এটি সর্বজনবিদিত যে, কুরআন একটি আরবি গ্রন্থ যা মুহাম্মদ (সা)-এর মাধ্যমে এসেছে। কাজেই এটি হয় আরবদের নিকট থেকে, অথবা মুহাম্মদ (সা)-এর নিকট থেকে কিংবা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার পক্ষ থেকে এসেছে। যেহেতু কুরআনের ভাষা ও রচনাশৈলী আরবি, কাজেই এ তিন উৎস ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে এর আগমন অসম্ভব।
কুরআন আরবদের নিকট থেকে এসেছে একথা বলা মিথ্যাচার। কারণ কুরআন তাদের প্রতি অনুরূপ রচনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
“বলুন, এরূপ দশটি সুরা নিয়ে আস।” (সুরা হুদ: আয়াত ১৩)
“বলুন, এরূপ একটি সুরা নিয়ে আস।” (সুরা ইউনুস: আয়াত ৩৮)
তারা অনুরূপ রচনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। সুতরাং এটি তাদের বক্তব্য নয়।
কুরআন মুহাম্মদ (সা)-এর রচনা – এরূপ দাবি করাও হবে মিথ্যাচার। কারণ তিনি যত উন্নত মেধারই অধিকারী হোন না কেন, তিনি ছিলেন একজন মানুষ ও একজন আরব। যেহেতু আরবরা এরূপ কিছু আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মুহাম্মদ (সা)-ও ছিলেন একজন আরব, তাই আরব হিসেবে একথা তার জন্যও প্রযোজ্য এবং তিনি এটি রচনা করেননি। উপরন্তু মুহাম্মদ (সা)-এর অসংখ্য সহিহ ও মুতাওয়াতির হাদিস রয়েছে, যাদের সত্যতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। এ হাদীসগুলোর সঙ্গে কুরআনের আয়াতগুলোর তুলনা করা হলে দেখা যায়, তাদের বর্ণনা শৈলীর মধ্যে কোনো মিল নেই। তিনি একই সময়ে কুরআনের আয়াতগুলো পড়েছেন ও তার হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের বর্ণনাশৈলীর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। মানুষ যদি কখনো তার কথাকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে, তবু তার ভাষা ও শৈলী একই রকম থাকে, কারণ এটি তারই একটি অংশ। যেহেতু কুরআনের আয়াত ও হাদীসগুলোর মধ্যে ভাষা ও শৈলীর মিল নেই, সেহেতু অবশ্যই কুরআন মুহাম্মদ (সা)-এর বক্তব্য নয়। এছাড়া আরবের ভাষা ও শৈলীতে সুদক্ষ কোনো আরবই দাবি করেননি যে কুরআন মুহাম্মদ (সা)-এর বক্তব্য কিংবা তার বক্তব্যের সঙ্গে এর কোনো মিল আছে। তারা শুধুমাত্র যে অভিযোগ করেছে তা হচ্ছে মুহাম্মদ (সা) এটি জাবর নামক এক খ্রিষ্টান যুবক থেকে নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তাদের এ অসার দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি বলেন:
“তারা বলে, এক ব্যক্তি তাকে এটি শিক্ষা দেয়। তারা যার কথা বলে তার ভাষা অনারবি অথচ এটি সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় রচিত।” (সুরা আন-নাহল:১০৩)
যেহেতু এথেকে প্রমাণিত হয় যে, কুরআন আরবদের রচনা নয় কিংবা মুহাম্মদ (সা)-এর রচনাও নয়, সেহেতু এটি অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার বাণী এবং যিনি এটি নিয়ে এসেছেন তার জন্য এটি একটি অলৌকিক নিদর্শন (মু’জিযা)।
যেহেতু মুহাম্মদ (সা) কুরআন এনেছেন এবং কুরআন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার বাণী এবং যেহেতু নবী-রাসুলগণ ছাড়া আর কেউ আল্লাহর শরিয়াহ (বিধান) আনতে পারেন না, কাজেই যুক্তিসঙ্গতভাবে মুহাম্মদ (সা) অবশ্যই একজন নবী ও রাসুল।
এটিই মুহাম্মদ (সা)-এর নবুয়্যতের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ।