিল। উনারা অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন ও সাফল্য লাভ করেছেন। ইসলামের প্রথম শহীদ আম্মার ও সুমাইয়াকে মক্কী জীবনে হত্যা করা হয় শুধুমাত্র দা’ওয়াহর কারণে।
এসকল পরীক্ষাসমূহ যে একজ দা’ওয়াকারীর উপরই আসবে এমন না, বিভিন্ন পরীক্ষা বা একাধিক পরীক্ষা একসাথে আসতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের প্রত্যেককে তাওফীক দেন এসব পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য্য ধারণ করার।
“তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের সাথে সাহায্য প্রার্থনা করো এবং নিশ্চয়ই এটা বিনয়ীদের ছাড়া অন্যদের জন্য কঠিন কাজ।” (সূরা বাকারা: ৪৫)
যখন রাসূল(সা)-কে কোন কাজ চিন্তার মধ্যে নিক্ষেপ করত তখন তিনি নামায আরম্ভ করে দিতেন। এমন পরিস্থিতিতে যদি আমরাও পড়ি যেটা আমাদে৪র অনুকূলে নয় তখন আমরা ধৈর্য্য ধারণ করব এবং নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ’র সাহায্য প্রার্থনা করব, নিশ্চয়ই আমাদের জন্য একটা উত্তম পথ বের করে দিবেন।
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের চিন্তা করো যখন তোমরা সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। তোমাদের সবাইকে আল্লাহ’র কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের বলে দেবেন যা কিছু তোমরা করতে” (সূরা মায়িদা: ১০৫)
সুতরাং, এই আয়াত থেকে অনেকে এই সিধ্বান্তে পৌছে যে, মুসলিমগণ কেবলমাত্র তার এবং তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল ও তাকে অন্য মুসলিমদের কাছে দা’ওয়াহ বহন না করলেও চলবে।
হুযায়ফা বিন ইয়ামান (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন: “আমি বললাম যদি কোন মুসলিমের জামা’আত বা ইমাম না থাকে তাহলে কি হবে? তখন তিনি (সা) বললেন, অতঃপর তুমি সেসমস্ত দল পরিত্যাগ করবে, যদিওবা তোমাকে কোন গাছের গুঁড়ি কামড়ে ধরে রাখতে হয় যতক্ষণ না তোমার মৃত্যু এসে যায়”।
লোকেরা এটি ধারণা করেছে যে, যখন মুসলিমদের খলীফা থাকবে না তখন মুসলমানদের জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা ফরয নয় বরং এ অবস্থায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলবে।
এ আয়াত ও হাদীসগুলো ভুলভাবে বুঝার কারণে সবর সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণাটি ভুল। যার কারণে আমরা দেখি বর্তমান শাসকদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা, সৎ কাজের আদেশ এবং অসত কাজের নিষেধ, খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহ’র আনুগত্য করে যাওয়া ইত্যাদি সবর হিসেবে গণ্য হয়না।
বরঞ্চ ব্যক্তিগত কিছু আমল আখলাক পালন করা, সামাজিক বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ না করা, শাসকের বিরোধীতা না করা এবং বর্তমান কুফর ব্যবস্থায় অত্যন্ত নির্লিপ্তভাবে জীবনযাপন করাই সবর হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোন্টাই সবর নয়। সবরের প্রকৃত শিক্ষা আমাদের নিতে হবে নবী-রাসূল ও সাহাবা এবং পূর্ববর্তী দা’ওয়াহকারীদের থেকে।
সবর হল আল্লাহ’র প্রত্যেকটি হুকুম পালন করা এবং হুকুম পালনের ক্ষেত্রেকোন প্রতিবন্ধকতা আসলে ধৈর্য্য ধারণ করা ও কাজ চালিয়ে যাওয়া। বিলাল, মুস’আব, আম্মার, খাব্বাব ও অন্যান্য সকল সাহাবী থেকেও আমরা এই শিক্ষা পাই।
সবর হল আনসার ও মুহাজিরদের সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে এক ইলাহ’র সাক্ষ্য দেওয়া ও দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাওয়া।
সবর হল বিলাল (রা)-এর সমস্ত বাঁধার মুখেও বিশ্বাসে উপর অটল থাকা।
সবর হল আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদের (রা) কাফের শাসকগোষ্ঠীর সামনে কুর’আন তিলাওয়াত করা ও এর পরিণতি ভোগ করা।
সবর হল আবদুল্লাহ বিন হুযায়ফার (রা) অত্যাচারী-অবিশ্বাসী শাসকের সামনে আল্লাহ’র মর্যাদাকে উর্ধে তুলে ধরা।
আমরা ইসলামের চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে দেখি সবর মানে আল্লাহ’র পথে দা’ওয়াত দিয়ে যাওয়া এবং কোন বাধা এলে ধৈর্য্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জন করা, কখনোই আনুগত্য প্রদর্শন থেকে সরে যাওয়া নয় বা ইসলাম প্রচারের কাজ বন্ধ রাখা সবর নয়।
সবরকারীদের মর্যাদা আল্লাহ’র নিকট অত্যন্ত উঁচুতে। সবরকারীদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বিনা হিসেবে পুরষ্কার দান করবেন।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (র) বলেনঃ কিয়ামতের দিন একজন আহ্বানকারী দাক দিয়ে বলবেন- ধৈর্য্যশীলগণ কোথায়? আপনারা উঠুন এবং বিনা হিসেবে বেহেস্তে প্রবেশ করুন। একথা শুনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে যাবেন এবং বেহেস্তের দিকে অগ্রসর হবেন, ফেরেশতাগণ তাদের দেখে জিজ্ঞেস করবেন কোথায় যাচ্ছেন? তাঁরা বলবেন, ‘বেহেস্তে’। ফেরেশতাগণ বলবেন, এখনো তো হিসেব দেয়াই হয়নি। তাঁরা বলবেন, ‘হা, হিসেব দেয়ার পূর্বেই’। ফেরেশতারা বলবেন , আপনারা কিরকম লোক? তাঁরা বলবেন আমরা ধৈর্য্যশীল লোক, আমরা সর্বদা আল্লাহ’র নির্দেশ পালনে লেগে ছিলাম, তাঁর অবাধ্যতা এবং বিরুদ্ধাচরণ হতে বেঁচে থাকতাম, মৃত্যু পর্যন্ত আমরা তাঁর উপর ধৈর্য্যধারণ করেছি এবং অটল থেকেছি। তখন ফেরেশতাগণ বলবেন, বেশ, ঠিক আছে। আপনাদের প্রতিদান অবশ্যই এটাই এবং আপনারা এর যোগ্য। যান, বেহেশতে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করুন।
হযরত আবু ইয়াহইয়া সুহাইর ইবনে সিনান (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন: “মুমিনদের ব্যাপারটা খুবই বিস্ময়কর। (কেননা) তার সকল কাজই কল্যাণপ্রদ। মুমিন ছাড়া অন্যের ব্যাপারগুলি এরকম নয়। তার আনন্দের কিছু ঘটলে সে আল্লাহ’এ শোকরগুজারী করে, তাতে তার মঙ্গল সাধিত হয়। পক্ষান্তরে ক্ষতিকর কিছু ঘটলে সে ধৈর্য্য অবলম্বন করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকরই প্রমাণিত হয়”। (মুসলিম)
আবু তালিম