(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি, মার্চ ০৪, ২০১২ এ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ প্রকাশিত বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি সংক্রান্ত একটি সংবাদের প্রতি প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষন – the underlined part is the comment and analysis)
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ‘সহযোগিতার’ অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতে মার্কিন বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্য থাকলেও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা।
তিনি রোববার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বাংলাদেশে কোনো ঘাঁটি থাকার প্রশ্নই আসে না।”
মজিনার কথা শুনে মনে হয় বাংলাদেশে ঘাটি করার কোনো ইচ্ছাই নেই আমেরিকার। অথচ এই আমেরিকাই মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের ঘাটি তৈরি করে রেখেছে। সৌদি বাদশাহদের দালালির সহায়তায় তারা পবিত্র ভুমি মক্কা-মদীনার খুব কাছেই তাদের ঘাটি করেছে যেখানে মার্কিন নারী-পূরুষ সেনা সদস্যরা জীবনকে মার্কিনী কায়দায় উপভোগ করতে পারে। শুধু এই নয়, এইসব ঘাটি থেকে তারা অন্য মুসলিম অঞ্চলে আগ্রাসন চালায় এবং নিরীহ মুসলিম নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ অগনিত সাধারন নাগরিকদের হত্যা করে। সুতরাং মজিনার বড়গলা করে বলার কিছু নেই।
তাদের ইতিহাস বলে যে তারা সুযোগ পেলেই এ দেশে তাদের পুর্নাঙ্গ ঘাটি তৈরি করবে। এবং তারই রিহার্সেল চালাচ্ছে তারা বর্তমানে দালাল হাসিনা সরকারের মাধ্যমে। আমরা দেখেছি কিভাবে আমেরিকা সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যুদ্ধজাহাজ আসা থেকে নিয়ে পরবর্তীতে টাইগার শার্ক ১-৪ দিয়ে এবং এখন তথাকথিত ৭ সদস্য বিশিষ্ট সেনা সদস্যদের বিশেষ ট্রেনিং টিম পাঠিয়ে তাদের সেই অভিষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অ্যাডমিরাল রবার্ট উইলার্ড বৃহস্পতিবার কংগ্রেস কমিটিকে জানান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সহযোগিতা দিতে’ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্পেশাল ফোর্সের’ সদস্যরা।
সহযোগীতা?? মার্কিনিদের সহযোগিতায় (?) পৃথিবী যেন আজ ফুলে-ফলে সজ্জিত। বরং পৃথিবী আজ রক্তে রঞ্জিত তাদের সামরিক হস্তক্ষেপে। এই সেই মার্কিন বাহিনী যারা এই কয়েকদিন আগেও আফগানিস্তানে আমাদের পবিত্র কুরআনকে অবমাননা করেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآَيَاتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। [আলে ইমরান: ১১৮]
এই সংবাদ প্রকাশের পর দেশের বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দলও রয়েছে।
বামপন্থীদের আদর্শিক বিচ্যুতি এখানে খুবই স্পষ্ট। তারা সরকারের কাছে জবাব চায়। কোন সরকারের কাছে? তারা নিজেরাই তো অনেকে সরকারের অংশ। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা কোথায় আজ তাদের। তাদের জবাব দরকার হয় কেন? তারা জানে না মার্কিনি পরিকল্পনা? সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন মুখীতা কোথায় তাদের আজ? কেন দেখা যায় না তাদের আজ রাজপথে এই নব্য ঔপনিবেশকতাবাদের বিরুদ্ধে?
এ বিষয়ে ঢাকায় ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূত মজিনা বলেন, “তারা প্রশিক্ষণ দিতে এসেছেন এবং চলেও যাবেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি।”
কয়েকটি সংবাদপত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং কল্পিত।
যৌথ কর্মসূচির অংশ হিসেবেই বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশে আসা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সুদীর্ঘকালের এবং এই বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়।
এই প্রসঙ্গে মজিনা বলেন, বাংলাদেশে কিছু মানুষ ‘সোনালী ভবিষ্যৎ’ গড়ার স্বপ্ন দেখার বিরোধী।
হ্যা। ঠিকই বলেছে মজিনা। এবং সেই কিছু মানুষের মধ্যে মজিনা তার মার্কিনি দোসররা রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, তারা (কাফেররা) চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না [নিসা:৮৯]
إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ
তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনরূপে তোমরা ও কাফের হয়ে যাও। [মুমতাহিনা:২]
“আসলে তারা বাংলাদেশে শান্তি, সৌহার্দ্য, গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে চায়। আমরা তাদের সন্ত্রাসী বলে থাকি। এই সব সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের শত্র“, আমেরিকার এবং বিশ্বের প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশের শত্র“। একসঙ্গে মিলে আমরা এইসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়তে পারি এবং আমরা অবশ্যই তা করব,” বলেন তিনি।
সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের নামে কী পরিমান শান্তি ও সৌহার্দ বজায় রেখেছে মার্কিনিরা তা সবার কাছেই পরিষ্কার। গণতন্ত্রের নামে সারা বিশ্বে চলছে গণহত্যা। গণতন্ত্রের সাথে গণহত্যা – একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। এই হচ্ছে মানবরচিত আদর্শের পরিনতি। এবং একসঙ্গে মিলে অবশ্যই আমরা সন্ত্রাসীদের রুখব। অবশ্যই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকাকে রুখতে আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।
সকালে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় রাষ্ট্রদূতের। বাংলাদেশ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে বিগত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৯০ লাখ ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
মজিনা বলেন, সোয়াত বাহিনীর ৪৮ সদস্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। আরো ৪৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ فَسَيُنْفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ
নিঃসন্দেহে যারা কুফরি করেছে, তারা ব্যয় করে নিজেদের ধন-সম্পদ, যাতে করে বাধাদান করতে পারে আল্লাহর পথে। বস্তুতঃ এখন তারা আরো ব্যয় করবে। তারপর তাই তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে এবং শেষ পর্যন্ত তারা হেরে যাবে। আর যারা কাফের তাদেরকে দোযখের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। [আনফাল: ৩৬]
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রয়োজন এবং সরকারও এই ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করছে।
এসব লোকদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ
হে ঈমানদারগণ!, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। [মুমতাহিনা:১]