মৃত্যুপুরীতে বসবাস

পুরো দেশটা মনে হচ্ছে এক মৃত্যুপুরী। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার আগে শতবার ভাবতে হয়। যুদ্ধের ময়দানে বেসামরিক লোকদের হেটে যাওয়ার চেয়েও কঠিন হয়ে গেছে বাসা থেকে অফিসে আসা। কখন কার আঘাতে কে আহত বা নিহত হবে সেটি আক্রান্ত ব্যক্তি যেমন জানে না, তেমনি আক্রমণকারীও জানে না সে একটু পরে কাকে খুন করবে, জখম করবে।

এ কেমন দেশ?
এ কেমন স্বাধীনতা?

একটি জংগলেও বোধহয় প্রাণীরা এতোটা শংকিত ও আতংকিত থাকে না।
পুরো দেশ জুড়ে, বিশেষত ঢাকা শহরে এবং এর সড়ক পথে বর্তমান পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের মতো। কখন কোন চিপা গলি থেকে কে হরতাল বা অবরোধের পক্ষে আর কে বিপক্ষে মিছিল বের করবে, কে রড, চাপাতি আর বোমা-পটকা নিয়ে কার উপর কখন হামলে পড়বে, সরকারী বাহিনী কখন কোনদিকে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়বে আর লাঠি নিয়ে দৌঁড় দিবে তা কেউ বলতে পারছে না।

রোববার ঢাকায় ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার কাছেই আমাকে বারবার যেতে হয়। বিশ্বজিৎ দাস নিহত হওয়ার সেদিনও সেই এলাকার পাশে দিয়েই আমাকে যেতে হয়েছে। গুলিস্তান থেকে বাসে নেমে রিকসা নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখলাম সামনে মিছিলকারী ও পুলিশের সংঘর্ষ। সাথে সাথে রিকসা ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে অনেক সময় ব্যয় করে কর্মস্থলে যেতে হয়েছিলো সেদিন। আর দুপুরেই সংবাদ পেয়েছিলাম সেই সংঘর্ষে হতাহত হতভাগ্য বিশ্বজিৎ দাসের।

এই হানাহানি আর স্বার্থের রাজনীতি আর কত নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিবে?
আর কত মায়ের বুক খালি করবে?
আমাদের দেশের দুর্নীতিবাজ শাসক ও রাজনীতিকরা সাম্রাজ্যবাদীদের ইশারায় আর কতো বিশৃংখলা আর অরাজকতার পর মার্কিনী ও তাদের অন্য প্রভুদের হাতে এদেশ তুলে দিবে? -তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

তবে আমার মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই এই দেশ ও এই জাতীর ভাগ্যে সেই কঠিন সময় ও পরিস্থিতি আসছে। যখন ইরাক আফগানিস্তানের মতো এই দেশেও রক্ত আর লাশের বন্যা বয়ে যাবে। বঙ্গোপসাগরে যখন মার্কিন রণতরী চলে আসবে আর চীন ও ভারত যখন এদেশে বিশৃংখলা আর অশান্ত পরিস্থিতিতে শান্তির ধ্বজাধারী হিসেবে প্রকৃত গণতন্ত্রের ফেরী নিয়ে উপস্থিত হবে, তখনই এদেশের মানুষ তাদের আসল ভুলটি বুঝতে পারবে।

আজকে রাজনীতিকদের ক্রীড়নক হিসেবে যারা হানাহানি উসকে দিচ্ছে, যারা সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একনিষ্ট কর্মী সমর্থক হয়ে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, সীমাহীন অশান্ত পরিস্থিতিতে যখন সাম্রাজ্যবাদীরা সুযোগ নিয়ে এদেশে চলে আসবে তখন সবার আগে এই বেকুব ছেলে গুলোই তাদের বুলেট ও বোমায় আক্রান্ত হবে। কারজাই আর মিরজাফরের মতো আমাদের শাসকরাও কেবলমাত্র সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ চরিতার্থের জন্য টিস্যু পেপারের মতো প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার হবে মাত্র। এক সময় তাদের শেষ পরিণতিও হবে অত্যন্ত মর্মান্তিক। কিন্তু তখন আর শত আফসোস করেও কোনো লাভ হবে না।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে অনাগত সেই কঠিন বিপদের হাত থেকে হিফাজত করুন। সময় থাকতে রাজনীতিক ও দেশের আপামর জনসাধারণকে সঠিক বিষয়টি বোঝার তাওফীক দিন। যেনো তারা সময় থাকতে মানব রচিত মতবাদ আর মতাদর্শের বাইরে এসে মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত হওয়ার সুযোগ পান।

ইসহাক খান

Leave a Reply