ইসলামী দাওয়াহ বহন করার পদ্ধতি

নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ তাকী উদ্দীন আন-নাবহানি (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক লিখিত ‘নিযামুল ইসলাম’ বইটির খসড়া অনুবাদ-এর একাংশ হতে গৃহীত

ইসলাম অনুসরণ করার কারণে মুসলিমরা বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়েনি, বরং তাদের অধঃপতন শুরু হয়েছে যখন থেকে তারা ইসলামকে অনুসরণ করা ছেড়ে দিয়েছে, তাদের ভুমিতে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের সুযোগ দিয়েছে এবং তাদের মন পশ্চিমা ধ্যান ধারণায় আচ্ছন্ন হতে দিয়েছে। তাদের অধঃপতন শুরু হয়েছে যখন তারা ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বকে পরিত্যাগ করেছে, এর দাওয়াহকে অবহেলা করেছে এবং এর নিয়মকানুন (আহকাম) গুলোর অপপ্রয়োগ করেছে। কাজেই পুনর্জাগরণের জন্য মুসলিমদের ইসলামী জীবন যাত্রা পুনরায় শুরু করতে হবে। অবশ্য তাদের এ ইসলামী জীবন যাত্রার পুনরাবৃত্তি সম্ভব হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের মাধ্যমে পুনরায় ইসলামী দাওয়াহ শুরু করবে এবং এই দাওয়াহর মাধ্যমে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সম্ভব হবে যে রাষ্ট্র ইসলামের প্রতি আহবানের মাধ্যমে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব বহন করবে।

এক্ষেত্রে পরিস্কার থাকা জরুরী যে মুসলিমদের পুনর্জাগরণের জন্য ইসলামী দাওয়াহ’র মাধ্যমে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বকে বহন করতে হবে, এটা একারনে যে একমাত্র ইসলামই সমগ্র বিশ্বকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এবং এ কারনেও যে প্রকৃত পুনর্জাগরণ ইসলাম ব্যতিত সম্ভব নয়, তা মুসলিমদের জন্যই হোক কিংবা অমুসলিমদের জন্যই হোকনা কেন। এরই ভিত্তিতে ইসলামী দাওয়াহর কাজটি সামনে এগিয়ে নিতে হবে।

বিশ্বের কাছে দাওয়াহ কে নিয়ে যেতে হবে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব হিসেবে যা থেকে সকল ব্যবস্থা বিকশিত হয় এবং এই বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের উপর ভিত্তি করেই সকল চিন্তাধারা গঠিত, এবং কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই, এইসব চিন্তাধারা থেকেই জীবনের প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গীর উপর প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তির সকল ধারণা বিকশিত হয়।

বর্তমানে দাওয়াহ করতে হবে ঠিক যেমনি ভাবে অতীতে দাওয়াহ হয়েছিল এবং তা রাসূলুল্লাহ (সা) এর দৃষ্টান্তের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে তার পদ্ধতি (Method) থেকে সাধারণভাবে কিংবা সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়গুলোতে সামান্যতম বিচ্যূতিরও সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে যুগের পার্থক্য কোনরূপ গুরুত্ব বহন করেনা, কারণ এ পার্থক্য শুধুমাত্র উপায় ও ধরণেই (Means & Style) সীমাবদ্ধ। কিন্তু যুগ কিংবা স্থান পরিবর্তনের ফলে মানব জীবনের মৌলিক বিষয়াদি (essence) ও বাস্তবতা (reality) পরিবর্তিত হয়নি, এবং কোন দিন তা পরিবর্তিত হবেওনা।

কাজেই দাওয়াহর জন্য প্রয়োজন স্পষ্টবাদিতা, সাহস, শক্তিমত্তা, চিন্তাধারা ও ইসলামী ফিকরাহ ও তরীকাহর (আদর্শ ও পদ্ধতি) সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ যে কোন কিছুর মুখোমুখি হয়ে তার অসারতা কে চ্যালেঞ্জ করার মনোভাব, এক্ষেত্রে পরিস্থিতি ও এর পরিনতি যাই হোক না কেন।

চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব (সিয়াদা) যে ইসলামী আদর্শের জন্য, ইসলামী দাওয়াহ এ বিষয়টির অপরিহার্যতাই তুলে ধরে, তা অধিকাংশ লোকের পছন্দ হোক বা না হোক, তাদের নিকট গৃহীত হোক বা প্রত্যাখ্যাত হোক কিংবা তারা এর বিরুদ্ধাচারণ করুক, প্রচলিত প্রথার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হোক বা না হোক (এগুলোর কোনটাই বিবেচ্য বিষয় নয়)।

দাওয়াহকারীগণ (হামিলুদ দাওয়াহ) মানুষকে তোষামোদ করেনা, কর্তৃপক্ষের প্রতি সৌজন্য প্রদর্শন করেনা, কিংবা মানুষের প্রচলিত ঐতিহ্য ও রীতি নীতিকে গ্রাহ্য করেনা, এবং মানুষ তাকে গ্রহণ করবে কি করবে না তার প্রতিও মনোযোগ দেয়না। বরং সে শুধুমাত্র আদর্শের প্রতি অনুগত থাকে এবং অন্য কোন কিছুর প্রতি মনোযোগ না দিয়ে জীবনাদর্শটি প্রচার করে। তার জন্য অন্য আদর্শের অনুসারীদের তাদের স্বীয় আদর্শে অনুগত থাকার কথা বলা অনুমোদিত নয়। বরং তাদের প্রতি কোনরূপ বল প্রয়োগ ছাড়াই ইসলামী জীবনাদর্শ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়, কারণ দাওয়াহর দাবী হচ্ছে, ইসলামের পাশাপাশি অন্য কোন জীবনাদর্শ থাকবেনা এবং সার্বভৌমত্ব কেবল ইসলামেরই জন্য।

“তিনিই প্রেরণ করেছেন রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ যাতে তা অন্য সকল ব্যবস্থার উপর জয়যুক্ত হতে পারে যদিও বা মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সুরা তাওবা: আয়াত ৩৩)

রাসূলুল্লাহ (সা) এ পৃথিবীতে এসেছিলেন তার সত্যবাণী (রিসালাত) সহ এবং তিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। তিনি (সা) যে সত্যের প্রতি মানুষকে আহ্বান করতেন তা তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এবং তিনি সকল লাল কালো (মানুষের) অর্থাৎ সবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, এক্ষেত্রে ঐতিহ্য, প্রথা, ধর্ম, আদর্শ, শাসক ও জনগণ ইত্যাদি কোন বিষয়কেই তিনি গ্রাহ্য করেননি। রাসুলুল্লাহ (সা) ইসলামের বাণী ব্যতিত আর কোন কিছুর প্রতিই মনোযোগ দেননি। তিনি কুরাইশদের মিথ্যা উপাস্যগুলোকে উপেক্ষা করে ইসলামের দাওয়াহ শুরু করেন। তিনি তাদের আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তাদের অস্বীকার করেছিলেন অথচ তিনি ছিলেন একা, বিচ্ছিন্ন, তার কোন সাহায্যকারী ছিলনা, তার অস্ত্রও ছিলনা, শুধুমাত্র ছিল ইসলামের প্রতি দৃঢ় ও গভীর আস্থা ও বিশ্বাস এবং এর প্রতিই তিনি আহ্বান করেছিলেন। তিনি (সা) তৎকালীন আরবদের প্রথা, ঐতিহ্য, ধর্ম ও আদর্শের প্রতি মনোযোগ দেননি। এ বিষয়ে তিনি সৌজন্যতা দেখাননি কিংবা তাদের গ্রাহ্য করেননি।

একই ভাবে, দাওয়াহ বাহকদের সবকিছুকেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তন্মধ্যে প্রতিকূলতার শিকার হতে হলেও, প্রচলিত প্রথা, ঐতিহ্য, ক্ষয়িষ্ণূ চিন্তাধারা, ধারণা, জনমত, ইত্যাদি যা কিছু ভ্রান্ত সবকিছুর বিরুদ্ধেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তাকে অপরাপর আদর্শ ও ধর্মকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে যদিও বা এতে সে ঐসব আদর্শ ও ধর্মের অনুসারীদের গোঁড়ামী ও উগ্রবাদের শিকার হতে পারে কিংবা ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের শত্রুতার শিকার হতে পারে।

দাওয়াহর ক্ষেত্রে কোনরূপ ছাড় না দিয়ে (তা যতই ছোট হোক না কেন) ইসলামী আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মানসিকতা থাকতে হবে। দাওয়াহকারী কোন রূপ আপোসরফা, ছাড় দেয়া, অবহেলা, স্থগিতকরণ বা বিলম্বন মেনে নেয় না। বরং সে দাওয়াহ’র বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে নিয়ে নিশ্চিতভাবে এর তাৎক্ষণিক সমাধানে সচেষ্ট হয়। সে সত্যের ক্ষেত্রে (বাধাদানকারী) কোন মধ্যস্থতাকারী গ্রহণ করেনা। রাসূলুল্লাহ (সা) সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দলের তাদের মূর্তি আল-লাত-এর ধ্বংসের পূর্বে তিন বছর অক্ষত রাখার অনুরোধ গ্রহণ করেননি; তিনি তাদের ইসলাম গ্রহণের পূর্বশর্ত হিসাবে সালাত থেকে অব্যহতি দেননি। তিনি তাদের অনুরোধ অনুযায়ী আল-লাত কে দুবছর এমনকি একমাসের জন্যও রাখাও মেনে নেননি। তিনি এ অনুরোধগুলো দৃঢ়ভাবে ও চূড়ান্তভাবে, কোনরূপ দ্বিধা ও পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই অস্বীকার করেন। কারণ খুব সহজভাবে, মানুষ হয় বিশ্বাস করবে অথবা করবেনা এবং চূড়ান্ত পরিণতি হয় জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অবশ্য রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের একটি অনুরোধ রেখেছিলেন, তা হচ্ছে তিনি তাদের নিজহাতে মূর্তিগুলো ধ্বংস করতে বাধ্য করেননি, বরং আবু সুফিয়ান ও আল মুগীরাহ ইবনে শু’বাহ কে মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি সুনিশ্চিতভাবেই পরিপূর্ণ আকীদা ও তা বাস্তবায়নে যা কিছু প্রয়োজন তা থেকে কম কিছুই গ্রহণ করেননি। এই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি (সা) বিভিন্ন উপায় ও ধরণ গ্রহণ করেছিলেন কারণ তা সরাসরি ইসলামী আকীদা’র প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত নয়। কাজেই ইসলামী দাওয়াহ প্রচারের ক্ষেত্রে ইসলামী ধারণার (ফিকরাহ) এবং এর প্রয়োগের পরিপূর্ণতার ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। ইসলামী ফিকরাহ ও তরীকাহ’য় কোনরূপ আপোষ করা যাবেনা। এর দাবী অনুযায়ী যে কোন ওয়াসীলা (উপায়) ব্যবহারে কোন ক্ষতি নেই।

ইসলামী দাওয়াহর ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর প্রতিটি কাজই দাবি করে যে তার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য (objective) থাকবে। এবং এটাও দাবি করে যে দাওয়াহ কারী সর্বদা লক্ষ্য ও তা অর্জনের জন্য (গৃহীত) কাজগুলো সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন থাকবে এবং এ লক্ষ্য অর্জনে বিরামহীনভাবে চেষ্টা করে যাবে। কাজেই দাওয়াহকারী কখনোই কাজ ছাড়া শুধুমাত্র চিন্তায়ই সন্তুষ্ট থাকবেনা, নয়তো এটি একটি ইন্দ্রিয়-অবসাদগ্রস্থ কল্পনাপ্রসূত দর্শনে পরিনত হবে (فلسفة خيالية مخدرة)। তেমনি সে কোন লক্ষ্য ছাড়া শুধুমাত্র চিন্তা ও কাজেও সন্তুষ্ট থাকবেনা, নয়তো এটি তার জন্য একপ্রকার (ফলাফলবিহীন) বৃত্তাকার গতিতে (حركة لولبية) পর্যবসিত হবে যা চূড়ান্ত ভাবে ক্লান্তি ও হতাশা বয়ে আনে। বরং দাওয়াহকারীকে সার্বক্ষণিকভাবে, তার চিন্তার সাথে কাজের একটি যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে এবং এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে সে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অর্জনে কাজ করবে যা সম্পন্ন করার একটি ব্যবহারিক উপায় থাকবে এবং পরিশেষে বাস্তব রূপ লাভ করবে।

রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কায় ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব বহন করেছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন, মক্কার অধিবাসীরা ইসলামকে ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করবেনা, তখন তিনি মদীনায় ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি মদীনায় রাষ্ট্র স্থাপন করেছিলেন, এভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর বাণী পৌঁছিয়েছিলেন, এবং উম্মাহ কে তার অবর্তমানে ইসলাম প্রচারের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং ঠিক তার অনুসৃত পদ্ধতিতেই অগ্রসর হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। কাজেই মুসলিমদের খলীফার অবর্তমানে ইসলামের দাওয়াহ করার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রতি আহ্বান ও ইসলামী জীবন ধারা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটিও অন্তর্ভূক্ত হতে হবে, যে রাষ্ট্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিশ্ববাসীর কাছে প্রচারিত হবে। এভাবেই ইসলামী রাষ্ট্রের মাধ্যমে দাওয়াহ উম্মাহর মধ্যে ইসলামী জীবনধারা ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট একটি আহ্বানে পরিণত হবে এবং শুধুমাত্র ইসলামী বিশ্বে সীমাবদ্ধ স্থানীয় দাওয়াহর পরিবর্তে তা বিশ্বজনীন এক সার্বিক দাওয়াহতে পরিণত হবে।

ইসলামের প্রতি আহ্বানের মধ্যে পরিষ্কারভাবে বিদ্যমান মতাদর্শগুলোর সংশোধন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করণ থাকতে হবে, এবং একে অবশ্যই জনগণের সমস্যার সমাধান দিতে হবে। যাতে করে জীবনের সর্বস্তরে দাওয়াহ স্বীয় ঔজ্জ্বল্যে স্পষ্ট হয়ে উঠে। রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কার লোকদের নিকট নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করে শোনাতেন,

“ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।” (সুরা লাহাব: আয়াত ১)

“নিশ্চয়ই এগুলো এক সম্মানিত রাসূলের কথা, এগুলো কোন কবির কথা নয়, তোমরা খুব সামান্যই তা বিশ্বাস কর।” (সুরা হাক্কাহ: আয়াত ৪০-৪১)

“ধ্বংস হোক যারা ওজনে কম দেয়, যারা নিজেরা বুঝে নেয়ার সময় পরিপূর্ণ পরিমাণ অনুযায়ী বুঝে নেয় কিন্তু অন্যকে দেয়ার সময় কম দেয়।” (সুরা মুতাফফিফিন: আয়াত ১-৩)

“এবং যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়, এটিই সর্বোত্তম সাফল্য।” (সুরা আল বুরূজ: আয়াত ১১)

মদীনায় তিনি তিলাওয়াৎ করে শোনান,

“সালাত প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত আদায় কর।” (সুরা বাক্বারাহ: আয়াত ৪৩)

“তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড় হালকা বা ভারী (রণসম্ভার) অবস্থায়, এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের জান দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, এটিই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা তা বুঝতে।” (সুরা আত-তাওবা: আয়াত ৪১)

“হে ঈমানদারগণ যখন তোমরা নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণের লেনদেন কর তখন তা লিপিবদ্ধ কর, তোমাদের মধ্য থেকে কোন ন্যায় সঙ্গত লেখক তা লিপিবদ্ধ করবে।” (সুরা আল বাক্বারাহ: আয়াত ৮২)

“সম্পদ যেন শুধুমাত্র তোমাদের মধ্যে ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” (সুরা হাশর: আয়াত ৭)

“আগুনের অধিবাসীর ও জান্নাতের অধিবাসীরা সমান নয়, জান্নাতের অধিবাসীরাই সফলকাম।” (সুরা হাশর: আয়াত ২০)

এভাবেই ইসলামী দাওয়াহ’র মাধ্যমে মানুষের কাছে ইসলামী ব্যবস্থা নিয়ে যাওয়া উচিৎ যার মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিদিনের সমস্যার সমাধান করতে পারে। কারণ ইসলামী দাওয়াহ সফল হওয়ার পেছনের রহস্য হচ্ছে এটি খুবই স্পষ্ট এবং মানুষের কাছে তার জীবনের সমাধান দেয়ার সময় সমস্যাগুলো মানবীয় সমস্যা (human problem) হিসেবে দেখে, এবং এর মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যার আমূল পরিবর্তন ঘটায়।

দাওয়াহকারীদের পক্ষে দাওয়াহর দায়িত্ব পালন ও যথাযথভাবে তার কর্তব্য পালনের বিষয়টি অত্যন্ত দুরূহ যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মনের অন্তঃস্থলে পরিপূর্ণতা অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রোথিত হয়। তাদের অবিরাম সত্যের সন্ধান ও তাদের লব্ধ জ্ঞানকে ক্রমাগত নিরীক্ষার মাধ্যমে স্বীয় উপলব্ধিকে বিজাতীয় চিন্তাধারা থেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং এধরণের বিজাতীয় চিন্তাধারা অর্থের দিক থেকে আপাত গ্রহণ যোগ্য মনে করে তাতে সংশ্লিষ্ট হয়ে যাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। এটি তাদের চিন্তা ধারণা কে পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করবে। শুধুমাত্র চিন্তার বিশুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতা ইসলামের সাফল্য ও তা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

দাওয়াহকারীদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে এই বাধ্যতামূলক দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে। তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশায় এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। তাদের কাজের মাঝে কোন বৈষয়িক লাভ বা মানুষের প্রশংসা প্রত্যাশা করা উচিত নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতিত তাদের অন্য কিছুর পিছনেই ধাবিত হওয়া উচিৎ নয়।

Please note that this is not an official translation, rather a draft one. So, we would suggest not to spread this widely or publish this anywhere online for the time being.

Link for English translation of the book ‘System of Islam

For original meaning, please refer to the original Arabic book

Leave a Reply